এই বাড়ি নিয়েই ঝামেলা। কাঠুয়ায়। নিজস্ব চিত্র
ঠিক দশ বছর আগে জম্মুতে নির্বাচন কভার করতে এসে চোখ জুড়িয়ে গিয়েছিল। শহরের বাইরে পা দিতেই ঘন অরণ্য, টিলা। যার মাঝেমধ্যে ছোট ছোট গ্রাম।
আজ কিন্তু দেখছি, বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে শুধু মার্বেল আর সিমেন্ট কারখানার পতাকা উড়ছে! অরণ্য উধাও করে তৈরি হচ্ছে আবাসন প্রকল্প, হোটেল, বিনোদন পার্ক।
‘‘আমরা কোণঠাসা হতে হতে এ বার বাইরে চলে যাচ্ছি। ভয় দেখানো হচ্ছে অহোরাত্র। বাড়ির বাইরে তাঁবু খাটিয়ে বসে যাচ্ছে ওরা। চাপ দিচ্ছে চলে যাওয়ার জন্য।’’ হিরানগর তহসিলে (যার অন্তর্গত রাসানা গ্রাম) গুজ্জর মুসলিম সম্প্রদায়ের কিছু পাকা ঘর রয়েছে। তারই এক বাসিন্দা ভয়ার্ত মুখে জানাচ্ছেন অস্তিত্বের সঙ্কটের কথা। গলা নামিয়ে আরও বলছেন, জমি থেকে উৎখাত করার জন্যই প্রাণ দিতে হয়েছে ৮ বছরের ফুলের মতো মেয়েটাকে। ‘‘মেয়েটির বাবার অপরাধ ছিল, তিনি হিন্দু ব্যবসায়ীর কাছ থেকে কিছু জমিবাড়ি কিনেছিলেন। উদ্দেশ্য, শীতকালের একটি বাসস্থান রাখা। সেটাই কাল হল।’’ স্থানীয় মুসলিম সমাজের বক্তব্য, ওই জমি ফেরত চাওয়া হয়েছিল। দিতে রাজি হননি ভদ্রলোক। তাই এই প্রবল প্রতিশোধ।
২০০৬ সালে অরণ্যের অধিকার সংক্রান্ত আইন গোটা দেশে বলবৎ হলেও জম্মু-কাশ্মীর সরকার তা বাস্তবায়িত করেনি। ফলে অরণ্যের আদিবাসীরা যেমন কোণঠাসা হয়েছেন, তেমন যাযাবরদের পরের প্রজন্মের থিতু হওয়ার স্বপ্নও ঘা খেয়েছে। মেহবুবা মুফতি মাঝখান থেকে জম্মুতে নিজের জনপ্রিয়তা বাড়াতে গিয়ে দু’দিক থেকেই সমর্থন হারাচ্ছেন— এমনটাই মনে করছে হিন্দু এবং মুসলমান দুই সম্প্রদায়ই। হিংসা এবং অসহিষ্ণুতা বাড়ছে।
তবে যে ঘটনা এই মেয়েটির সঙ্গে ঘটেছে, তা তো নিছক হিংসা নয়। রাজ্য পুলিশের চার্জশিটে যা বলা হয়েছে, তাকে নারকীয় নির্যাতন বললেও কম বলা হয়। কিন্তু দায় নিতে রাজি নয় হিন্দু সমাজ। তোলা হচ্ছে বিভিন্ন প্রশ্ন, যাতে রহস্য বাড়ছে বই কমছে না।
মাসের শেষে এখানকার সেশন কোর্টে শুরু হবে শুনানি। এখনও পর্যন্ত সামনে আসেনি, এমন কিছু প্রশ্নও উঠে আসতে চলেছে সেখানে। মেয়েটির পালক বাবা তাকে চেয়ে নিয়েছিলেন বোনের কাছ থেকে। কারণ তাঁর নিজের দুই মেয়েই দুর্ঘটনায় মারা যায়। কিন্তু নিজের দুই পুত্রসন্তানকে স্কুলে পড়তে পাঠালেও ওই বালিকাকে কেন খালি পায়ে পাঠানো হত পাথুরে জংলা এলাকায় ঘোড়া চরানোর কাজে? জানুয়ারির ১০ তারিখ মেয়েটি নিখোঁজ হয়। কেন ১২ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করলেন পুলিশকে জানানোর জন্য? যেদিন মন্দিরে মেয়েটিকে আটক করার কথা চার্জশিটে বলা রয়েছে, সেদিন ছিল মকরসংক্রান্তি। থইথই করছিল দু’তিনটি গ্রামের লোক। কী ভাবে তা হলে মেয়েটাকে লুকিয়ে রাখা গেল?
আদালতের শুনানিতে রহস্য হয়তো কাটবে, হয়তো কাটবে না। হয়তো দোষীর শাস্তি হবে অথবা বাড়বে ক্ষোভের রাজনীতি। হবে না শুধু একটা জিনিসই। ওই আট বছরের মেয়েটা আর ঘোড়াদের নিয়ে খেলে বেড়াবে না পাহাড়ি জঙ্গলের পথে। (শেষ)