ফাইল চিত্র
বেনজির রায় ঘোষণা করল সুপ্রিম কোর্ট। আদালতের নির্দেশ অবমাননার দায়ে বিচারপতি চিন্নাস্বামী কারনানকে ছয় মাসের কারাদণ্ডের নির্দেশ দিল দেশের সর্বোচ্চ আদালত। স্বাধীন ভারতে এর আগে কর্মরত কোনও বিচারপতিকে কারাদণ্ডের সাজা শোনানোর নজির নেই। অবিলম্বে বিচারপতি কারনানকে গ্রেফতার করা হোক, পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের ডিজিকে এমনই নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।।
সম্প্রতি বিচারপতি কারনানের মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি জেএস খেহরের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের ডিভিশন বেঞ্চ এই নির্দেশ দেয়। ৮ মে-র মধ্যে সেই পরীক্ষার রিপোর্টও আদালতে পেশ করার কথা ছিল। কিন্তু কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সিএস কারনান সেই পরীক্ষা করাতে অস্বীকার করেন। উল্টে সোমবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি-সহ মোট ৮ বিচারপতিকে ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের সাজা শোনান তিনি। তফসিলি জাতি/উপজাতিদের উপর অত্যাচার প্রতিরোধ আইনের আওতায় তিনি সুপ্রিম কোর্টের ওই বিচারপতিদের তিনি কারাদণ্ড দিয়েছেন বলে বিচারপতি কারনান জানান। তবে সুপ্রিম কোর্ট আগেই জানিয়েছিল, গত ৮ ফেব্রুয়ারির পর কারনানের দেওয়া সব নির্দেশ গুরুত্বহীন।
আরও পড়ুন: সুপ্রিম কোর্টের ৮ বিচারপতিকে কারাদণ্ড দিলেন কারনান!
সুপ্রিম কোর্টের সামনে সাংবাদিক সম্মেলনে কারনান। ফাইল চিত্র
মাদ্রাজ হাইকোর্ট থেকে কলকাতা হাইকোর্টে বদলি হওয়ার পর, সেই বদলির নির্দেশে স্থগিতাদেশ দিয়ে শিরোনামে এসেছিলেন বিচারপতি কারনান। তার পর বিচারবিভাগে দুর্নীতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে তিনি একটি চিঠি লেখেন। প্রথা ভেঙে এ ভাবে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে বিচারবিভাগের নিন্দা করার জেরেই বিচারপতি কারনানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা হয়। সুপ্রিম কোর্ট বিচারপতি কারনানকে কলকাতা হাইকোর্টের বিচার এবং প্রশাসনিক কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়। বিচারপতি কারনানের জিম্মায় থাকা বিচার ও প্রশাসনিক বিষয়ের সব ফাইল কলকাতা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে পাঠিয়ে দেওয়ারও নির্দেশ দেয় দেশের শীর্ষ আদালত। কারনানের বিচারবিভাগীয় ও প্রশাসনিক দায়িত্ব সাময়িক ভাবে কেড়ে নেওয়া হয়। তবে বিচারপতি কারনান সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে সঙ্ঘাতের পথই বেছে নিয়েছেন। সোমবার তিনি দেশের প্রধান বিচারপতি-সহ সুপ্রিম কোর্টের মোট ৮ বিচারপতির পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডও ঘোষণা করেন। তবে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, বিচারপতি কারনানের রায় এখন মূল্যহীন। তাই প্রধান বিচারপতি এবং সুপ্রিম কোর্টের অন্য বিচারপতিদের জেলে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু যে ভাবে বার বার দেশের শীর্ষ আদালতকে বিচারপতি কারনান অগ্রাহ্য করছেন, তা গুরুতর আদালত অবমাননার সামিল বলে সুপ্রিম কোর্ট মনে করছে। আদলত অবমাননার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করেই তাঁকে ছ’মাসের জন্য জেলে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।