এ বার নরেন্দ্র মোদী সরকারই জানাল, নোট বাতিলের পরে দেশে বেকারির হার ৬.১ শতাংশে পৌঁছেছিল। যা ৪৫ বছরে সর্বোচ্চ।
এই সমীক্ষা ধামাচাপা দিয়ে রাখার প্রতিবাদেই জাতীয় পরিসংখ্যান কমিশন থেকে পরিসংখ্যানবিদরা পদত্যাগ করেছিলেন। তার পরে ওই রিপোর্ট সংবাদমাধ্যমে ফাঁস হয়ে যায়। কিন্তু ভোটের আগে অস্বস্তি ঢাকতে মোদী সরকারের দাবি ছিল, সমীক্ষা রিপোর্ট এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
কিন্তু এখন লোকসভা ভোট মিটে গিয়েছে। আগের থেকেও বেশি আসনে জিতে ক্ষমতায় এসেছে বিজেপি। বৃহস্পতিবারই নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নিয়েছে। সেই উৎসবের মেজাজের মধ্যেই আজ ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভে অফিস (এনএসএসও)-এর এই সমীক্ষা প্রকাশ করে দিল কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান মন্ত্রক।
রিপোর্ট বলছে, ২০১৭-১৮-তে দেশে বেকারত্বের হার আক্ষরিক অর্থেই আকাশচুম্বী। গ্রামের থেকে শহরাঞ্চলে বেকারত্বের হার অনেকটাই বেশি। গ্রামে বেকারত্বের হার ৫.৩%, কিন্তু শহরাঞ্চলে বেকারত্বের হার পৌঁছেছে ৭.৮ %-এ। সামগ্রিক ভাবে সারা দেশে বেকারত্বের হার গত ছয় বছরে ২.২% থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬.১ %-এ। ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী যুবকদের মধ্যে বেকারত্বের হার ১৩% থেকে বেড়ে হয়েছে ২৭%। ফেব্রুয়ারিতে ফাঁস হওয়া রিপোর্টে এই সব তথ্যই ছিল। কিন্তু নীতি আয়োগ তখন বলেছিল, রিপোর্ট চূড়ান্ত নয়। এখন সরকার সেই একই রিপোর্ট প্রকাশ করায় প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি ভোটের জন্যই রিপোর্ট ধামাচাপা দেওয়া ছিল?
পরিসংখ্যান মন্ত্রকের সচিব প্রবীণ শ্রীবাস্তব বলেন, ‘‘না, কোনও চাপ ছিল না। তবে এনএসএসও-র সমীক্ষা হাতে পাওয়ার পরে, সরকার খতিয়ে দেখছিল, কী পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হবে।’’ এই জবাবে প্রশ্ন উঠেছে, জাতীয় পরিসংখ্যান কমিশনের ছাড়পত্রের পরেও কেন পরিসংখ্যান মন্ত্রক তাতে নাক গলিয়েছে? সচিবের জবাব, ‘‘আমরা রিপোর্টের সঙ্গে একটি ব্যাখ্যা যোগ করেছি যে আগের সমীক্ষার সঙ্গে এই সমীক্ষার পদ্ধতি আলাদা। ফলে দু’টের মধ্যে তুলনা করা যায় না।’’
নেই কাজ
• বেকারত্বের হার ২০১৭-১৮-তে ৬.১ শতাংশ, ৪৫ বছরে সর্বোচ্চ
• ২০১৬-র নভেম্বরের নোট বাতিলের পরে সমীক্ষা
• ফাঁস হওয়া রিপোর্টই সঠিক, জানাল সরকার
নতুন সমীক্ষা
• অক্টোবর-ডিসেম্বর, ২০১৮ বেকারত্বের হার ৯.৭ শতাংশ
• অক্টোবর-ডিসেম্বরে চাকরিতে ইচ্ছুকদের ৪৬.৮% কাজ করছেন
• কাজে ইচ্ছুকদের মধ্যে পুরুষদের হার ৭৩.৬%
• মহিলাদের হার ১৯.৫%
এই একই যুক্তিতে ২০১৭-১৮-এ ৬.১% বেকারির হার ৪৫ বছরে সর্বোচ্চ বলে মানতে চাননি প্রবীণ। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের এই যুক্তি মানতে নারাজ দেশের প্রথম মুখ্য পরিসংখ্যানবিদ প্রণব সেন। তাঁর দাবি, আগের সমীক্ষাগুলির কর্মসংস্থানের হিসেবের সঙ্গে এই সমীক্ষার ফলাফলের তুলনা সম্ভব। প্রণববাবু এ দিন বলেন, ‘‘সমীক্ষার মূল উদ্দেশ্য হল, কত জনের কাজ নেই তা খতিয়ে দেখা। সমীক্ষার মাপকাঠি বা পদ্ধতিগত কিছু পরিবর্তন হলেও রাজ্য বা জাতীয় স্তরে কর্মসংস্থানের সার্বিক ছবির ক্ষেত্রে তার কোনও প্রভাব পড়ে না।’’ বস্তুত, জাতীয় পরিসংখ্যান কমিশনই সেই তুলনা টেনেছিল।