গোপনীয়তার সীমা অস্পষ্ট: আদালত

প্রধান বিচারপতি জে এস খেহর এই সূত্রে বলেন, ‘‘স্বাধীনতা এবং গোপনীয়তার মধ্যবর্তী জায়গায় রয়েছে মর্যাদার প্রশ্ন। কোনও তথ্যের প্রকাশ যদি কারও মর্যাদায় ঘা দেয়, তখনই সেটা গোপনীয়তার অধিকারকে খর্ব করে।’’

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৭ ০৪:১১
Share:

ফাইল চিত্র।

বৃহৎ পরিধি বনাম স্পষ্ট সীমারেখা, গোপনীয়তার অধিকার নিয়ে সওয়াল দ্বিতীয় দিনে অতিবাহিত হল মূলত এই প্রশ্নকে ঘিরেই।

Advertisement

সু্প্রিম কোর্টে নয় সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চের সামনে আজ অরবিন্দ দাতার, আনন্দ গ্রোভার, সজন পুবাইয়া, মীনাক্ষি অরোরার মতো আইনজীবীরা গোপনীয়তার অধিকারের পক্ষে সওয়াল করেন। দাতার বলেন, গোপনীয়তার অধিকার সংবিধানের একটিমাত্র ধারার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। একাধারে সাম্যের অধিকার, মত প্রকাশের অধিকার এবং জীবনের অধিকারের মধ্যে নিহিত রয়েছে এই গোপনীয়তার অধিকার। এই সূত্রে বৃ়হৎ পরিধির কথা তাঁর বক্তব্যেই উঠে আসে। এর পরেই বিচারপতি চেলামেশ্বর মন্তব্য করেন, ‘‘গোপনীয়তার অধিকারের পরিধি বৃহৎ হতে পারে, কিন্তু স্পষ্ট সীমারেখা নেই।’’

প্রধান বিচারপতি জে এস খেহর এই সূত্রে বলেন, ‘‘স্বাধীনতা এবং গোপনীয়তার মধ্যবর্তী জায়গায় রয়েছে মর্যাদার প্রশ্ন। কোনও তথ্যের প্রকাশ যদি কারও মর্যাদায় ঘা দেয়, তখনই সেটা গোপনীয়তার অধিকারকে খর্ব করে।’’

Advertisement

গোপনীয়তার স্বার্থে তবে কোন তথ্য অপ্রকাশের অধিকার দেওয়া চলে? উঠল প্রশ্ন। একক মা কি বলতে পারেন, তিনি তাঁর সন্তানের বাবার নাম জানাবেন না?
নাগরিক কি বলতে পারে সে তার বাবা-মায়ের পরিচয় গোপন রাখবে? প্রশ্ন করলেন বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়। বললেন, এ দেশে ইন্টারনেট উপভোক্তাদের ৯৯ শতাংশই নিজেদের তথ্য প্রকাশের ব্যাপারে সচেতন নন। তাঁর কথায়, ‘‘আঙুল দিয়ে আই-প্যাড খোলার সময়ে তো আঙুলের ছাপ প্রকাশ হয়েই যাচ্ছে। ইন্টারনেটে এক বার মুম্বই থেকে দিল্লি যাওয়ার ব্যাপারে খোঁজ নিলে পরের দিন একশোটা বিজ্ঞাপন আসতে থাকে। ব্যক্তিগত জীবন যদি এ ভাবে বেসরকারি সংস্থার কাছে উন্মুক্ত হয়েই যায়, তবে সরকারকে আটকানো কেন?’’

উত্তরে আইনজীবী পুবাইয়া যুক্তি দেন, বেসরকারি সংস্থা নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য আর কাউকে দিলে বা অপব্যবহার করলে তার বিরুদ্ধে মামলা করা যায়। সরকারের উপর এই নিয়ন্ত্রণ কোথায়? ৯৯ শতাংশ নাগরিক তাঁদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা নিয়ে চিন্তিত না-ই হতে পারেন। তা বলে কারও গোপনীয়তার অধিকার কেড়ে নেওয়া যায় না।

পুবায়া আরও প্রশ্ন তোলেন, আধার-তথ্য সংগ্রহ করার আগে নাগরিকের সম্মতি নেওয়া হয়েছিল কি? তাকে কি জানানো হয়েছিল কী ভাবে এই তথ্য কাজে লাগানো হবে এবং কী ভাবে তা সুরক্ষিত থাকবে?

বিচারপতি চন্দ্রচূড় নিজেও উল্লেখ করেন, সরকার তথ্যপঞ্জি কী ভাবে কোন কাজে লাগাচ্ছে, আইন বৈধতা তার উপরে নির্ভর করবে। তাঁর মতে, অনেক দেশে তথ্যপঞ্জির ভিত্তিতে সম্ভাব্য অপরাধীর তালিকা তৈরি হচ্ছে। সেটা মানা যায় না। কিন্তু সমাজকল্যাণ প্রকল্পের সুবিধা কারা পাবে, তা ঠিক করতে যদি ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে আর্থ-সামাজিক সুমারি হয়, তাতে দোষ নেই।

বৃহস্পতিবার গোপনীয়তার অধিকারের পক্ষে আইনজীবীদের সওয়াল শেষ হয়ে গিয়েছে। আগামী মঙ্গলবার কেন্দ্রের তরফে অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল সওয়াল শুরু করবেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement