কেরলের রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খান। ছবি: পিটিআই।
ব্যক্তিগত সফরে গিয়ে কেরলের ব্যাকওয়াটার ঘেরা আলপ্পুঝার একটি রিসর্টে উঠেছিলেন লালকৃষ্ণ আডবাণী। সঙ্গে কন্যা প্রতিভা। খবর পেয়ে সেই রিসর্টে গিয়ে প্রবীণ বিজেপি নেতার সঙ্গে দেখা করলেন রাজ্যপাল। রাজধানী তিরুঅনন্তপুরম ফেরার পথে গাড়ি থেকে নেমে পড়লেন জনসংযোগে। চিকিৎসা এবং আরও নানা প্রয়োজনে আম জনতাকে সাহায্যের আশ্বাস দিলেন। কাউকে কাউকে সটান রাজভবনেও আমন্ত্রণ জানিয়ে রাখলেন!
শপথ নেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খানের কার্যকলাপ ঘিরে চর্চা শুরু হয়ে গেল কেরলের রাজনৈতিক শিবিরে। রাজনীতিকদের কায়দায় রাজ্যপালের রাস্তায় নেমে জনসংযোগে অস্বস্তি এবং ঈষৎ ক্ষোভও তৈরি হয়েছে শাসক শিবিরে। তবে নতুন রাজ্যপালকে আরও সময় দেওয়ার জন্য এখনই প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না শাসক দলের নেতারা। প্রশাসনিক কাজের সঙ্গে রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান সংঘাতে জড়াতে চান কি না, তাঁরা আগে দেখে নিতে চান।
কেরলের রাজ্যপাল হিসেবে পি সদাশিবমের মেয়াদ ফুরনোর পরে কেন্দ্রীয় সরকার ওই পদে নিয়োগ করেছে আরিফকে। কেন্দ্রে রাজীব গাঁধীর মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দেওয়া আরিফ নানা দল ঘুরে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন ঠিকই। তবে সরেও গিয়েছিলেন কয়েক বছরের মধ্যে। তিন তালাক বিল পাশ করানোর সময়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সংসদে উদ্ধৃতি দিয়েছিলেন আরিফের পুরনো কথার। এবং তার কিছু দিনের মধ্যেই ফের আলোর বৃত্তে ফিরেছেন উত্তরপ্রদেশের এই রাজনীতিক। তিরুঅনন্তপুরমের রাজভবনে শুক্রবার তাঁকে রাজ্যপাল পদে শপথ পাঠ করিয়েছেন কেরল হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি হৃষীকেশ রায়। আর শনিবারই রাজ্যপাল বেরিয়ে পড়েছেন রাস্তায়।
আডবাণীর সঙ্গে সাক্ষাৎ সেরে ফেরার পথে অম্বালাপুঝায় কয়েক জায়গায় দাঁড়িয়েছিল রাজ্যপালের কনভয়। গাড়ি থেকে নেমে রাজ্যপাল আরিফ কথা বলেন এগিয়ে আসা জনতার সঙ্গে। চিকিৎসার জন্য কয়েক জন সাহায্য চাইলে তাঁদের আশ্বাসও দেন। আবার কাউকে কাউকে বলেন, রাজভবনে এসে দেখা করতে।
গোটা ঘটনার রিপোর্ট পেয়ে কেরলের শাসক সিপিএমের এক নেতার মন্তব্য, ‘‘চিকিৎসার জন্য রাষ্ট্রপতি বা রাজ্যপালের কাছে অনেকেই সহায়তা চেয়ে আবেদন করেন। কিন্তু রাস্তায় জনসংযোগ করা রাজ্যপালের কাজ নয়। উনি কোন পথে চলতে চান, সেটা দেখে নিয়ে আমাদের করণীয় ঠিক করব।’’
পরপর দু’বছর বন্যায় বিপর্যস্ত হয়েছে কেরলের বিস্তীর্ণ অংশ। এ বার তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশকে কেন্দ্রীয় সাহায্য দিলেও দুর্যোগ মোকাবিলায় বাম-শাসিত কেরলকে এক পয়সাও দেয়নি কেন্দ্রের মোদী সরকার। যা নিয়ে সরব সিপিএম নেতৃত্ব। রাজ্যপাল হিসেবে দায়িত্ব নিয়েই আরিফ মন্তব্য করেছেন, ‘‘ঘন ঘন বন্যা হচ্ছে কেন? এমন দুর্যোগ আটকাতে গেলে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা দরকার।’’ শাসক সিপিএমের নেতারা আপাতত ঠিক করেছেন, দুর্যোগ মোকাবিলার তহবিল কেন্দ্রের কাছ থেকে আদায়ের জন্য নতুন রাজ্যপালের কাছে দরবার করে তাঁর মনোভাব বুঝে নেওয়া হবে।