ভাঙা পথের কাদা-ধুলায় পূর্তমন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্যর বিজয় মিছেল। সঙ্গে সদ্য নির্বাচিত বিধায়ক কৃষ্ণেন্দু পাল, আমিনুল হক লস্কর, কিশোর নাথ প্রমুখ। শনিবার শিলচরে স্বপণ রায়ের তোলা ছবি
একশো দিনের মধ্যে বরাকের রাস্তাঘাটের চেহারা বদলে দেবেন তিনি। পূর্তমন্ত্রী পদে শপথ নিয়ে প্রথম নিজের এলাকা, বরাকে ফিরে পরিমল শুক্লবৈদ্য এই ঘোষণাই করলেন। এ স্রেফ রাজনৈতিক ঘোষণার জন্যই যে ঘোষণা নয়, তা স্পষ্ট পরিমলবাবুর শরীরি-ভাষায়।
তিন বার বিরোধী বিধায়ক থাকার সময় সড়কপথেই শিলচর-গুয়াহাটি যাতায়াত করেছেন পূর্তমন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য। কয়েকবার গিয়েছেন রেলেও। গত পাঁচ বছর বিধায়ক না থাকলেও দলীয় প্রয়োজনে বহুবার এখানে-ওখানে যেতে হয়েছে তাঁকে। সড়কপথই ছিল তাঁর যাতায়াতের মাধ্যম। এ ছাড়া, আইরংমারার বাড়ি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে দিয়ে নিত্য শিলচর আসতে কম দুর্ভোগ পোহাতে হয়নি পরিমলবাবুকে। শহরে এসেও নিস্তার ছিল না, সর্বত্র
বেহাল রাস্তাঘাট।
পূর্তমন্ত্রী হয়ে আজ বরাকে এলেন পরিমলবাবু। এলেন সেই সড়কপথেই। সঙ্গে এখানকার সব ক’জন বিজেপি বিধায়ক। কাছাড়ের সোনাই, কাটিগড়া, বড়খলা ও উধারবন্দের সঙ্গে রয়েছেন করিমগঞ্জ জেলার রাতাবাড়ি এবং পাথারকান্দির বিধায়করাও। শুধু প্রোটোকলের দরুন মন্ত্রীর সফরসঙ্গী হতে পারেননি বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার দিলীপকুমার পাল। রয়েছেন বিভাগীয় উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা।
মেঘালয়ের সীমানা পেরিয়ে বরাকে ঢুকতেই তাঁকে স্বাগত জানান বিজেপির জেলা নেতৃত্ব। দিগরখাল, গুমড়া, কালাইনেও সংবর্ধনা জানানো হয় তাঁকে। স্থানে স্থানে বিভিন্ন মনীষীর মূর্তিতে মাল্যদান করেন পরিমলবাবু। কালাইনে বিবেকানন্দ মূর্তির সামনে সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে পূর্তমন্ত্রীকে বরণ করেন স্থানীয় স্কুলছাত্ররা।
সব জায়গাতেই সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখতে হয়েছে পরিমলবাবু এবং কাটিগড়ার নতুন বিধায়ক অমরচাঁদ জৈনকে। পরিমলবাবু জানান, পূর্ত বিভাগের উচ্চপদস্থ অফিসারদের সঙ্গে নিয়ে এসেছি। তাঁরা স্বচক্ষে দেখে যান, কী অবস্থায় রয়েছে বরাকের রাস্তাঘাট। দু’দিন তাঁদের উপত্যকার সমস্ত সড়ক পরিদর্শন করতে বলা হয়েছে। এরপর সোমবার সবাইকে নিয়ে বৈঠকে বসবেন পরিমলবাবু। স্থানীয় অফিসারদেরও ডাকা হবে। থাকবেন ঠিকাদাররাও। কোথায় সমস্যা হচ্ছে, তা আগে বের করতে হবে। অর্থ, না আমলা, নাকি ঠিকাদাররা সমস্যার মূলে—সেটা না জেনে শুধু প্রকল্প তৈরি করে, আর অর্থ মঞ্জুরিতে কোনও লাভ হবে না বলেই মনে করেন পরিমলবাবু। তাঁর কথায়, একশো দিনের মধ্যে পরিবর্তন দেখাতে হবে। তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে কথা দিয়েছেন। বরাকবাসীর কাছ থেকেও আজ একশো দিনের সময় চেয়ে নেন তিনি। আর সে কথা মাথায় রেখেই
দায়িত্ব পালন করতে হবে অফিসারদের। তাঁর আশা, ‘‘ওই সময়সীমার মধ্যে সড়ক সমস্যার সমাধানে একটা সুরাহা হবে।’’
আজ পূর্তমন্ত্রীর শিলচর আগমন উপলক্ষ্যে শিলচর শহর ও তাঁর আইরংমারার বাড়িতে যাওয়ার জন্য গত দু’দিন থেকে রাস্তায় রাস্তায় গর্ত বোজানো শুরু হয়েছে। মাটি-পাথরের জোড়াতালি শহরের এখানে-ওখানে। পরিমলবাবু যে জোড়াতালিতে বিশ্বাসী নন, খোলামেলা ভাবে শুনিয়ে দিয়েছেন সে কথাও। তিনি বলেন, ‘‘মানুষকে এতদিনের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে হবে।’’
তাঁর সফর উপলক্ষে বিজেপির পক্ষ থেকে শিলচর শহর গেরুয়া পতাকা আর বড় বড় তোরণে সাজিয়ে তোলা হয়। পরিমলবাবুর প্রচুর পূর্ণাবয়ব কাটআউট দেখা যায় শহরের বিভিন্ন মোড়ে। দলীয় কার্যালয়ে ঢোকার মুখে উপাধ্যক্ষ দিলীপকুমার পালেরও কাটআউট লাগানো হয়েছে। পরিমলবাবু শিলচরে এসে প্রথমেই রেলস্টেশন চত্বরে থাকা শহিদস্মারকে শ্রদ্ধা জানান। পরে যান গাঁধীবাগে ভাষাশহিদ স্মৃতিসৌধে। শহর ঘুরে মনীষীদের মূর্তিতেও মালা দেন তিনি। সকাল থেকেই জেলা গ্রন্থাগার চত্বরে তাঁর অপেক্ষায় ভিড় করছিলেন কর্মী-সমর্থকরা। জেতার পর বিধায়কদের কেউ কেউ নিজের এলাকায় বিজয় মিছিল করলেও জেলাস্তরে কোনও কর্মসূচি পালিত হয়নি। পরিমলবাবু সব বিধায়ককে সঙ্গে নিয়ে আসায় আজকের দিনটিকেই বিজয় মিছিলের জন্য বেছে নয় জেলা বিজেপি। রং-আবির, বাজি-পটকা, আর স্লোগানে স্লোগানে স্বাগত জানানো হয় বিজেপির নবনির্বাচিত বিধায়কদের। মূল আকর্ষণ অবশ্যই পূর্ত, মৎস্য ও আবগারি মন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য। তিনি দায়িত্বপালনে এলাকাবাসীর সাহায্য, সহযোগিতা, পরামর্শ চান।
মিছিলের ভিতরে-বাইরে তাঁকে নিয়ে একই আলোচনা, নিজেকে প্রমাণের সুযোগ মিলেছে পরিমল শুক্লবৈদ্যর। পূর্ত দফতর দিয়েই তিনি আজীবন বরাকবাসীর মনে স্থান করে নিতে পারেন। আর এই জায়গায় ছাপ রাখতে ব্যর্থ বলে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে তাঁর ভাবমূর্তি, সহজসরল জীবনযাত্রাও।