এক দিকে উন্নয়নের প্রশ্নে বিতর্কের কথা হচ্ছে। তার পাশাপাশিই আবার রাস্তায় নেমে কেরলে সেয়ানে সেয়ানে টক্কর হচ্ছে বাম ও বিজেপি-র!
চলতি মাসেই ১৫ দিনের ‘জনরক্ষা যাত্রা’য় নেমেছিল বিজেপি। দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ হাজির ছিলেন সেই যাত্রার সূচনা ও শেষে। যোগী আদিত্যনাথ, মনোহর পর্রীকরের মতো একাধিক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং এক ঝাঁক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে ওই যাত্রায় সামিল করেছিল বিজেপি। গেরুয়া শিবিরের সেই যাত্রা শেষ হতেই রাজ্য জুড়ে পাল্টা ‘জনজাগ্রতা যাত্রা’ শুরু করেছে বামেদের ফ্রন্ট এল়ডিএফ। আবার এই পদযাত্রা, পাল্টা পদযাত্রার মধ্যেই আগামী ১১ নভেম্বর ‘কেরল চলো’র ডাক দিয়েছে সঙ্ঘ পরিবারের প্রভাবিত ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি)। বাংলা-সহ বিভিন্ন রাজ্য থেকে ছাত্রদের কেরলে ওই কর্মসূচিতে নিয়ে যাবে তারা।
এবিভিপি-র লক্ষ্য, ১১ নভেম্বর দক্ষিণী ওই রাজ্যে ৫০ হাজার ছাত্রের সমাবেশ ঘটানো! প্রাথমিক ভাবে ঠিক করা হয়েছে, বাংলা থেকে অন্তত ৫০০ এবিভিপি কর্মীকে নিয়ে যাওয়া হবে পিনারাই বিজয়নের রাজ্যে। কেরল বিজেপি-র রাজ্য নেতা কে সুরেন্দ্রনের যুক্তি, ঘোষিত লক্ষ্যের অর্ধেক ছাত্র নিয়েও এবিভিপি সমাবেশ করতে পারলে তা চোখে পড়ার মতোই ঘটনা হবে।
বিজেপি এবং আরএসএসের এই ধারাবাহিক আক্রমণের মোকাবিলায় বামেরা আপাতত জোর দিচ্ছে ‘জনজাগ্রতা যাত্রা’য়। সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য প্রকাশ কারাট কলকাতায় বলেছেন, ‘‘গত ৪০ বছর ধরেই কেরলে আরএসএস বামেদের আক্রমণ করছে। কারণ, সঙ্ঘের পরিকল্পনা রুখে দিতে লড়াই করছে বামপন্থীরাই। বিজেপি ওখানে ‘জনরক্ষা যাত্রা’ করার পরে মানুষের কাছে আমাদের তাদের আসল চেহারা তুলে ধরতে আমরাও ‘জনজাগ্রতা যাত্রা’ শুরু করেছি!’’ বিভিন্ন জেলায় এলডিএফের নেতা-মন্ত্রীরা ওই যাত্রায় সামিল হয়ে পথে নামছেন। বিজেপি-আরএসএসের ‘সাম্প্রদায়িক’ বক্তব্যের জবাব দেওয়া ছাড়াও বাম সরকারের নানা উন্নয়নমূলক কাজের খতিয়ান তুলে ধরা হচ্ছে ওই যাত্রায়।
উন্নয়নের প্রশ্নে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের মনোভাব যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলেও অভিযোগ তুলছে বামেরা। রাজ্যের একাধিক প্রকল্পের জন্য কেন্দ্রের কাছ থেকে সময়মতো টাকা মিলছে না বলে বিজয়নদের অভিযোগ। একাধিক বার এই নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠিও দিয়েছেন তিনি। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির কথায়, ‘‘রাজ্যকে টাকা দেবে কি দেবে না, এটা কেন্দ্রীয় সরকারের খেয়াল বা মর্জির উপরে নির্ভর করে না! এটা সাংবিধানিক দায়বদ্ধতার প্রশ্ন।’’
এই আবহে উন্নয়ন নিয়ে বাম-বিজেপি বিতর্কে বসা নিয়েও কিছুটা সংশয় তৈরি হয়েছে। প্রথমে মুখ্যমন্ত্রীর বিতর্কের প্রস্তাব মেনে নেওয়ার পরেও কেরল বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি কে রাজাশেখরন মন্তব্য করেছেন, মনে হচ্ছে বিজয়ন পিছনে ছোরা লুকিয়ে রেখে মুখে আলোচনার কথা বলছেন! যা শুনে বিজেপি-র মনোভাব নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন তুলছে বামেরাও।