কে হেমলতা
ভাঙতে ভাঙতে সংগঠনের অস্তিত্বই প্রায় সঙ্কটে। মরণকালে মহিলা নাম জপে বাঁচার মরিয়া চেষ্টায় নামল সিটু!
সিপিএমের শ্রমিক সংগঠনের নতুন সর্বভারতীয় সভানেত্রী হিসাবে দায়িত্ব পেলেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কে হেমলতা। সংগঠনের সাড়ে চার দশকের ইতিহাসে সভাপতি পদে কোনও মহিলা মুখের আগমন এই প্রথম। বাম রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের একাংশ অবশ্য বলছেন, আরও নানা বিষয়ের মতোই শ্রমিক সংগঠনে মহিলা মুখকে মর্যাদা দিতে অস্বাভাবিক দেরি করল সিপিএম। সংগঠনই যখন ক্ষয়িষ্ণু, একের পর এক নির্বাচনে বিপর্যয় ঘটছে বামেদের, সেই সময়ে সভাপতি পদে মহিলা থাকলেন না পুরুষ— তা দিয়ে বিরাট কিছু এসে যাওয়ার কথা নয়!
যদিও সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেতারা দাবি করছেন, বাংলার দৃষ্টিকোণ থেকে গোটা বিষয়টা বিচার করতে যাওয়া ঠিক নয়। বাংলায় সিটুর মতো বাম সংগঠনকে অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে থাকতে হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু ক্ষমতায় থাকা কেরল-ত্রিপুরা বা তার বাইরে তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্নাটক, মহারাষ্ট্রের মতো বেশ কিছু রাজ্যে সিটুর হাল এত করুণ নয়। মহিলা মুখকে সামনে রাখার সিদ্ধান্ত সেখানে বাড়তি টনিকের কাজ করতেই পারে। তবে বাংলায় মৃতপ্রায় রোগীকে বাঁচিয়ে তুলতে সর্বভারতীয় নেতৃত্বে মহিলা মুখ আনার দাওয়াই আদৌ কৌনও সঞ্জীবনীর কাজ করবে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান সিপিএম নেতাদের বড় অংশই!
পুরীতে সিটুর ১৫তম সর্বভারতীয় সম্মেলন থেকে বুধবার নতুন সভানেত্রী পদে নির্বাচিত হয়েছেন হেমলতা। মহিলা সমিতির গণ্ডির বাইরে সিপিএমের মহিলা মুখ বলতে বহু দিন ধরেই জনমানসে একটাই নাম পরিচিত— বৃন্দা কারাট। দলের বিগত বিশাখাপত্তনম পার্টি কংগ্রেসে অবশ্য সুভাষিণী আলি জায়গা পেয়েছিলেন পলিটব্যুরোয়। এ বার শ্রমিক সংগঠনের অন্যতম শীর্ষ পদে হেমলতা দায়িত্ব পাওয়ায় সর্বভারতীয় স্তরে সিপিএমের উল্লেখযোগ্য মহিলা মুখ বাড়়বে বলেই মনে করা হচ্ছে। সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একাংশের মতে, দলে মহিলা ব্রিগেড মানেই শুধু বৃন্দা, এই ছক ভাঙার লক্ষ্যে কৌশলগত ভাবেই সীতারাম ইয়েচুরিরা হেমলতাকে দায়িত্ব দিয়েছেন।
অন্ধ্রপ্রদেশের নেল্লোর থেকে ডাক্তারি পাশ করে মছলিপট্টনমে একটি হাসপাতাল চালাতেন হেমলতা। সিটুর তরফে অল ইন্ডিয়া কো-অর্ডিনেশন কমিটি অফ ওয়ার্কিং উইমেন-এর আহ্বায়কের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। সেখান থেকে গোটা সংগঠনের দায়িত্ব পাওয়াকে তিনি সিপিএমে মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধির চিহ্ন হিসাবেই দেখছেন। হেমলতার কথায়, “এই সম্মেলন আমাকে গুরুদায়িত্ব দিয়েছে। সব রকম ভাবে চেষ্টা করব দায়িত্বের যোগ্য হয়ে ওঠার। মহিলাদের লড়াই শ্রমিক শ্রেণির বৃহত্তর সংগ্রামের বাইরে তো নয়। তবে মহিলা শ্রমিকদের নিজস্ব লড়়াইয়ের পাশে থাকাও আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।