এ ভাবেই প্রথম পাতা ফাঁকা রেখেছে বিভিন্ন সংবাদপত্র। ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত।
উপযুক্ত কারণ ছাড়াই বন্ধ সরকারি বিজ্ঞাপন। তার জেরে অভিনব প্রতিবাদ জম্মু-কাশ্মীরে। তাতে যোগ দিল রাজ্যের সমস্ত সংবাদপত্র। রবিবার প্রথম পাতা ফাঁকা রেখে কাগজ ছেপেছে তারা। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ মিছিলেরও ডাক দেওয়া হয়েছে।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামা হামলার পর থেকেই বিপত্তির সূত্রপাত বলে জানা গিয়েছে। হামলার পরদিন রাজ্যপাল সত্যপাল মালিকের নির্দেশে আচমকাই রাজ্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় দুই ইংরেজি সংবাদপত্র, গ্রেটার কাশ্মীর এবং কাশ্মীর রিডার-কে সরকারি বিজ্ঞাপন দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে খবর।
তবে কী কারণে বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দেওয়া হল, তা সবিস্তারে জানানো হয়নি। এমনকি, বিজ্ঞাপন যে আর দেওয়া হবে না, সেই মর্মে লিখিত বিবৃতিও প্রকাশ করেনি প্রশাসন। বার বার জিজ্ঞাসা সত্ত্বেও জবাব না মেলায় শেষমেশ প্রতিবাদে নামতে সম্মত হয় রাজ্যের সমস্ত সংবাদপত্রগুলি। কাশ্মীর এডিটরস গিল্ডের (কেইজি) গৃহীত প্রস্তাব অনুযায়ী রবিবার প্রথম পাতা ফাঁকা রেখে কাগজ ছাপে তারা। তাতে বলা হয়, “গ্রেটার কাশ্মীর ও কাশ্মীর রিডারের সরকারি বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কোনও কৈফেয়তও দেওয়া হয়নি। এই অবিচারের প্রতিবাদে পাতা ফাঁকা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা।”
আরও পড়ুন: ফের আকাশে বিপর্যয়, ১৫৭ জনকে নিয়ে ভেঙে পড়ল ইথিওপিয়ার বিমান
সরকারি বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দেওয়া নিয়ে এর আগে সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছিল কাশ্মীর এডিটরস গিল্ড। একটি বিবৃতি প্রকাশ করে তারা জানায়, “সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা চালাচ্ছে প্রশাসন। রাজ্যে সংবাদমাধ্যমের প্রতিষ্ঠানগুলিকে ধ্বংস করে দেওয়ার প্রচেষ্টা চলছে।” শুক্রবার এডিটরস গিল্ডের তরফে রাজ্য প্রশাসনের কাছে লিখিত জবাবও চাওয়া হয়। গিল্ডের মুখপাত্র বলেন,“পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম গণতন্ত্র ভারতে লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি তুঙ্গে। সেই পরিস্থিতিতে কাশ্মীরের দুটি গুরুত্বপূর্ণ সংবাদপত্রের সরকারি বিজ্ঞাপন বন্ধ রাখা হয়েছে। ভারতের সংবিধানে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় সংবাদমাধ্যমকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়ার কথা বলা রয়েছে। রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্ত সংবিধানের ওই ধারাকেই আঘাত করেছে।”
সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকারি বিজ্ঞাপন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে ওই দুই সংবাদপত্র। পাতার সংখ্যা কমিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছে তারা। আগে ২০ পাতার কাগজ বের করত গ্রেটার কাশ্মীর। এখন তা এসে দাঁড়িয়েছে ১২ পাতায়। কাশ্মীর রি়ডারও পাতার সংখ্যা ১৬ থেকে কমিয়ে ১২ করেছে।
গোটা ঘটনায় সত্যপাল মালিকের প্রশাসনের তীব্র সমালোচনা করেছেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা। নিজের টুইটার হ্যান্ডলে তিনি লেখেন, ‘উপত্যকার বাইরে ব্যাপারটা নিয়ে কেউ বিশেষ মাথা ঘামাচ্ছে না। এ ভাবে বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দিয়ে আদতে সংবাদমাধ্যমের গলা টিপে ধরতে চাইছে সরকার। আশাকরি কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য প্রশাসন অবিলম্বে নিজেদের অবস্থান থেকে সরে আসবে।’
ওমর আব্দুল্লার টুইট।
আরও পড়ুন: আজ বিকেলেই লোকসভা ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন
রাজ্যের আর এক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি লেখেন, ‘গ্রেটার কাশ্মীর জম্মু-কাশ্মীরের অন্যতম জনপ্রিয় সংবাদপত্র। তাদের সরকারি বিজ্ঞাপন থেকে বঞ্চিত করার সিদ্ধান্তে, সংবাদমাধ্যমের প্রতি সরকারের আচরণই আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে। বোঝা যাচ্ছে যে, ওদের গুণগান না করলেই এ ভাবে দুর্ভোগ পোহাতে হবে।’
মেহবুবা মুফতির টুইট।
যদিও এই প্রথম নয়, কেন্দ্রীয় সরকারের বিজ্ঞাপন থেকে দীর্ঘদিনই ব্রাত্য গ্রেটার কাশ্মীর। ২০০৮ সালে তাদের সরকারি বিজ্ঞাপন বন্ধ রাখে কেন্দ্রীয় সরকারের ডিরেক্টরেট অব অ্যাডভার্টাইজিং অ্যান্ড ভিসুয়াল পাবলিসিটি দফতর। ২০১৬ সালে উপত্যকায় বিজেপি-পিডিপি সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন তিনমাস বিজ্ঞাপন বন্ধ ছিল কাশ্মীর রিডারের। বিজেপি-পিডিপি জোট সরকার ভেঙে গেলে ২০১৮ সালের জুন মাসে জম্মু-কাশ্মীরে রাজ্যপাল শাসন জারি হয়। ছ’মাস পর তার মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে ডিসেম্বর মাসে চালু হয় রাষ্ট্রপতি শাসন।
(কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, গুজরাত থেকে মণিপুর - দেশের সব রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদের দেশ বিভাগে ক্লিক করুন।)