সাংবাদিক খুন হয়ে যাওয়ার দায় কার। শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক চাপান-উতোর। —প্রতীকী ছবি।
বিজেপি এবং আরএসএস-এর বিরোধিতা করেই খুন হতে হল সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশকে। প্রায় সরাসরিই এই অভিযোগ করলেন কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধী। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও আক্রমণ করলেন তিনি। স্বাভাবিক ভাবেই রাহুলের এই মন্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া এল বিজেপির দিক থেকে। শীর্ষ বিজেপি নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিতিন গডকড়ী জানালেন, বিজেপি-ও এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা করেছে, রাহুলের মন্তব্য সম্পূর্ণ ‘ভিত্তিহীন’ এবং ‘দুর্ভাগ্যজনক’। আরএসএস-এর তরফ থেকেও গৌরী লঙ্কেশ খুনের নিন্দাই করা হয়েছে। আরএসএস নেতা এম জি বৈদ্য আততায়ীদের ‘ফাঁসি’র দাবি তুলেছেন।
রাহুল গাঁধী বলেছেন, ‘‘বিজেপি বা আরএসএস-এর বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুললেই তাঁকে আক্রমণের শিকার হতে হয়, এমনকী খুনও হতে হয়। তারা একটা মাত্র আদর্শ চাপিয়ে দিতে চায়, যা ভারতের চরিত্রের বিরোধী।’’ রাহুলের টুইটে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধেও তীব্র আক্রমণ রয়েছে। কংগ্রেস সহ-সভাপতি লিখেছেন, ‘‘চাপে পড়ে কখনও কখনও প্রধানমন্ত্রী মুখ খোলেন, কিন্তু সমস্ত বিরোধী কণ্ঠস্বরকে শেষ করে দেওয়াই হল আসল লক্ষ্য এবং এর ফলে ভারতে খুব গুরুতর সমস্যা তৈরি হচ্ছে।’’
গৌরী লঙ্কেশকে শেষ শ্রদ্ধা কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার। ছবি: পিটিআই।
রাহুলের আক্রমণের জবাবে নিতিন গডকড়ী বলেছেন, ‘‘এই সব অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং মিথ্যা।...গৌরী লঙ্কেশের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আমাদের কোনও সম্পর্কই নেই।’’ গড়কড়ী বলেন, ‘‘আমরা এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা করছি।’’ গডকড়ীর চেয়েও চড়া সুরে অবশ্য আরএসএস এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা করেছে। সংগঠনের অন্যতম শীর্ষনেতা এম জি বৈদ্য এই হত্যাকাণ্ডকে ‘বিদ্বেষমূলক এবং নিন্দনীয় কাজ’ আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘কেউ যদি তর্ক করেন বা প্রশ্ন তোলেন, তা হলে সে ভাবেই তাঁকে জবাব দিতে হবে। কিন্তু নিজের মত প্রকাশের জন্য কাউকে খুন হতে হবে, এটা কোনও প্রকৃত হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।’’
আরও পড়ুন: গৌরী লঙ্কেশ হত্যার তীব্র নিন্দা দেশ জুড়ে, রিপোর্ট চেয়ে পাঠালেন রাজনাথ
বিজেপির তরফে এ দিন কর্নাটকের কংগ্রেস সরকারকেও আক্রমণ করা হয়েছে। রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব যে রাজ্য সরকারেরই এবং কংগ্রেস আমলেই যে প্রথমে কালবুর্গিকে এবং গত রাতে গৌরী লঙ্কেশকে খুন হয়ে যেতে হল, সে কথাও বিজেপির তরফে মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে। কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া অবশ্য ঘোষণা করেছেন, ‘‘রাজ্যের সব প্রগতিশীল চিন্তাবিদকেই এ বার নিরাপত্তা দেওয়া হবে।’’
আরও পড়ুন: গেরুয়া শিবিরের কট্টর সমালোচক সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশ বাড়িতেই খুন
বছর দু’য়েক আগে এম এম কালবুর্গিকেও প্রায় একই ভাবে খুন করেছিল দুষ্কৃতীরা। আততায়ীদের এখনও ধরতে পারেনি পুলিশ। তার মধ্যেই খুন হয়ে গেলেন গৌরী লঙ্কেশের মতো প্রখ্যাত সাংবাদিকও। ফলে কর্নাটকের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। কালবুর্গি হত্যায় যাদের হাত রয়েছে, গৌরী লঙ্কেশকেও তারাই খুন করে থাকতে পারে, এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না বলে কর্নাটকের আইনমন্ত্রী জানিয়েছেন।