Assam Election

ঐক্যের অভাবেই অসমে প্রতিনিধি কম বাঙালির

সমস্যা হল বরাক ও ব্রহ্মপুত্রের বাঙালি যেমন কখনও একজোট নন, তেমনই একজোট নন ভাষিক সংখ্যালঘু হিসেবে বাঙালিরাও। তাই অসমের রাজনীতিতে ক্রমেই অধিকার হারাচ্ছেন বাঙালিরা।

Advertisement

রাজীবাক্ষ রক্ষিত 

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০২১ ০৭:০৫
Share:

ছবি: পিটিআই।

গত বার বিধানসভায় বাঙালির সংখ্যা ছিল হিন্দু ও মুসলিম মিলিয়ে ১৭ জন। সেই সংখ্যাটি এ বারও একই। রাজ্যে সাড়ে তিন কোটি জনসংখ্যার মধ্যে এক তৃতীয়াংশই বাঙালি। বরাকে পরিস্থিতি ভিন্ন, কিন্তু ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় মন্ত্রী-বিধায়ক দূরের কথা বিভিন্ন দলের টিকিট পাওয়ার ক্ষেত্রেও বাঙালিরা বঞ্চিত।

Advertisement

সমস্যা হল বরাক ও ব্রহ্মপুত্রের বাঙালি যেমন কখনও একজোট নন, তেমনই একজোট নন ভাষিক সংখ্যালঘু হিসেবে বাঙালিরাও। তাই অসমের রাজনীতিতে ক্রমেই অধিকার হারাচ্ছেন বাঙালিরা।

বিধানসভায় বাঙালির প্রতিনিধিত্ব এত কম হওয়ার জন্য দায় কার? অসমিয়া আঞ্চলিকতাবাদের? না বাঙালিদের নিজেদের?

Advertisement

কটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক প্রশান্ত চক্রবর্তীর মতে, ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার “বাঙালি” বলতে মূলত হিন্দু বাঙালি। বাংলাভাষী মুসলিমরা নিজেদের “ন-অসমিয়া” বলেন। হিন্দু বাঙালির সিংহভাগ পূর্ববঙ্গের উদ্বাস্তু। বাকিরা কর্মসূত্রে পশ্চিমবঙ্গ থেকে আগত। ফলে এঁদের মধ্যে কোনও সামগ্রিক বাঙালিয়ানা, রাজনৈতিক সচেতনতা বা রাজনৈতিক অধিকারের ইচ্ছে নেই। অসমিয়া উগ্র ধারাও দশকের পর দশক একটা নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করেছে। বাঙালিদের মধ্যে এখন অজস্র দল-উপদল আর রাজনৈতিক দালাল ভর্তি। খেয়োখেয়ি যেমন বেশি তেমনই সুযোগ্য নেতার অভাব। বরাকের বাঙালিদের ইতিহাস ও অস্তিত্বের লড়াই স্বতন্ত্র। তাই তেলেজলে মেশেনি।

সারা অসম বাঙালি পরিষদের সভাপতি শান্তনুকুমার সান্যালের মতেও, বাঙালি হিন্দুরা রাজনৈতিক ভাবে সচেতন না। তাঁরা চাকরি এবং ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত। সব দল শুধুই ভোটব্যাঙ্ক হিসেবে বাঙালিদের দেখেছে কিন্তু সচেতন ভাবেই নেতা তৈরি হতে দেয়নি। ব্যাঙের ছাতার মত গজানো অসংখ্য বাঙালি সংগঠনে কোনও ঐক্যও নেই।

কংগ্রেসের বাঙালি মুখপাত্র অভিজিৎ মজুমদার স্বীকার করেন তাঁর দলও বাঙালিদের টিকিট দিতে পিছপা। তিনি বলেন, বরাক ও ব্রহ্মপুত্রে এক তৃতীয়াংশ বাঙালি। পশ্চিম গুয়াহাটিতে বাঙালি বেশি। লোকসভায় গুয়াহাটির ১৬ লক্ষের মধ্যে সাড়ে সাত লক্ষ বাঙালি ভোটার। কিন্তু কোনও দল বাঙালি প্রার্থী দেয় না। সিএএ প্রশ্নে বরাক ও ব্রহ্মপুত্রে কংগ্রেসের বিভাজন লোক হাসিয়েছে। বরং বাঙালিদের এক করতে পারলে কংগ্রেসের লাভ হত।

সারা অসম বাঙালি ঐক্যমঞ্চের সাধারণ সম্পাদক অমৃতলাল দাস বলেন, ‘‘ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় জাতি হিসেবে বাঙালি হীনমন্যতায় ভুগছে। অধিকাংশ বাঙালি নেতার আদর্শহীন ও সুবিধাবাদী চরিত্রের ফলে প্রতি স্থানীয় মানুষের বিশ্বাস তৈরি হয়নি। পাশাপাশি বিভিন্ন সরকার ডি-ভোটার, এনআরসি, সিএএ, অসম চুক্তির মতো বিভিন্ন জুজুতে বাঙালিকে বিভ্রান্ত ও বিভাজিত করে রেখেছে।’’ আর বরাক-ব্রহ্মপুত্রকে এক হতে দেয়নি একটি সুবিধাবাদী শ্রেণি। তারাই আবার পৃথক বরাক রাজ্যের দাবি তোলে।

বাঙালিদের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসও অসমের রাজনীতিতে লড়ছে। কিন্তু ২০১১ সালে এক বিধায়কই তাদের সাফল্য শেষ। এক সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জনসভা করেছেন গুয়াহাটি-ধুবুড়িতে। তাপস-শতাব্দী-মুকুল রায়েরা এসেছেন প্রচারে, দল গঠনে। কিন্তু রাজ্য নেতৃত্বের অযোগ্যতা আর অসম নিয়ে তৃণমূলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের গা-ছাড়া মনোভাবে দলের অস্তিত্ব
লুপ্তপ্রায়। এ দিকে অসমের হিন্দু বাঙালিরা যেখানে সিএএ-র পক্ষে সেখানেই তৃণমূল নেতৃত্ব সিএএ-র বিপক্ষে। দলের মুখপাত্র বিশ্বজিৎ চৌধুরী বলেন, কোনও পরিকাঠামো বা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সাহায্য ছাড়াই লড়েছেন ১৫ জন প্রার্থী। মূল লক্ষ্য ছিল বাংলাভাষী মুসলিমেরা। তাঁরা ‘দিদি’কে পছন্দ করলেও মেরুকরণের জেরে অসমে কংগ্রেস-এআইইউডিএফকে ভোট দিয়েছেন। ‘বাংলার দল’-এর তকমা নিয়ে অসমে বেশি দূর এগোনোও সম্ভব নয়। অসমে সংগঠন মজবুত করতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাউকে এখানে থাকতে হবে। শুধু ভোটের সময় মুখ দেখালে চলবে না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement