বালেশ্বরে দুর্ঘটনাগ্রস্ত করমণ্ডল এক্সপ্রেস। ছবি: পিটিআই।
করমণ্ডল এক্সপ্রেসে দুর্ঘটনায় অন্তর্ঘাত হয়েছে, সন্দেহ প্রকাশ করলেন খুরদার ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার (ডিআরএম)। তাঁর মতে, বাইরে থেকে কোনও কিছু না করলে সিগন্যাল ব্যবস্থায় ত্রুটি হতেই পারে না। কেউ বা কারা শুক্রবার রাতে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের সিগন্যালে গোলমাল করে দিয়েছিলেন বলে মনে করছেন তিনি।
ওড়িশা টিভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডিআরএম রিঙ্কেশ রায় বলেন, ‘‘মেন লাইনে সিগন্যাল সবুজ ছিল। সামনের লাইন ১০০ শতাংশ ফাঁকা না থাকলে সিগন্যাল প্রযুক্তিগত ভাবে সবুজ হতেই পারে না। কোনও একটি ছোটখাটো ত্রুটির কারণেও সিগন্যাল লাল হয়ে থাকে। যদি না কেউ নিজে থেকে সব জেনে তা সবুজ করে দেন। এ ক্ষেত্রে, কেউ ইচ্ছা করে সিগন্যাল না দিলে তা সবুজ হতেই পারে না।’’
করমণ্ডল এক্সপ্রেসে দুর্ঘটনা সংক্রান্ত বিষয়ে বালেশ্বর রেল পুলিশ থানায় এফআইআর দায়ের হয়েছে শনিবারই। লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে ভারতীয় দণ্ডবিধি এবং রেল আইনের মোট সাতটি ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছে এই এফআইআর।
কটক জিআরপি-র অন্তর্গত বালেশ্বর থানায় শনিবার রাত ১টা নাগাদ করমণ্ডল দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে এফআইআর দায়ের করা হয়। ওই থানার সাব-ইনস্পেক্টর পাপু কুমার নায়েকের অভিযোগের ভিত্তিতে এফআইআর গ্রহণ করে রেলপুলিশ। এই ঘটনায় ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৩৭, ৩৩৮, ৩০৪এ (জামিন অযোগ্য ধারা) এবং ৩৪ নম্বর ধারায় মামলা করা হয়েছে। এ ছাড়া, রেল আইনের (১৯৮৯) ১৫৩, ১৫৪ এবং ১৭৫ ধারাতেও দায়ের হয়েছে মামলা। এই ধারাগুলিতে অবহেলার কারণে মৃত্যু, সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্ন করে দেওয়ার মতো অভিযোগ রয়েছে।
করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় প্রাথমিক তদন্তের পর সিগন্যালের ত্রুটির কথা বলেছিল রেল। কিন্তু পরে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব অন্য ইঙ্গিত দেন। তিনি জানান, এই দুর্ঘটনার নেপথ্যে মানুষের হাত থাকতে পারে। রেলের তরফে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে সিবিআই তদন্তের সুপারিশও করা হয়। যা থেকে প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল, তবে কি অন্তর্ঘাতের সন্দেহ করছে রেল? পৃথক ভাবে সোমবারই করমণ্ডল দুর্ঘটনার তদন্ত শুরু করেন রেল সেফটি কমিশনার এএম চৌধরি। রেলের ইন্টারলকিং সিস্টেমে কোনও কারসাজি করা হয়ে থাকতে পারে বলেও সন্দেহ করছেন কেউ কেউ।
শুক্রবার রাতে বালেশ্বরের বাহানগা বাজার স্টেশনের কাছে লাইনচ্যুত হয় করমণ্ডল এক্সপ্রেস। তা লুপ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি মালগাড়িতে ধাক্কা মারে। ট্রেনের ২১টি কামরা বেলাইন হয়ে যায়। একই সঙ্গে দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয় উল্টো দিক থেকে আসা বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসও। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ২৮৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। যদিও ওড়িশা সরকারের হিসাবে মৃতের সংখ্যা ২৭৫। আহত হাজারের বেশি।