ফাইল চিত্র।
লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা নিয়ে জট খোলার কাজ শুরু করল ভারত ও চিন।
লাদাকের চুসুল সেক্টরের সীমান্ত লাগোয়া মালডো-তে আজকের বৈঠকে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন লে-তে মোতায়েন ১৪ কোরের লেফটেন্যান্ট জেনারেল হরিন্দর সিংহ। চিনের পক্ষে ছিলেন পিপলস লিবারেশন আর্মি-র সাউথ শিনজিয়াং মিলিটারি ডিভিশনের কোর কম্যান্ডার মেজর জেনারেল লিউ লিন। নির্ধারিত সময়ের কিছু পরে আজ বৈঠকটি শুরু হয়। বৈঠক শেষে ভারতীয় সেনা-কর্তারা সোজা লে-এর উদ্দেশে রওনা হন। বৈঠকের পরে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানিয়েছে, সামরিক স্তরে আলোচনার পাশাপাশি লাদাখের সমস্যা মেটাতে প্রয়োজন রয়েছে কূটনীতিক আলোচনারও। যে হেতু আলোচনা সবে শুরু হয়েছে, তাই এ বিষয়ে জল্পনামূলক কিছু লেখা থেকে সংবাদমাধ্যমকে বিরত থাকতে পারমর্শ দিয়েছে ভারতীয় সেনা। একটি বিষয়ে স্পষ্ট, ডোকলামে দুপক্ষের সমস্যা মেটাতে সময় লেগেছিল ৭৩ দিন। সেনা সূত্রের ধারণা, এ যাত্রায় অচলাবস্থা কাটাতে আরও বেশি দিন লাগবে।
তবে সূত্রের মতে— আজ ভারত বুঝিয়ে দিয়েছে, সীমান্তে পরিকাঠামো গড়ার কাজ চলবে। অতীতে কৌশলের অংশ হিসেবেই সীমান্ত-পরিকাঠামো খারাপ রাখত ভারত। সে সময়ে নয়াদিল্লির যুক্তি ছিল, খারাপ পরিকাঠামো থাকলে এগিয়ে আসতে পারবে না চিন। কিন্তু মোদী জমানায় গোটা চিন সীমান্ত জুড়ে পরিকাঠামো উন্নত করার কাজ শুরু হয়। লে থেকে দৌলতবাগ ওল্ডি পর্যন্ত ভারত যে সড়ক বানাচ্ছে, তা নিয়েই বিবাদের সূত্রপাত্র। ওই রাস্তা তৈরি হলে কারাকোরাম পাস পর্যন্ত পৌঁছে চিনের ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলবে ভারত। সেটাতেই আপত্তি বেজিংয়ের। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত ওই রাস্তা তৈরি বন্ধ করলেই ফিরে যাবে চিনা বাহিনী। কিন্তু মোদী সরকারের ঘোষিত অবস্থান, নিজেদের এলাকায় পরিকাঠামো গড়ে তোলার অধিকার ভারতের রয়েছে। তাই কাজ বন্ধের প্রশ্ন নেই। সেই বার্তা আজ চিনকে দেওয়া হয়েছে বলে খবর। অন্য দিকে রাজনৈতিক কারণেও সরকারের পক্ষে ওই রাস্তা তৈরি বন্ধ করা কঠিন। কারণ কাশ্মীরে ৩৭০ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহারের পরেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দাবি করেছিলেন, আকসাই চিনও ভারতের অংশ, যা দখল করে রাখা হয়েছে। যে কথা বলার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই চিনের বিদেশ মন্ত্রক পাল্টা তোপ দেগেছিল ভারতকে। এখন দেশের সীমান্তে সড়ক নির্মাণ বন্ধ হলে বেজিং-এর চাপে নয়াদিল্লি মাথা নত করেছে বলে কথা উঠবে।
আরও পড়ুন: বিজেপি ছাড়ছেন? রটনা ওড়ালেন জ্যোতিরাদিত্য
তাই প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ও কূটনৈতিক শিবির, দুই পক্ষই মনে করছে— পুরো গ্রীষ্মেই সেনা সমাবেশ থাকবে লাদাখে। কারণ প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার ও-পারে নিজেদের দিকে চিন যে পরিমাণ সেনা সমাবেশ ঘটিয়েছে, তাতে তারা ভারতের শর্তে সমঝোতা করবে না বলেই আশঙ্কা। সে কারণেই, এক দিনে যে সমস্যার সমাধান হবে না তা বুঝে কেন্দ্র জানিয়েছে, ভবিষ্যতে শীর্ষ পর্যায়ের মধ্যে হতে চলা ধারাবাহিক বৈঠকের মধ্যে এটি প্রথম। সরকারের বক্তব্য, সীমান্ত জুড়ে উত্তেজনা যাতে আর না বাড়ে সেই লক্ষ্যেই আলোচনা শুরু হয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে গত কাল আনুষ্ঠানিক ভাবে দু’দেশের মধ্যে কূটনৈতিক আলোচনাও শুরু হয়েছে।