গোপনে রাজ্য ছাড়লেন বিধায়করা।
কর্নাটকে থাকলেই বিপদ। বিজেপি ঘোড়া কেনাবেচা করতে পারে, এমন আশঙ্কায় নির্বাচিতবিধায়কদের অবিজেপি রাজ্য তেলঙ্গানায় সরিয়ে নিয়ে গেল জেডি(এস) ও কংগ্রেস। এ নিয়ে রাতভর রোমাঞ্চ, গোপনতা, রহস্য যেন বলিউডের সাসপেন্স থ্রিলারকেও হার মানিয়ে দিল। কংগ্রেস ও জেডি(এস)-এর দাবি, তাঁরা ১১৬ জন বিধায়ককে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু তাঁদের মধ্যে কোন দলের কত জন, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
গত বুধবার থেকেই কংগ্রেস বিধায়কদের রাখা হয়েছিল বেঙ্গালুরু থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে বিদাদি এলাকার ইগলটন রিসর্টে। জেডি(এস) তাদের বিধায়কদের রেখেছিল সাংগ্রি লা হোটেলে। কিন্তু বৃহস্পতিবার শপথ নেওয়ার পরেই ইয়েদুরাপ্পা ওই দুই হোটেলের নিরাপত্তা কমিয়ে দিতেই সিঁদুরে মেঘ দেখতে পায় বিরোধী শিবির। তত ক্ষণে উধাও হয়ে গিয়েছে হোটেলের বাইরে থাকা চেকপোস্ট ও ব্যারিকেড। ঠিক করা হয়,বিধায়কদের দ্রুত সরিয়ে ফেলতে হবে নিরাপদ জায়গায়।তাঁদের কোথায় নিয়ে যাওয়া হবে, এ প্রশ্নে আলোচনা করে নেয় দুই দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। বিজেপির দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে কংগ্রেস বলে, মোদীর নির্দেশেই দল ভাঙিয়ে সরকার গঠনের চেষ্টা করছে বিজেপি। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, ম্যাজিক ফিগারের থেকে আটটি আসন দূরে থাকা বিজেপিকে যদি সরকার গড়তেই হয়, তবে খেলতেই হবে দল ভাঙানোর খেলা।
উল্টোদিকে কংগ্রেস ও জেডি(এস)-এর সামনে একটাই পথ খোলা। যে করেই হোক বিজেপির খপ্পর থেকে নিজেদের বিধায়কদের দূরে রাখা। তাঁদের মোবাইলে বিশেষ ‘অ্যাপ’ ব্যবহার করতে বলা হয়েছে, যাতে বাইরে থেকে আসা ‘ফোন কল’ রেকর্ড করা যায়। কিন্তু এতেও কাজ হবে না বুঝে, চার্টার্ড বিমানে করে বিধায়কদের রাজ্যের বাইরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু রাত সাড়ে এগারোটা বেজে যাওয়ার পরেও সেই বিমান ছাড়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি।বাধ্য হয়ে তিন-তিনটি বিলাসবহুল বাসে ওঠানো হয় কমবেশি ১১৬ জন বিধায়ককে। কিন্তু গন্তব্য কোথায়? এ নিয়ে সংবাদ মধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়ানো হয় পরিকল্পিত ভাবে। এক বার বলা হয়েছিল, কেরল। কিছু ক্ষণের মধ্যেই আবার জায়গার নাম বদলে গিয়ে দাঁড়াল- পঞ্জাব। বিজেপির চোখে ধুলো দেওয়ার জন্য কংগ্রেসের দুই বিধায়ক প্রস্তাব দেন, বাস চালাবেন তাঁরা নিজেরাই। কিন্তু সে প্রস্তাব গৃহীত হয়নি। নিয়ে আসা হয় ‘বিশ্বস্ত’ বাস চালকদের। এর পর বাস ছুটল অন্য দিকে।পঞ্জাব নয়, কেরল নয়। অন্ধ্র হয়ে সোজা তেলঙ্গানার হায়দরাবাদের দিকে। এমনিতেই তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রশেখর রাওকট্টর বিজেপি বিরোধী বলে পরিচিত। জেডি(এস) এবং কংগ্রেসের বিধায়কদের তিনি প্রয়োজনীয় ‘নিরাপত্তা’ দিতে রাজি হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুন: এ সব কাণ্ড তো পাকিস্তানে হয়! ময়দানে সরব রাহুল
আরও পড়ুন: মধ্যপ্রদেশ ভোটে নজর, যাচ্ছেন অখিলেশ
জানা গিয়েছে, বেঙ্গালুরু থেকে রওনা দেওয়ার পর প্রথমবার বাসটি থামে ভোর পাঁচটা নাগাদ, হায়দরাবাদ থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে। রাস্তায় নেমে বিধায়করা প্রাতঃরাশ সারেন। ফের ছুটল বাস। শেষ পর্যন্ত একটি বাস এসে দাঁড়ায় হায়দরাবাদের ‘তারকা’ হোটেল হায়াত রিজেন্সিতে। অন্য দু’টি বাস যায় তাজ কৃষ্ণা হোটেলে। সংবাদ মাধ্যমকে হোটেলের আশেপাশে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। তবে কংগ্রেসের দাবি, হায়দরাবাদে তাঁদের বিধায়করা এখন সুরক্ষিত।