Kailash Vijayvargiya

চিঁড়ে দিয়ে বাংলাদেশি ‘চিনলেন’ বিজয়বর্গীয়, শুরু বিতর্ক

খাদ্যাভ্যাস দেখে বাংলাদেশি চেনা সংক্রান্ত মন্তব্যের জেরে সর্বস্তরে সমালোচনার মুখে পড়েছেন বিজয়বর্গীয়।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০২০ ০২:৪৬
Share:

—ফাইল চিত্র।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কিছু দিন আগে বলেছিলেন, পোশাক দেখে বোঝা যায়, কারা হিংসা ছড়াচ্ছে। ইঙ্গিতটা যে মুসলিমদের দিকেই ছিল, তা বুঝতে কারও অসুবিধা হয়নি। এ বার তাঁর দলের সাধারণ সম্পাদক তথা পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির দায়িত্বপ্রাপ্ত কৈলাস বিজয়বর্গীয় বললেন, তাঁর বাড়িতে কাজ করতে আসা রাজমিস্ত্রিরা পোহা (চিঁড়ে দিয়ে তৈরি) খাচ্ছিলেন, তা দেখে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, তাঁরা বাংলাদেশি, অনুপ্রবেশকারী।

Advertisement

খাদ্যাভ্যাস দেখে বাংলাদেশি চেনা সংক্রান্ত মন্তব্যের জেরে সর্বস্তরে সমালোচনার মুখে পড়েছেন বিজয়বর্গীয়। বিজেপিকে নিশানা করতে সময় নষ্ট করেনি কংগ্রেস। দলের টুইটার হ্যান্ডলে মোদীর ছবি দিয়ে তারা লিখেছে, ‘‘প্রধানমন্ত্রী পোহা এবং খিচুড়ি পছন্দ করেন।’’ সরগরম বঙ্গ রাজনীতিও। বিজয়বর্গীয়ের মন্তব্যের সমালোচনায় সরব তৃণমূল, সিপিএম, কংগ্রেস। বেগতিক দেখে বিজয়বর্গীয়ের মন্তব্য লঘু করার প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকরের মন্তব্য, ‘‘আমি তো পোহা ভাল খাই। আপনাদেরও খাওয়াতে পারি।’’

বিতর্কের সূত্রপাত গত কাল মধ্যপ্রদেশের ইনদওরে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) সমর্থনে একটি সেমিনারে বিজয়বর্গীয়ের বক্তব্যকে কেন্দ্র করে। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের বাড়িতে একটি নতুন ঘর হচ্ছে। তাই মিস্ত্রিরা কাজ করতে এসেছিলেন। ওঁদের মধ্যে ছ’সাত জন পোহা খাচ্ছিলেন। ওঁদের পোহা খাওয়া দেখে আমার সন্দেহ হচ্ছিল, ওঁরা বাংলাদেশ থেকে এসেছেন। সন্দেহ হচ্ছিল বলে দু’দিন পরে কাজ বন্ধ করে দিয়েছি।’’ এখানেই শেষ নয়, বিজেপির সাধারণ সম্পাদক জানিয়েছেন, ওই খাবার দেখে তিনি বাড়ি তৈরির ঠিকাদার এবং সুপারভাইজারের সঙ্গেও কথা বলেছিলেন। জানতে চেয়েছিলেন, রাজমিস্ত্রিরা বাংলাদেশি কি না। তাঁর কথায়, ‘‘এখনও পুলিশে কিছু জানাইনি। বিষয়টি জানালাম, যাতে সকলে সতর্ক থাকেন। গত দেড় বছর ধরেই বাংলাদেশি জঙ্গিদের চোখে চোখে রাখি। আমি যখন বাড়ির বাইরে পা রাখি ছ’জন নিরাপত্তারক্ষীকে সব সময় পাহারা দিতে হয়।”

Advertisement

আরও পড়ুন: সাম্প্রদায়িক টুইট করে বিপাকে বিজেপি প্রার্থী

কংগ্রেসের অভিযোগ, খাদ্যাভ্যাস দেখে এ বার মানুষ চেনার চেষ্টা চলছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে মানুষের মনে ভয় ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কংগ্রেসের সুস্মিতা দেব বলেন, ‘‘আমাদের অভিযোগ আরও এক বার সত্যি প্রমাণিত হল। খাওয়াদাওয়া, পোশাক-পরিচ্ছদ দেখে মানুষকে চিহ্নিত করতে চাইছে সরকার। দলের উপর মহলের নির্দেশ ছাড়া এমন মন্তব্য করেননি ওই বিজেপি নেতা।’’

তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিজেপির কেউই কি এ দেশের অভ্যাসগত বৈচিত্র্যের কথা জানেন? দেশ সম্পর্কে ধারণাই নেই। শুধু পেশিশক্তি আর অর্থশক্তি দিয়ে ক্ষমতা দখলে নজর!’’ বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের আব্দুল মান্নানের কথায়, ‘‘পুজো-পার্বনে চিঁড়ে দিয়ে দধিকর্মার রীতি আছে, সেটা জানেন না! প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও তো বেলুড়ে এসে প্রসাদি পোহা খেয়ে গিয়েছেন। বিজয়বর্গীয়েরা কোন জঙ্গলে থাকেন, কে জানে!’’ বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘প্রধানমন্ত্রী পোশাক দেখে, বিজয়বর্গীয় খাবার দেখে মানুষ চিনে ফেলেন! আখলাকের মতো কারও ফ্রিজে কী আছে, তা দেখে চিনে ফেলে আরএসএস। মধ্যযুগীয়, অসভ্য দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সঙ্ঘ, বিজেপি দেশটাকে পিছনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement