সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ।
আইনের স্নাতকোত্তরে প্রথম হয়েও প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের হাত থেকে স্বর্ণপদক নিলেন না সুরভি কারওয়া। প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে এক মহিলা কর্মীকে যৌন হেনস্থার অভিযোগ উঠেছিল। তার প্রতিবাদ এবং ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টের ভূমিকার প্রতিবাদে কারওয়ার এই সিদ্ধান্তের পরই তোলপাড় আইনজীবী ও বিচারপতি মহলে। বছর পাঁচেক আগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গীতশ্রী সরকারও প্রায় একই ভাবে পুরস্কার নিতে অস্বীকার করেছিলেন। সেই ঘটনার ছায়া এ বার দিল্লির জাতীয় আইন বিশ্ববিদ্যালয়।
শনিবার জাতীয় আইন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন উৎসবে স্বর্ণপদকের দেওয়ার জন্য কারওয়ার নাম যখন ঘোষণা করা হল, দেখা গেল তিনি অনুপস্থিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রার অধ্যাপক জিএস বাজপাই ফের ঘোষণা করলেন, দুর্ভাগ্যবশত উনি (কারওয়া) এখানে নেই। ওঁকে আমরা অনুপস্থিত হিসেবে (ইন অ্যাবসেন্সিয়া) মেডেল প্রদান করব।’’
কিন্তু এখানেই থেমে থাকেনি বিতর্ক। অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ থেকে দিল্লি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিএন পাটিল, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল, উপ-মুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়া থেকে শুরু করে বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং ছাত্র-ছাত্রী ও অতিথিদের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়। পরে কারওয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করার পর জানা যায় আসল ঘটনা।
কারওয়া জানতেন তিনি সেরার পদক পাবেন। তিনি জানিয়েছেন, যখন তিনি জানতে পারেন সেই পদক নিতে হবে প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের হাত থেকে, তখনই তিনি ভাবতে শুরু করেন। শেষ পর্যন্ত তিনি অনুষ্ঠানে গরহাজির থাকার সিদ্ধান্ত নেন। কারওয়া বলেন, ‘‘ক্লাস থেকে আমি জানার পরই গত কয়েক সপ্তাহ ধরে নৈতিক প্রশ্নের মুখে পড়ি যে, প্রধান বিচারপতি গগৈয়ের হাত থেকে আমি পুরস্কার নেব কিনা। তিনি যে প্রতিষ্ঠানের (সুপ্রিম কোর্ট) প্রধান, সেই প্রতিষ্ঠানই তাঁর বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগের তদন্তে ব্যর্থ।’’
কারওয়া বলেন, ‘‘আমি নিজের কাছেই উত্তর খুঁজছিলাম, সংবিধানের মর্যাদা রক্ষা করতে আইনজীবীদের কী ভূমিকা হওয়া উচিত। প্রধান বিচারপতিও তাঁর বক্তব্যে সেটাই বলেছেন।’’ গগৈ-এর বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগের প্রসঙ্গ টেনে কারওয়ার বক্তব্য, ওই বিষয়টিই তাঁকে পদক নেওয়া থেকে বিরত রাখে।’’
আরও পড়ুন: ছন্দে ফেরানোর চেষ্টা, উপত্যকায় খুলল সরকারি অফিস, স্কুল খুললেও হাজিরা নগণ্য
অর্থাৎ কারওয়ার আপত্তি শুধু প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ-এর হাত থেকে নেওয়ার ক্ষেত্রে, স্বর্ণপদকে গ্রহণে নয়। তাতে বরং তিনি আপ্লুত। বলেছেন, ‘‘স্বর্ণপদক পাওয়াটা সত্যিই সম্মানের। আমার মা-বাবা এবং শিক্ষকরা এবং যাঁরা আমাকে এই প্রচেষ্টায় সাহায্য করেছেন, তাঁদের সবার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। কোন ব্যক্তির কাছ থেকে পদক নিচ্ছি, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।’’
পদাধিকার বলে দিল্লি আইন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ভিজিটর’ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি। তাই যখন যিনি ওই পদে থাকেন, তিনিই প্রধান অতিখি হিসেবে সমাবর্তনে হাজির থাকেন এবং কৃতী পডু়য়াদের পদক দেন। গত বছর সমাবর্তনে যেমন ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র। কিন্তু এ বছর গগৈ-এর হাত থেকেকারওয়া স্বর্ণপদক নিতে অস্বীকার করায় অস্বস্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন: কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে কিসের কথা! কথা হলে হবে ‘পিওকে’ নিয়ে, বললেন রাজনাথ
এ বছরেরএপ্রিলেই প্রধান বিচারপতি গগৈ-এর বিরুদ্ধে এক কর্মীকে যৌন হেনস্থার অভিযোগ ওঠে। ওই মহিলা কর্মী ২৯ পাতার একটি এফিডেভিট সুপ্রিম কোর্টের সমস্ত বিচারপতিকে জমা দেন। তাঁর অভিযোগ ছিল, সুপ্রিম কোর্টে কর্মরত থাকার সময় প্রধান বিচারপতি তাঁকে যৌন হেনস্থা করেন। কিন্তু ওই মহিলা কর্মী প্রতিবাদ করায় তাঁকে প্রথমে বদলি এবং পরে চাকরি থেকেই বরখাস্ত করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। সুপ্রিম কোর্টেরই বিচারপতিদের নিয়ে গঠিত হয় তদন্ত কমিটি। মহিলার অভিযোগের সারবত্তা নেই বলে জানিয়ে দেয় ওই কমিটি।
২০১৪ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে মঞ্চে উঠেও পদক নিলেন না গীতশ্রী সরকার। —ফাইল চিত্র
পাঁচ বছর আগে প্রায় একই রকম ঘটনা ঘটেছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। যৌন হেনস্থার অভিযোগের প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে আন্দোলন করছিলেন পড়ুয়ারা। পুলিশ ক্যাম্পাসে ঢুকে তাঁদের বেধড়ক পিটিয়ে বেশ কয়েক জনকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। সেই ঘটনার প্রতিবাদে এবং তৎকালীন উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তীর পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন পড়ুয়ারা। তার মধ্যেই সমাবর্তন অনুষ্ঠানের মঞ্চে উঠেও পদক নেননি স্নাতকস্তরের বাংলা বিভাগের ছাত্রী গীতশ্রী সরকার। সুরভি কারওয়া অবশ্য মঞ্চে ওঠেননি। হাজির ছিলেন না সমাবর্তন অনুষ্ঠানেও।