মুখে কুলুপ লালুর

সাহাবুদ্দিন নিয়ে সুর চড়াচ্ছে জেডিইউ

সিওয়ানের ‘সাহাব’কে নিয়ে তিক্ততা বাড়ছে সরকারের দুই প্রধান জোট শরিক আরজেডি-জেডিইউয়ের। সিওয়ানের ‘বাহুবলী’ আরজেডি নেতা মহম্মদ সাহাবুদ্দিন জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে নীতীশ কুমারকে ‘পাকেচক্রে মুখ্যমন্ত্রী’ বলে আক্রমণ করেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পটনা শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:০২
Share:

ক্রাইম কন্ট্রোল অ্যাক্টে সাহাবুদ্দিনকে জেলে পোরার দাবি নিয়ে বিহারের রাজ্যপাল রামনাথ কোবিন্দকে স্মারকলিপি দিয়ে রাজভবন থেকে বেরিয়ে আসছেন রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। সোমবার। ছবি: পিটিআই

সিওয়ানের ‘সাহাব’কে নিয়ে তিক্ততা বাড়ছে সরকারের দুই প্রধান জোট শরিক আরজেডি-জেডিইউয়ের। সিওয়ানের ‘বাহুবলী’ আরজেডি নেতা মহম্মদ সাহাবুদ্দিন জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে নীতীশ কুমারকে ‘পাকেচক্রে মুখ্যমন্ত্রী’ বলে আক্রমণ করেন। তার পর থেকেই দু’দলের লড়াই শুরু হয়েছে। সাহাবুদ্দিনকে জেল থেকে ছাড়ার সময়ে হাজির থাকার জন্য আজ জেডিইউ-এর বেলহরের বিধায়ক গিরিধারী যাদবকে শো-কজ করা হয়েছে। পাশাপাশি আরজেডি-র সহ-সভাপতি রঘুবংশ প্রসাদ সিংহের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেডিইউয়ের তরফে সরকারি ভাবে লালু প্রসাদের কাছে আর্জি জানানো হয়েছে। নীতীশকে মুখ্যমন্ত্রী করা নিয়ে সাহাবুদ্দিনের বক্তব্যকে সমর্থন করার জন্যই তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন করেছে জেডিইউ। তবে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি এ দিনই রাজ্যপালের দ্বারস্থ হয়ে ‘অপরাধ নিয়ন্ত্রণ আইনে’ সাহাবুদ্দিনকে আটকে রাখার দাবি তুলেছে।

Advertisement

জামিনে মুক্ত হয়ে জেলের বাইরে আসার পরেই সাহাবুদ্দিনের একের পর এক বক্তব্যে বিহারের শাসক মহাজোটের দুই দলের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। আরজেডি নেতা রঘুবংশপ্রসাদ সিংহ বা তসলিমুদ্দিনেরা এত দিন ধরে নীতীশ কুমারের বিরুদ্ধে সরব হচ্ছিলেন। কিন্তু লালু প্রসাদ বা তাঁর পরিবারের সদস্যদের ছাড়া অন্য কাউকেই গুরুত্ব দিচ্ছিল না জেডিইউ। এরই মধ্যে সাহাবুদ্দিন জেল থেকে ছাড়া পেয়ে নীতীশ কুমারকে ‘পাকেচক্রে মুখ্যমন্ত্রী’ বলেন। নীতীশের মদ বিরোধী আইনেরও তীব্র সমালোচনা করেন সাহাবুদ্দিন। তাঁকে সমর্থন করেন রঘুবংশ।

নীতীশ এত দিন রঘুবংশ প্রসাদ, তসলিমুদ্দিন-সহ আরজেডির কোনও নেতার সমালোচনার জবাব দেননি। কার্যত বিতর্ক এড়িয়ে চলতেই পারদর্শী নীতীশ। সেই নীতীশই সাহাবুদ্দিনের বক্তব্য নিয়ে মুখ খুলে বিতর্ক উস্কে দেন। সরব হন জেডিইউ নেতারাও। তবে গোটা বিষয়টি নিয়ে লালু বা তাঁর পরিবারের কেউই এখনও কোনও মন্তব্য করেননি। জেডিইউ নেতাদের ক্ষোভ, সব জেনেও চুপ করে রয়েছেন আরজেডি সভাপতি। শনিবারই লালু পটনা ছেড়েছেন। উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টির নির্বাচনী প্রচারে তিনি হাজির থাকবেন বলে জানা গিয়েছে। দিল্লিতে এ নিয়ে মুলায়ম সিংহের সঙ্গে বৈঠকও করছেন। তাঁর দলের বাকি নেতারাও মুখে তালা দিয়েছেন। তবে ফের মুখ খুলে রঘুবংশ বলেছেন, ‘‘বিহারের সাধারণ মানুষের মনের কথা আমি বলে থাকি। মহাজোটের এমন কোনও ফোরাম নেই যেখানে তা বলা যায়। তাই মিডিয়ায় বলতে হয়। জেডিইউয়ের নেতারাও তো মিডিয়াতে নানা কথা বলেন। এতে দোষের কী আছে!’’

Advertisement

এ দিন সকালে পটনায় মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন ১ অ্যানে মার্গে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল এবং সহকারী অ্যাডভোকেট জেনারেলের সঙ্গে বৈঠক করেন নীতীশ। সরকারি তরফে ওই বৈঠককে রুটিনমাফিক বলা হলেও বিশেষজ্ঞদের মতে, সাহাবুদ্দিনের বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ করা নিয়েই আলোচনা হয়েছে। তবে কেউই এ নিয়ে মুখ খোলেননি। ওই বৈঠকের পরেই জেডিইউয়ের রাজ্য সভাপতি বশিষ্ঠনারায়ণ সিংহ প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে আলোচনা করেন বিদ্যুৎমন্ত্রী বিজেন্দ্র যাদব এবং সেচ ও জলসম্পদ মন্ত্রী রাজীব রঞ্জন ওরফে লালন সিংহের সঙ্গে। পরে জেডিইউ দফতরে সাংবাদিক সম্মেলন করেন বিজেন্দ্র এবং লালন। দু’জনেই আরজেডির কাছে রঘুবংশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। তখনই বেলহরের বিধায়ককে শো-কজ করার কথা বলা হয়। শো-কজ নিয়ে গিরিধারীর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

সূত্রের খবর, লালুর চাপেই সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে কিছুটা নিষ্ক্রিয় হয়েছিলেন নীতীশ। কেন না নীতীশের চাপেই সাহাবুদ্দিনের পরিবারের কোনও সদস্যকে বিধানসভা, বিধান পরিষদ বা রাজ্যসভায় পাঠাননি লালু। কিন্তু জামিন পাওয়ার পরে সাহাবুদ্দিন বলেছেন, ‘‘২৬ বছর ধরে আমি যেমন ছিলাম, তেমনই থাকব। বদলে যাওয়ার কোনও প্রশ্ন নেই।’’ এর পরেই কিছুটা কড়া হতে চাইছে জেডিইউ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement