প্রতিবাদ: কোয়ম্বত্তূরে বৃহস্পতিবার ট্রেন আটকে চলছে বিক্ষোভ। ছবি: পিটিআই।
শবরীমালা নিয়ে হরতালকে কেন্দ্র বৃহস্পতিবার হিংসা ছড়াল কেরল জুড়ে। অবরোধ-বিক্ষোভ, সংঘর্ষ-ভাঙচুর বাদ রইল না কিছুই। এর মধ্যেই শবরীমালা কর্মসমিতির এক কর্মীর মৃত্যু ঘিরে চাপান-উতোর বেধেছে গেরুয়া শিবির এবং শাসক বামেদের মধ্যে। রাজ্য জুড়ে অশান্তির জন্য বিজেপি, আরএসএস-সহ হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলিকেই দায়ী করেছেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। হরতাল ঘিরে হিংসা নিয়ে বিজয়নের কাছে রিপোর্ট তলব করেছেন কেরলের রাজ্যপাল পি সদাশিবম।
বুধবার কাকভোরে শবরীমালা মন্দিরে প্রবেশ করেন বছর চল্লিশের বিন্দু এবং কনকদুর্গা। প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার রাজ্যে ১২ ঘণ্টা হরতালের ডাক দেয় শবরীমালা কর্মসমিতি। বিজেপি-সহ বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী সংগঠন অবশ্য বিক্ষোভ-অবরোধ শুরু করে দেয় বুধবার সকাল থেকেই। পান্ডালামে সিপিআই কর্মী-সমর্থকদের ছোড়া পাথরে জখম হন কর্মসমিতির কর্মী, ৫৫ বছরের চন্দ্রন উন্নিনাথন। বুধবার রাতে হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। যদিও বিজয়নের দাবি, হৃদ্যন্ত্র বিকল হয়ে মৃত্যু হয়েছে চন্দ্রনের। অটোপসি রিপোর্ট অবশ্য চন্দ্রনের মাথায় আঘাতের কথা বলেছে।
শবরী-বিতর্কের রেশ গিয়ে পড়েছে সংসদেও। বিজেপির সুরেই কেরলের কংগ্রেস সাংসদেরাও মন্দিরে মহিলাদের প্রবেশের বিরোধিতায় হইচই করেছেন, স্লোগান দিয়েছেন। কংগ্রেসের এমন আচরণের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে সিপিএম। দলের সাংসদ মহম্মদ সেলিম, এম বি রাজেশদের দাবি, রাহুল গাঁধীর উচিত কেরলের কংগ্রেসের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া। কারণ, সুপ্রিম কোর্টের রায়কে রাহুল নিজেই স্বাগত জানিয়েছিলেন। আবার বিজেপির মতের বিপরীতে গিয়ে এনডিএ-র শরিক নেতা রামবিলাস পাসোয়ান প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘মহিলারা মহাকাশে যেতে পারলে মন্দিরে নয় কেন?’’
হরতালের দিন রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ এবং সিপিএম কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন ধর্মঘটকারীরা। সংঘর্ষ ছড়ায় তিরুঅনন্তপুরম, মলপ্পুরম, কোঝিকোড়েও। ত্রিশূরে এসডিপিআই কর্মীদের সঙ্গে মারামারিতে জড়িয়ে ছুরিকাহত হয়েছেন বিজেপির তিন কর্মী। কোঝিকোড় এবং কান্নুরে অটোরিকশা ও বাস লক্ষ্য করে পাথর ছোড়ে বিক্ষোভকারীরা। হামলা হয় সরকারি বাস, পুলিশের গাড়িতেও। তিরুঅনন্তপুরমের একটি স্টেশনে মৃত্যু হয় ৬৫ বছরের এক ক্যানসার আক্রান্ত মহিলার। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, অ্যাম্বুল্যান্স আসতে দেরি হয়েছিল।
বিজয়নকে কালো পতাকা দেখাতে গিয়ে তাঁর কনভয়ের গাড়ির ধাক্কায় এক ব্যক্তি জখম হয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। তিরুঅনন্তপুরম-সহ কেরলের বিভিন্ন জায়গার দোকান-রেস্তোরাঁতেও ভাঙচুর চালান বিক্ষোভকারীরা। তাঁরা জোর করে দোকান বন্ধ করে দেন বলেও অভিযোগ। তবে ব্যবসায়ীদের সংগঠন জানিয়েছে, তারা হরতালকে সমর্থন করে না। কালকের মতো এ দিনও বিক্ষোভকারীরা সাংবাদিকদের উপরে চড়াও হয়েছেন বলে অভিযোগ। প্রতিবাদে বিজেপিকে বয়কট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেরলের সাংবাদিকদের সংগঠন। দিল্লিতে কেরল হাউসের সামনে বিজয়ন সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিল সঙ্ঘ প্রভাবিত একটি সংগঠন। সেখানেও বিক্ষোভকারীরা চড়াও হন কয়েক জন সাংবাদিক ও চিত্র সাংবাদিকের উপরে। হরতাল ঘিরে হিংসার ঘটনায় গোটা রাজ্যে ২৬৬ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
বিক্ষোভ-আন্দোলন ছড়িয়েছে তামিলনাড়ুতেও। কোয়ম্বত্তূরে পুড়েছে বিজয়নের কুশপুতুল। তামিলনাড়ুতে ৬০ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
কেরলের হরতালকে সমর্থন জানিয়েছে বিজেপি। ‘কালা দিবস’ পালন করেছে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউডিএফ। মুখ্যমন্ত্রী বিজয়ন পদত্যাগ না করা পর্যন্ত বিক্ষোভ-আন্দোলন চলবে বলে জানিয়েছেন শবরীমালা কর্মসমিতির নেত্রী কে পি শশিকলা। উল্টো দিকে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘শবরীমালা নিয়ে এটি বিজেপির পঞ্চম বন্ধ! আর আরএসএসকে ধরলে এটা গত তিন মাসে সপ্তম হরতাল! সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে এই সব বন্ধ-অবরোধের অর্থ আদালত অবমাননা।’’
বিন্দু ও কনকদুর্গা শবরীমালায় প্রবেশ করার পরে মন্দির ‘শুদ্ধ’ করার দরজা ঘণ্টাখানেক বন্ধ রাখা হয়েছিল। এই কারণে শবরীমালার প্রধান পুরোহিতের তীব্র সমালোচনা করে বিজয়ন দাবি করেছেন, ‘‘আদালতের নির্দেশ মানতে না চাইলে প্রধান পুরোহিতের পদত্যাগ করা উচিত।’’ এই ‘শুদ্ধকরণের’ প্রতিবাদে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন এক দল আইনজীবী। তাঁদেরও দাবি, ‘শুদ্ধকরণ’ প্রক্রিয়া চালিয়ে আদালত অবমাননা করা হয়েছে। কিন্তু এ দিন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ এবং বিচারপতি এস কে কলের বেঞ্চ জানিয়েছে, জরুরি ভিত্তিতে এই আর্জির শুনানি হবে না। শবরীমালা রায় পুনর্বিবেচনার জন্য যে সব আবেদন জমা পড়েছে, সেগুলির সঙ্গেই এর শুনানি হবে।