হাজার হাজার মানুষের ভিড়ে সাপাম রবিনহুডের শেষকৃত্য সম্পন্ন হল গতকাল। শেষকৃত্যে যোগ দিতে এসে গরমে ও ভিড়ের চাপে অসুস্থ হয়ে পড়েন ১১৮ জন। তার পর এ দিন, দুই মাস বন্ধ থাকার পরে খুলল ইম্ফলের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
মণিপুরে ইনার লাইন পারমিটের দাবিতে তিন মাস ধরে আন্দোলন চলছে। ৮ জুলাই আন্দোলনকারীরা বিধানসভা অভিযান চালানোর সময় পুলিশের রবার বুলেটে একাদশ শ্রেণির ছাত্র সাপাম রবিনহুডের মৃত্যু হয়। এর পর যৌথ মঞ্চ তাঁর দেহ গ্রহণ না করে তাকে শহিদ ঘোষণা করে জোরদার আন্দোলনে নামে। ৯ অগস্ট রাজ্য সরকার ছাত্র-আন্দোলন থামাতে পূর্ব ও পশ্চিম ইম্ফলের সব স্কুল বন্ধ করে দেয়। সম্প্রতি রাজ্য সরকার মণিপুর বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন ডেকে প্রোটেকশন অফ মণিপুর পিপল বিল, ২০১৫-র পাশাপাশি, দুটি আইন— মণিপুর ল্যান্ড রেভিনিউ অ্যান্ড ল্যান্ড রিফর্মস অ্যাক্ট এবং মণিপুর শপ অ্যান্ড এস্টাবলিসমেন্ট অ্যাক্ট-এর সংশোধনী পাশ করে। এর পরেই যৌথ মঞ্চ আন্দোলন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়।
গতকাল, মৃত্যুর ৫৮ দিন পরে, হাসপাতালের মর্গ থেকে রবিনহুডের দেহ গ্রহণ করে তাঁর পরিবার। বিশেষ কফিনে রেখে আয়াংপালি, লামলং, সালাথং, লাইরিকিয়েংবেম লেইকাই (সাপামের বাড়ি) হয়ে দেহ তার স্কুল আনন্দ সিংহ উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে আসে। সেখানে শ্রদ্ধাঞ্জলির পরে তার দেহ নিয়ে মিছিল যায় আওয়াং চিং-এ। সেখানে সকাল থেকে জড়ো হন সহস্রাধিক মহিলা। চড়া রোদ অগ্রাহ্য করে পথের পাশে তারা ‘হেইল লামজিং মেইরা রবিনহুড’ স্লোগান দিতে থাকেন। আওয়াং চিং-এ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা তাঁর মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এর পর থাং তা শিল্পীদের অনুষ্ঠান হয়। আপুন বা মণিপুরের গানে তারা শ্রদ্ধা জানান রবিনহুডকে। এর পর সন্ধ্যায় সমাধিস্থ হয় রবিনহুডের দেহ। গোটা অনুষ্ঠান চলাকালীন গরমে, ভিড়ের চাপে মোট ১১৮ জন অসুস্থ হয়ে পড়েন। এদের মধ্যে সিংহভাগ মহিলা। তাঁদের নানা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ দিকে, নতুন আইনে ইনার লাইন পারমিট চালু করা, ভূমিপুত্র হওয়ার ভিত্তিবর্ষ ১৯৫১ সাল করা ও কুকি-নাগা এলাকায় মেইতেইদের জমি কেনার অধিকারে স্বীকৃতির দেওয়ার প্রতিবাদে চূড়চাঁদপুর-সহ বিভিন্ন নাগা ও কুকি এলাকায় যে আন্দোলন চলছে তা এখনও দমন করা যায়নি। গত কালও আন্দোলনকারীরা এসডিও অফিস ও কর্মবিনিয়োগ কেন্দ্রে আগুন লাগায়। নিরাপত্তারক্ষীরা শূন্যে গুলি চালিয়েও বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। বেশ কিছু সরকারি কর্তা, স্বশাসিত পরিষদ সদস্য ও বিধায়কের বাড়িতেও আক্রমণের চেষ্টা হয়েছে। এমনকী, উপমুখ্যমন্ত্রী গাইখংবাম আন্দোলনকারীদের আলোচনার জন্য আহ্বান জানালেও ফল মেলেনি। পুলিশ-আন্দোলকারী খণ্ডযুদ্ধে হতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৮ জন। যৌথ মঞ্চ জানিয়েছে, সরকার তাদের দাবি না মানলে ৮টি মৃতদেহ হাসপাতাল থেকে গ্রহণ করা হবে না। নিহতদের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ ও সরকারি চাকরি দাবি করা হয়েছে।