বালুচিস্তানে ভারতের ভূমিকা নিয়ে পাকিস্তানের অভিযোগকে কার্যত স্বীকার করে এক সময়ে শর্ম অল শেখে মুখ পুড়িয়েছিল মনমোহন সরকার। এক ঐতিহাসিক সমাপতনে সেই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে পাশে বসিয়ে সেই বালুচিস্তানকেই কাশ্মীরের পাল্টা অস্ত্র করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
শুক্রবার কাশ্মীর নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পাকিস্তানের নাক গলানো বরদাস্ত করা হবে না। প্রয়োজনে পাক অধিকৃত কাশ্মীর এবং বালুচিস্তানে ইসলামাবাদ যে অত্যাচার চালাচ্ছে, তা দুনিয়ার সামনে তুলে ধরা হবে। পরে বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন পাক অধিকৃত কাশ্মীর ও বালুচিস্তানের মানুষ, যাঁরা অন্য দেশে থাকেন, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। তাঁরাই গোটা বিশ্বের সামনে পাকিস্তানের নির্যাতনের কথা তুলে ধরতে পারবেন।’’
গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে কাশ্মীর অশান্ত হলেও প্রধানমন্ত্রী আগাগোড়া চুপ থাকায় চাপ বাড়াচ্ছিলেন বিরোধীরা। শুক্রবার বাদল অধিবেশন শেষ হওয়ার পরে সর্বদলীয় বৈঠকে প্রথম মুখ খুলে প্রধানমন্ত্রী বুঝিয়ে দেন, কাশ্মীর নিয়ে ভারত আক্রমণাত্মক হচ্ছে। যত দিন কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তান খোলাখুলি আক্রমণে নামেনি, ভারতও বালুচিস্তান বা পাক অধিকৃত কাশ্মীর নিয়ে প্রকাশ্যে সরব হয়নি। কিন্তু গত এক মাসে পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে। ঘরে-বাইরে চাপের মুখে দিল্লি পাল্টা চাপ বাড়াতে অস্ত্র করল পাকিস্তানের নিজেদের সন্ত্রাসকে।
কাশ্মীরে অশান্তির সুযোগ নিয়ে পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতৃত্ব রাষ্ট্রপুঞ্জ থেকে শুরু করে সর্বত্র ভারতের ‘অত্যাচার’-এর কাহিনী নিয়ে সরব হয়েছে। এ নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব বান কি মুনকে চিঠিও দেন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। ইসলামাবাদ কিছুটা চাপে পড়েছে কিছু দিন আগে কাশ্মীর থেকে লস্কর জঙ্গি বাহাদুর আলি গ্রেফতার হওয়ায়। তার জবানবন্দিতে লস্করের সঙ্গে পাক প্রশাসনের সরকারি যোগাযোগের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। তার পরেই আজ পাকিস্তানকে পাল্টা চাপে ফেলতে বালুচ-কার্ড খেলেছেন মোদী। সরকারের এই পদক্ষেপকে সমর্থন জানিয়েছে সব দলই। সূত্রের খবর, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মননোহন সিংহ বৈঠকে জানিয়েছেন, ইউপিএ সরকারের কিছু খামতি ছিল। এই সরকারেরও আছে। সে সব পূরণ করেই এগোতে হবে সব পক্ষকে।
বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর পর পথে নামে মূলত কাশ্মীরের যুব সমাজ। তাই আজ সব দলের পক্ষ থেকে অবিলম্বে যুব সমাজের কাছে বার্তা দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে দাবি তোলা হয়। তৃণমূল নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘কাশ্মীরের বয়স্ক নেতারা ক্রমশ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন। তাই যুব সমাজকে পাশে পেতে তাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলতে হবে সরকারকে।’’ তৃণমূলের ডেরেক ও’ব্রায়েনও বলেন প্রয়োজনে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যুব সমাজের কাছে বার্তা পৌঁছে দিতে হবে।
অবিলম্বে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা শুরুর জন্য সরকারকে অনুরোধ করেন সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি। তিনি একটি সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল কাশ্মীরে পাঠানোর দাবি তুললে রাজনাথ বলেন, ‘‘সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ে মুফতি সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’ শিবসেনা ছাড়া সব দলই কাশ্মীরে ছররা বন্দুকের ব্যবহার বন্ধের দাবি জানায়। কেন্দ্র আশ্বাস দিয়েছে, ছররা বন্দুকের ব্যবহার কমানোর পাশাপাশি বলপ্রয়োগের পরিবর্তে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে কাশ্মীরের চলতি সমস্যা মোকাবিলায় তৎপর হয়েছে প্রশাসন। রাজ্যের পরিকাঠামোগত উন্নতিতে ৮০ হাজার কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। সেনা ও পুলিশে কাশ্মীরি যুবকদের নিয়োগের প্রক্রিয়াও শুরু করেছে
রাজ্য সরকার।
সব মিলিয়ে উপত্যকায় ধীরে হলেও ফিরছে স্বাভাবিক অবস্থা। কিন্তু এর পরেও এ দিনই দিল্লির অস্বস্তি বাড়িয়েছে কাশ্মীরে ফের জঙ্গি তাণ্ডব। এ দিনই কুলগামের চানচুর গ্রামে দুই সশস্ত্র জঙ্গি গুলি চালিয়ে এক পুলিশ ও এক নাগরিককে খুন করেছে। গুরুতর জখম আরও দুই। জঙ্গিদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে। পাশাপাশি এ দিনই কাশ্মীরে অশান্তির সময় পুলিশের গুলিতে নিহত সাবির আহমেদ মিরের দেহ ময়নাতদন্তের জন্য খবর খুঁড়ে তোলার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। তার পরিবারের অভিযোগ, পুলিশ সে দিন বাড়িতে ঢুকে সকলের চোখের সামনে সাবিরকে গুলি করে মারে।