বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। - ফাইল ছবি।
বোঝা গেল, বরফ এখনও পুরোপুরি গলেনি! যে কর্তারপুর করিডরকে প্রতিবেশী দু’দেশের মানুষের সম্পর্কের সেতু বলে চিহ্নিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, তা চালুর আইনি প্রক্রিয়া শুরুর অনুষ্ঠানে হাজির থাকার পাক আমন্ত্রণ পরোক্ষে এড়িয়েই গেলেন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ।
পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী শাহ মহম্মদ কুরেশির আমন্ত্রণের জবাবে ধন্যবাদ জানিয়ে তাঁকে চিঠি লিখে সুষমা জানিয়ে দিলেন, ‘‘পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচির জন্য আমি যেতে পারছি না কর্তারপুর সাহিবে। তবে পাকিস্তানে যাচ্ছেন দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রী হরষিমরাত কউর বাদল এবং আবাসন ও নগর বিষয়ক মন্ত্রকের পূর্ণ দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরি।’’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন বিদেশমন্ত্রী নিজে না গেলেও পাক আমন্ত্রণে যে ক্যাবিনেট পর্যায়ের দুই মন্ত্রীকে পাঠানো হচ্ছে পাকিস্তানে বহু দিন পর তা একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। ইতিবাচকও আগামী দিন দু’দেশের সম্পর্কের বরফ গলার ক্ষেত্রে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন বিদেশমন্ত্রী নিজে না গেলেও পাক আমন্ত্রণে যে ক্যাবিনেট পর্যায়ের দুই মন্ত্রীকে পাঠানো হচ্ছে পাকিস্তানে বহু দিন পর তা একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। ইতিবাচকও আগামী দিন দু’দেশের সম্পর্কের বরফ গলার ক্ষেত্রে।
পঞ্জাবের গুরুদাসপুর জেলার দেরা বাবা নানক থেকে পাক-পঞ্জাবের কর্তারপুর সাহিব পর্যন্ত ওই করিডর চালু হবে আগামী বছর। বুধবার তার আইনি প্রক্রিয়া শুরুর অনুষ্ঠানে পৌরহিত্য করবেন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ওই অনুষ্ঠানে হাজির থাকার জন্য শনিবার বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন পাক বিদেশমন্ত্রী শাহ মহম্মদ কুরেশি।
আরও পড়ুন- ‘বার্লিন পাঁচিল ভাঙবে, কেউ ভেবেছিলেন? কর্তারপুর করিডরও হবে ভারত-পাক সম্পর্কের সেতু’
আরও পড়ুন- ‘পহলে মন্দির ফির সরকার’, ধর্ম সংসদে স্বস্তি নেই বিজেপিরই
পরে একটি টুইটে পাক বিদেশমন্ত্রী কুরেশি জানান, ভারতের বিদেশমন্ত্রী ছাড়াও ওই অনুষ্ঠানে হাজির থাকার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরেন্দ্র সিংহ ও কংগ্রেস নেতা প্রাক্তন ক্রিকেটার নভজ্যোত সিংহ সিধুকে। সিধু গতকালই জানিয়ে দেন, তিনি যাচ্ছেন কর্তারপুরের ওই অনুষ্ঠানে।
কর্তারপুর সাহিব একটি ঐতিহাসিক স্থান। শিখদের উপাসনার জায়গা। জনশ্রুতি, জীবনের শেষ ১৮টি বছর গুরু নানক কাটিয়েছিলেন এই কর্তারপুরের দরবার সাহিবেই। দেশভাগের পর যা এখন পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশের নারওয়াল জেলায়, রবি নদীর তীরে। উপাসনার জন্য ফিবছর প্রচুর শিখ সীমান্ত পেরিয়ে যান পাক-পঞ্জাবের কর্তারপুর সাহিবে। তাই ভারত-পাক সীমান্তের ওই এলাকায়, পঞ্জাবের গুরুদাসপুর জেলার দেরা বাবা নানক থেকে পাক-পঞ্জাবের কর্তারপুরে দরবার সাহিব পর্যন্ত একটি করিডর বানানোর দাবি ছিল দীর্ঘ দিনের। যার দূরত্ব চার কিলোমিটার।
দেরা বাবা নানক থেকে ভারত-পাক সীমান্ত পর্যন্ত ওই করিডর বানানোর প্রস্তাবটি গত বৃহস্পতিবার অনুমোদিত হয় কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেটে। একই ভাবে আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে গুরুদ্বার কর্তারপুর সাহিব পর্যন্ত একটি করিডর দ্রুত বানানোর জন্য ওই দিনই বিদেশ মন্ত্রক আনুষ্ঠানিক ভাবে আর্জি জানায় পাক সরকারকে।
ইসলামাবাদও জানিয়ে দিয়েছে, আগামী বছর, গুরু নানকের ৫৫০ তম জন্মবর্ষে, আনুষ্ঠানিক ভাবে ওই করিডর চালু হয়ে যাবে।
কেন্দ্রে এনডিএ-র অন্যতম শরিক শিরোমণি অকালি দলের সভাপতি সুখবীর সিংহ বাদলের দিল্লির বাড়িতে শনিবার গুরুপরব অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কর্তারপুর সাহিব করিডরকে বার্লিন পাঁচিলের সঙ্গে তুলনা করেন। তিনি বলেন, ‘‘কেউ কি কোনও দিন ভাবতে পেরেছিলেন, বার্লিনের পাঁচিল ভেঙে যাবে? মিলেমিশে একাকার হয়ে যাবে পূর্ব ও পশ্চিম, দুই জার্মানি? তেমনই কর্তারপুর সাহিব করিডরও দু’দেশের মধ্যে নিছক একটি করিডর হয়ে থাকবে না। তা দু’দেশের মানুষের মধ্যে সম্পর্কের সেতু হয়ে উঠবে।’’
যা দিয়ে জার্মানিকে দু’টুকরো করা হয়েছিল, সেই বার্লিন পাঁচিলের আয়ু ছিল ২৮ বছর। আর দেশভাগের পর থেকে টানা ৭১ বছর পঞ্জাবের শিখদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে গুরু নানকের পছন্দের কর্তারপুর সাহিব।