প্রতীকী ছবি।
১৪ বছরের এক নাবালিকাকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় তিন যুবককে ফাঁসির আদেশ শোনাল মহারাষ্ট্রের আহমেদনগর জেলার এক বিশেষ আদালত।
ঘটনাটি বছর দেড়েক আগের। ২০১৬ সালের ১৩ জুলাই আহমেদনগরের কোপারডি গ্রামে দাদুর বাড়ি থেকে ফিরছিল নবম শ্রেণির ওই ছাত্রী। রাস্তায় তার পথ আটকায় জিতেন্দ্র শিন্দে (২৫), সন্তোষ ভাওল (৩৬) এবং নিতিন ভাইলুম (২৬) নামে তিন যুবক। একটি নির্জন জায়গায় মেয়েটিকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে খুন করে তারা। তিন জনই স্থানীয় নির্মাণ সংস্থার ঠিকা কর্মী।
মেয়েটির দেহ উদ্ধারের পরে ক্ষোভে ফেটে পড়ে গোটা গ্রাম। দোষীদের গ্রেফতারির দাবিতে পুলিশের উপর চাপ বাড়তে থাকে। অভিযুক্ত তিন যুবকই দলিত সম্প্রদায়ের। মেয়েটি ছিল মরাঠা সম্প্রদায়ের। ঘটনার পরে এই দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে শুরু হয় দফায় দফায় সংঘর্ষ। ঘটনার চার দিনের মধ্যে পুণে ও তার আশপাশের এলাকা থেকে আলাদা আলাদা ভাবে গ্রেফতার করা হয় তিন অভিযুক্তকে। কিন্তু তার পরেও কোপারডিতে শান্তি ফেরেনি। অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তির দাবিতে গত সেপ্টেম্বরে মহারাষ্ট্র জুড়ে মৌন মিছিল করেন মরাঠা সম্প্রদায়ের কয়েক লক্ষ মানুষ। নাসিকে আক্রান্ত হয় কয়েকটি দলিত পরিবার। মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীসের পদত্যাগ দাবি করতে থাকে কংগ্রেস। ফডণবীস এর পর নিজে দ্রুত বিচারের আশ্বাস দেন।
গত ১৮ নভেম্বর তিন অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করে বিশেষ আদালত। পস্কো আইনে বিচার চলছিল তাদের। সরকারি আইনজীবী উজ্জ্বল নিকম বিচারকের কাছে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন। তাঁর দাবি, পরিকল্পনা করে ঠান্ডা মাথায় মেয়েটিকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। ঘটনার কয়েক দিন আগে থেকে মেয়েটিকে অনুসরণ করছিল ওই তিন জন। ধরা পড়ার পরে দেড় বছর কেটে গেলেও অভিযুক্তদের মধ্যে কোনও রকম অনুতাপ চোখে পড়েনি বলে জানিয়েছেন নিকম। এই অবস্থায় দোষীদের ফাঁসির শাস্তি না হলে সমাজের প্রতি অন্য রকম বার্তা যাবে বলে সওয়াল করেন তিনি।
আজ রায়দানের আগে থেকেই গোটা আহমেদনগরে আঁটোসাটো নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছিল প্রশাসন। মোতায়েন করা হয়ছিল বিশাল পুলিশ বাহিনী। রায় বেরোনোর পরে কোনও রকম গোলমাল যাতে না হয়, তার জন্য আগে থেকেই সতর্ক ছিল প্রশাসন। আদালত চত্বরেও আজ ছিল উপচে পড়া ভিড়। নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে দোষীরা বম্বে হাইকোর্টে আবেদন করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন বিচারক।
রায় শোনার পরে কান্নায় ফেটে পড়া মেয়েটির মাকে শুধু বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘আমার ছোট্ট মেয়েটা এত দিনে বিচার পেল।’’ মেয়েটির বাবা ধন্যবাদ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী আর সরকারি আইনজীবীকে।