হাজিরা: পাটিয়ালা হাউস কোর্টে কার্তি। বৃহস্পতিবার। ছবি: পিটিআই।
‘বি স্ট্রং অ্যান্ড ব্রেভ।’
দু’হাত ধরে ছেলেকে সাহস জোগালেন বাবা। মা নলিনী চিদম্বরম আগে থেকেই এজলাসে এসে বসে ছিলেন। সিবিআই কার্তি চিদম্বরমকে আদালতে হাজির করানোর পরে চলে এলেন পি চিদম্বরমও। ছেলেকে মনের জোর রাখতে বললেন। ভরসা দিলেন, আমি এখানেই রয়েছি।
দিনের শেষে অবশ্য হতাশই হলেন মা-বাবা। বুধবার আইএনএক্স মিডিয়া দুর্নীতি মামলায় কার্তিকে গ্রেফতার করেছিল সিবিআই। কিন্তু মিলেছিল মাত্র এক দিনের হেফাজত। আজ ফের তাঁকে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে হাজির করিয়ে ১৪ দিনের জন্য হেফাজতে চাওয়া হয়। বিচারক সুনীল রানা পাঁচ দিনের সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ দেন। সকালে-বিকেলে এক ঘণ্টা করে আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করতে পারবেন কার্তি। বাড়ির তৈরি খাবার পাবেন না। তবে ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে গলায় একটি চেন ও আংটি রাখতে দেওয়া হয়েছে তাঁকে। আদালত ছাড়ার আগে কার্তি বলেন, ‘‘আমি নির্দোষ প্রমাণিত হব।’’
আজ আদালতে সিবিআইয়ের তরফে অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল তুষার মেটা দাবি করেন, সিবিআই দফতরে নিয়ে যাওয়ার আগে রুটিনমাফিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য কার্তিকে দিল্লির সফদরজঙ্গ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। চিকিৎসক শাকিল আহমেদ খান প্রশ্ন করেছিলেন, কোনও শারীরিক সমস্যা রয়েছে কি না। কার্তি কিছুই বলেননি। অথচ তার পরেই এক বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলোচনা করে কার্তিকে কার্ডিয়াক কেয়ার ইউনিটে ভর্তি করে নেওয়া হয়। সারা রাত তিনি হাসপাতালেই ছিলেন। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা নাগাদ তাঁকে ছাড়া হয়। তার পরে সিবিআই দফতরে গিয়ে আর বিশেষ জেরার সুযোগ মেলেনি। যা প্রশ্ন করা হয়েছে, সেগুলিও এড়িয়ে গিয়েছেন কার্তি।
সিবিআইয়ের পরিকল্পনা হল, কার্তিকে তাঁর চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট এস ভাস্করামনের মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা। ইডি ভাস্করামনকে আগেই গ্রেফতার করেছিল। আজ তাঁর জামিনের আবেদনও খারিজ করে দিয়েছে আদালত। সিবিআইয়ের যুক্তি, এত দিন যা প্রশ্নই করা হয়েছে, ‘ভাস্করামন জানেন’ বলে এড়িয়ে গিয়েছেন কার্তি। নিজের মেয়েকে খুনের দায়ে ধৃত আইএনএক্স কর্ণধার ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায় দাবি করেছিলেন, তিনি ও তাঁর স্বামী পিটার বিদেশি লগ্নির ছাড়পত্র জোগাড়ের জন্য তৎকালীন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। চিদম্বরমই তাঁর ছেলে কার্তির সাহায্য নিতে বলেন। কার্তি দিল্লির একটি হোটেলে দেখা করে ঘুষ চান ১০ লক্ষ ডলার। সেই বয়ানের ভিত্তিতেই গ্রেফতারি।
কার্তির আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি আদালতে অভিযোগ করেন, রাজনৈতিক কারণে গ্রেফতার করা হয়েছে কার্তিকে। অগস্টে তিনি দু’বার সিবিআইয়ের জেরার মুখোমুখি হয়েছেন। তার পরে গত ছ’মাস তাঁকে ডাকা হয়নি। কাজেই তদন্তে অসহযোগিতার প্রশ্ন উঠছে কী করে। অভিষেকের যুক্তি, আদালতের অনুমতি নিয়েই লন্ডনে গিয়েছিলেন কার্তি। ফিরেও এসেছেন। বিদেশে গা ঢাকা দেননি। তা সত্ত্বেও তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
পি চিদম্বরম ও নলিনী, দু’জনেই বিশিষ্ট আইনজীবী। দু’জনেই আজ পিছন থেকে আইনজীবীদের পরামর্শ দিয়েছেন। পৌনে চার ঘণ্টার শুনানিতে বারবারই উত্তেজনায় উঠে দাঁড়িয়েছেন কার্তি। নিজেও আইনজীবীদের ডেকে কথা বলেছেন।
সিবিআইয়ের হয়ে তুষার মেটা অভিযোগ তোলেন, ব্রিটেনে গিয়ে প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করছিলেন কার্তি। যে সব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঘুষের টাকা ঢুকেছে, সেগুলো বন্ধ করেছেন। মেটা বলেন, ‘‘কোনও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নেই। সংবিধান মেনেই তদন্ত হচ্ছে। অকাট্য প্রমাণ রয়েছে।’’ অভিষেক বলেন, ইন্দ্রাণীর বিরুদ্ধে খুনের মামলার তদন্তও সিবিআই করছে। ফলে ইন্দ্রাণীকে তারা চাপ দিয়ে বয়ান লেখাচ্ছে কি না, সেই সন্দেহ থাকছেই।