জোশীমঠের একটি জায়গায় নেমেছে ধস। ফাইল চিত্র।
জোশীমঠের বিপর্যয়ে ইতিমধ্যেই ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন সেখানকার ৬০০টি পরিবার। রবিবারও পাহাড়ি এই জনপদটির বেশ কিছু বাড়ি, হোটেলে নতুন করে ফাটল দেখা গিয়েছে। উত্তরাখণ্ড সরকার নোটিস দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে, উত্তরাখণ্ড আর বসবাসের উপযোগী নয়। তবে বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন শুধু জোশীমঠই নয়, বিপদ লুকিয়ে রয়েছে নৈনিতাল কিংবা উত্তর কাশীর মতো উত্তরাখণ্ডের অন্য শহরগুলিতেও।
জোশীমঠের এই ভূবিপর্যয়ের সম্ভাব্য কারণ হিসেবে যে দিকগুলি উঠে আসছে, সেগুলির মধ্যে যেমন মানুষের ভূমিকা রয়েছে, তেমনই রয়েছে প্রকৃতির ভূমিকাও। ভূতত্ত্ববিদরা জানাচ্ছেন, জোশীমঠের ভিত ক্রমশ দুর্বল হচ্ছিল। তারপরেও ভারী নির্মাণকার্য চালিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। সাম্প্রতিক কয়েকটি বন্যা এবং অতিবৃষ্টিতে মারাত্মক পরিমাণে ভূমিক্ষয়কেও এই বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন তাঁরা। তবে আসল যে কারণটি এই বিপর্যয়ের নেপথ্য রয়েছে, তা হল উত্তরাখণ্ড-সহ হিমালয়ের অধিকাংশ অঞ্চলই ক্রমশ ঢুকে যাচ্ছে মাটির তলায়।
উত্তরাখণ্ডের নীচেই আছে বড় একটি ফাটল, ভূগোলের পরিভাষায় যাকে চ্যুতি বলা হয়। আসলে এই চ্যুতি হল পৃথিবীর নীচে থাকা একাধিক বা অসংখ্য পাতের সংযোগস্থল। উত্তরাখণ্ডের নীচে যে চ্যুতিটি, সেই চ্যুতিরেখা বরাবর ভারতীয় পাত ক্রমশ ইউরেশিয়ান পাতের নীচে ঢুকে যাচ্ছে। এই ভূআন্দোলনের কারণেই এমন বিপর্যয় আরও ঘটতে পারে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
উত্তরাখণ্ডের কুমায়ুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্বের অধ্যাপক বাহাদুর সিংহ কোটালিয়ার মতে, এমনটা যে হতে পারে তা প্রায় দু’দশক আগেই তাঁরা সরকারকে জানিয়েছিলেন। কিন্তু সরকার তারপরেও সতর্কতামূলক পদক্ষেপ করেনি। এ প্রসঙ্গেই তাঁর মন্তব্য, “সরকারের বোঝা উচিত যে প্রকৃতির সঙ্গে লড়া সম্ভব নয়।” এ প্রসঙ্গেই তিনি জানিয়েছেন নৈনিতালে পরবেশবিধিকে উড়িয়ে বড় বড় হোটেল তৈরি করা হচ্ছে। কিন্তু মাটির তলা ক্রমশ আলগা হচ্ছে বলে দাবি তাঁর। বিপর্যয়ের সম্ভাবনা প্রসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, যে কোনও দিন নৈনিতাল কিংবা উত্তরকাশীতেও বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। কিন্তু এগুলোর কোনও পূর্বাভাস দেওয়া যায় না।