কানহাইয়াকে গুলি করুন, ফের পোস্টার

জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা কানহাইয়া কুমারকে হত্যার হুমকি দিয়ে ফের পোস্টার পড়ল দিল্লিতে। ‘দেশদ্রোহী কানহাইয়া কুমারকে গুলি করে হত্যা করা জাতীয় কর্তব্য’— দিল্লির যন্তর মন্তর এলাকায় এমন কথা লেখা পোস্টার আজ অনেকেরই চোখে পড়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৬ ০৩:২৯
Share:

জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা কানহাইয়া কুমারকে হত্যার হুমকি দিয়ে ফের পোস্টার পড়ল দিল্লিতে। ‘দেশদ্রোহী কানহাইয়া কুমারকে গুলি করে হত্যা করা জাতীয় কর্তব্য’— দিল্লির যন্তর মন্তর এলাকায় এমন কথা লেখা পোস্টার আজ অনেকেরই চোখে পড়েছে। কানহাইয়ার পাশাপাশি তাঁর দুই সহপাঠী তথা জেএনইউয়ের ছাত্র উমর খালিদ এবং অনির্বাণ ভট্টাচার্যকেও খুনের হুমকি দেওয়া হয়েছে ওই সব পোস্টারে। গত ৯ ফেব্রুয়ারি জেএনইউ চত্বরে সংসদ হামলায় অভিযুক্ত আফজল গুরুর সমর্থনে সভা ও দেশবিরোধী স্লোগান দেওয়ার অভিযোগে উমর এবং অনির্বাণ আপাতত জেল হেফাজতে রয়েছেন। কানহাইয়াকে ওই একই অভিযোগে গ্রেফতার করা হলেও তিনি আপাতত জামিনে মুক্ত রয়েছেন।

Advertisement

জামিনে মুক্তি পাওয়ার আগে আদালতে পেশ করার সময় বিজেপি-ঘনিষ্ঠ আইনজীবীদের হাতে বেধড়ক মার খেয়েছিলেন কানহাইয়া। আর জামিন পাওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী সংগঠন তাঁকে হত্যার হুমকি দিয়েছে। গত সপ্তাহেই পূর্বাঞ্চল সেনার তরফে ঘোষণা করা হয়, কানহাইয়াকে হত্যা করলে হত্যাকারীকে ১১ লক্ষ টাকা ইনাম দেওয়া হবে। গত ৭ মার্চ ওই সংগঠনের সভাপতি আদর্শ কুমারকে হত্যার ষড়যন্ত্রে যুক্ত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করে দিল্লি পুলিশ।

সেই ঘটনার রেশ কাটার আগেই ফের পোস্টার-হুমকি। নিজেকে অণ্ণা হজারের এক সময়ের সহযোগী হিসেবে দাবি করে বলবীর সিংহ ভারতীয় নামে একজন ওই পোস্টার দিয়েছেন। বলবীর পোস্টারে লিখেছেন, ‘‘কানহাইয়ার মতো দেশদ্রোহীকে হত্যা করা জাতীয় কর্তব্য। এ ছাড়া উমর খলিদ ও অনির্বাণ ভট্টাচার্যকেও আমি গুলি করব!’’ বলবীরের যুক্তি, ‘‘সন্ত্রাসবাদীদের চেয়েও বড় বিপদ হল এ দেশের বিশ্বাসঘাতকেরা। এদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া উচিত। যারা আফজল গুরুর মৃত্যুবার্ষিকী পালন করেছে, আমি তাদের গুলি করে হত্যা করব।’’ কংগ্রেসের রাহুল গাঁধী বা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল যে ভাবে কানহাইয়াদের সমর্থনে মুখ খুলেছেন, পোস্টারে তারও সমালোচনা করেছেন বলবীর।

Advertisement

আজ নতুন করে পোস্টারে খুনের হুমকির ঘটনা সামনে আসায় কোনও ঝুঁকি না নিয়ে দিল্লি পুলিশ জেএনইউ চত্বরে নিরাপত্তা বাড়িয়েছে। দিল্লি পুলিশের ডিসিপি যতীন নারওয়াল বলেন, ‘‘আমরা ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করে দিয়েছি।’’ দিল্লি পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পোস্টারে যে মোবাইল নম্বরটি রয়েছে তার ভিত্তিতে একজনকে ফোন করা হয়েছিল। জানা গিয়েছে, যমুনা বাজারে তাঁর দোকান রয়েছে। ওই ব্যক্তিকে ডেকে জেরা করা হতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে।

এই তদন্তের পাশাপাশি, গত ৯ ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠানে আফজল গুরুর সমর্থনে জেএনইউয়ের কোনও কাশ্মীরি পড়ুয়া এগিয়ে এসেছিল কিনা, তাও খতিয়ে দেখা শুরু করল দিল্লি পুলিশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাশ্মীরি ছাত্র-ছাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য ইতিমধ্যেই জেএনইউ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছে তারা। দিল্লির পুলিশের এই পদক্ষেপের পিছনে বিজেপির চাপ রয়েছে বলে অভিযোগ করেছে আম আদমি পার্টি। দলের অভিযোগ, সঙ্ঘের চাপেই শাসক দল এই খেলায় নেমেছে।

সঙ্ঘ পরিবার এখনও মনে করে সে দিন জেএনইউতে ভারত বিরোধী স্লোগান উঠেছিল এবং তার পিছনে বহিরাগতদের হাত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। গতকাল থেকে রাজস্থানে শুরু হওয়া সঙ্ঘ পরিবারের বৈঠকে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলি এখন রাষ্ট্রবিরোধী কাজের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা রুখতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলিকে কড়া ব্যবস্থা নিতে বলেছে সঙ্ঘ। আপ শিবিরের অভিযোগ, সঙ্ঘ পরিবার চাপ দিচ্ছে বিজেপিকে আর বিজেপি চাপ দিচ্ছে দিল্লি পুলিশকে। দলের এক নেতার কথায়, ‘‘কেন্দ্রের চাপে বাধ্য হয়ে নিরীহ কাশ্মীরি পড়ুয়াদের হেনস্থা করা শুরু করেছে দিল্লি পুলিশ।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement