উৎসবের মাসে দিল্লির বাঙালিদের কেনাকাটা, খাওয়াদাওয়া, বেড়াতে যাওয়া, কলকাতার পূজাবার্ষিকী কেনার মধ্যেই এত দিন সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু এ বছর দিল্লির বাঙালিদের শারদীয় উৎসবের পরিসর অনেকটাই প্রসারিত হতে দেখা যাচ্ছে। রাজধানীতে গোটা বছর বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিচর্চা ক্রমশ বেড়ে চলেছে।
চিত্তরঞ্জন পার্ক দিল্লির বাঙালিদের প্রাণকেন্দ্র। বাংলা সাহিত্যচর্চার প্রসারের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এসেছে। ১৯৭১ সালে তৈরি হয় চিত্তরঞ্জন পার্ক বঙ্গীয় সমাজ ও পাশাপাশি পাঠাগার। এই মুহূর্তে সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সাড়া জাগানো কাজের জন্য পরিচিত এই প্রতিষ্ঠান। চিত্তরঞ্জন পার্ক বঙ্গীয় সমাজের সাধারণ সম্পাদক শ্রীবাস ভট্টাচার্য বললেন, “এই মুহূর্তে বিভিন্ন রকম সাহিত্যকেন্দ্রিক কাজ আমরা নিয়মিত করছি। যা আগে এত বিস্তারিত ভাবে হত না। স্থানীয় কবিদের জন্য নিয়মিত কবিতার আসর, সাহিত্যচর্চার শনিবারের আসর, সাহিত্যিকদের স্মরণসভা, এ ছাড়াও প্রত্যেক মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বাংলা সিনেমা দেখানো হয়।”
এই মুহূর্তে চিত্তরঞ্জন পার্কের বাঙালি বাড়ির সংখ্যা আনুমানিক তিন হাজার, তাতে বসবাস করেন প্রায় ১৫ হাজার বাঙালি। শুধু চিত্তরঞ্জন পার্কে বাংলা পাঠাগারের সংখ্যা প্রায় ৭। পাঠাগারগুলি ঘিরে সাহিত্য ও সংস্কৃতিচর্চা গড়ে উঠেছে। বঙ্গীয় সমাজের আর এক কর্ণধার গোপা বসু বললেন, “সাহিত্যের ক্ষেত্রে দিল্লির স্থান এখন অনেক ওপরে। আসলে স্থানটা বিষয় নয়, বিষয় হল মানুষগুলো। একটা সাংস্কৃতিক জোয়ার এসেছে, যার জন্য বিভিন্ন পত্রপত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের শাস্ত্রীয় নৃত্য ও সঙ্গীতচর্চার কেন্দ্র এই প্রতিষ্ঠান।” সম্পাদক শ্রীবাস ভট্টাচার্য বেশ ক্ষোভের সঙ্গে বললেন, “পাঠাগারটি যে ভাবে সাজানো এবং বেশ কিছু দুর্লভ বই এখানে রাখা আছে সে অনুপাতে সদস্য সংখ্যা এত বেশি নয়। অনেকেই বলেন, দ্বিতীয় তলায় পাঠাগারটি থাকার ফলে বহু বয়স্ক মানুষ আসতে পারেন না।”
শারদীয় উৎসবে এ বার দিল্লির বাঙালিদের কাছে শুধু কলকাতার পূজাবার্ষিকীর আকর্ষণ নয়, স্থানীয় বাঙালিরা যে পত্রপত্রিকা বের করেন তাদের উৎসব সংখ্যাগুলি আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্র হয়ে উঠতে চলেছে। যেমন, চিত্তরঞ্জন পার্ক বঙ্গীয় সমাজের ‘নগরে প্রান্তরে’ পত্রিকা, বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশন দিগঙ্গন পত্রিকায় উৎসব সংখ্যা, সফদরজং এনক্লেভ থেকে মাতৃমন্দির সংবাদ, আদিত্য সেনের উন্মুক্ত ঊচ্ছ্বাস এ বার পুজোর বাড়তি আকর্ষণ।