ব্যবধান দু’দশকের। আবার মিলে গেল জনতা পরিবার।
মুলায়ম সিংহের সমাজবাদী পার্টি, শরদ যাদব, নীতীশ কুমারদের সংযুক্ত জনতা দল, লালুপ্রসাদ যাদবের রাষ্ট্রীয় জনতা দল, দেবগৌড়ার ধর্মনিরপেক্ষ জনতা দল, ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল লোকদল ও সমাজবাদী জনতা পার্টির মতো ছয়টি দল এক হয়ে গিয়েছে। নতুন দলের চেয়ারম্যান মুলায়ম সিংহ। মুলায়মকে পাশে নিয়েই দিল্লিতে আজ এই ঘোষণা করেছেন শরদ যাদব। নতুন দলের নাম, প্রতীক নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ছয় সদস্যের কমিটি গড়া হয়েছে।
যে দলগুলি এক হচ্ছে, তার মধ্যে বিহার-উত্তরপ্রদেশের শাসকরা থাকায় বিষয়টি রাজনৈতিক গুরুত্ব পাচ্ছে। বিজেপি বিরোধী এই সমীকরণ নরেন্দ্র মোদীর সামনে একটি চ্যালেঞ্জ। ডিসেম্বরেই সাবেক জনতা দলের মিলনের কথা শুরু হয়েছে। আজ সেই প্রক্রিয়াই অনেকটা এগিয়েছে। প্রাথমিক ভাবে স্থির হয়েছে নতুন দলের জন্য, সমাজবাদী জনতা দল অথবা সমাজবাদী জনতা পার্টি—এই দুইয়ের মধ্যে একটি নাম বাছা হবে। নতুন দলের প্রতীক হিসেবে জনতা দলের পুরনো প্রতীক ‘চাকা’-কেই ফেরানোর কথা ভাবা হচ্ছে। তবে জটিলতাও আছে। কেননা, নতুন দলের পতাকা হিসেবে সমাজবাদী পার্টির পতাকা এবং তাদের বাই সাইকেল প্রতীককে চাইছেন মুলায়ম। প্রতিটি দলই তাদের প্রতীক অক্ষুন্ন রাখতে চাইছে। আরজেডি লন্ঠন, জে়ডিইউ তির চিহ্ন ছাড়তে নারাজ। দলগুলির বক্তব্য অনেেকই প্রতীক দেখে ভোট দেন। নতুন প্রতীক হলে বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে। তবে লালুপ্রসাদ জানান, এ নিয়ে কোনও বিরোধ নেই। শীঘ্রই ঐকমত্যে পৌঁছনো সম্ভব হবে।
জনতা পরিবারের নতুন দলের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ বিহার বিধানসভার ভোট। মূলত একে সামনে রেখেই এক হওয়ার পথে এগোলেন নীতীশ-লালুরা। যদিও এই দুই শক্তি এক হয়ে আগেই বিজেপিকে পটনার ক্ষমতা থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে। মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে প্রথমে নীতীশের সরে যাওয়া এবং পরে জিতনরাম মাঁজিকে ওই পদ থেকে সরানোর সময়েও একজোট ছিলেন দুই নেতা। ফলে বিজেপির পক্ষে বিহারে কর্তত্ব প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়নি।
জনতা পরিবারের একজোট হওয়াকে প্রকাশ্যে গুরুত্ব দিতে চাইছে না বিজেপি। কালই পটনার গাঁধী ময়দানে অমিত শাহ কটাক্ষ করেছিলেন, ‘‘শূন্যের সঙ্গে শূন্য যোগ করলে বড় শূন্যই হয়।’’ আজ যন্তরমন্তরে জনতা-জমায়েত প্রসঙ্গে বিহার বিজেপি নেতা সুশীল মোদীর ব্যাখ্যা, ‘‘ওরা আগেও এক হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, ব্যর্থ হয়েছেন। এ বারেও তেমনই হবে।’’ তাঁর যুক্তি, ‘‘আরজেডি, সপা ওয়ান ম্যান শো চলে! লালু বা মুলায়মের মতো নেতারা একে অপরকে জায়গা ছাড়তে রাজি নন। জোটের কোনও প্রভাব বিহারের ভোটে পড়বে না।’’
বিহার ভোটের আগে এই আঞ্চলিক উত্থান বিজেপিকে কতটা সমস্যায় ফেলবে তা সময়ই বলবে। কিন্তু রাজনীতিকদের বক্তব্য, রামমনোহর লোহিয়ার শিষ্যদের এমন উদ্যোগ আগেও দেখা গিয়েছে। জরুরি অবস্থার বিরুদ্ধে ইন্দিরা গাঁধীর মোকাবিলায় হাত মিলিয়েছিল বিভিন্ন বিরোধী দল। জয়প্রকাশ নারায়ণের অনুপ্রেরণায় তৈরি হয় জনতা পার্টি। তবে সেখানে সমাজবাদী নেতাদের সঙ্গে ছিলেন বাজপেয়ী আডবাণীর ভারতীয় জনসঙ্ঘও। রাজনীতির নিয়মে এখন সেই বন্ধুই হয়েছে শত্রু।
লোকসভা ভোটে মোদী হাওয়ায় ছত্রখান হওয়ার পর ছ’মাস একজোট হওয়ার কথা চলছিল লালু-মুলায়ম, নীতীশদের মধ্যে। আগে মুলায়মের ভবনে মধ্যাহ্নভোজে নেতারা মিলিত হন। বিহার ভোটের আগে এই জোটকে গুরুত্বপূর্ণ বলেও মনে করা হচ্ছে। কেননা, লোকসভা ভোটে মোদী-হাওয়া সত্ত্বেও জেডি(ইউ) এবং আরজেডি-র যৌথ ভোট শতাংশ বিজেপির থেকে বেশি ছিল। যদিও সেই অনুযায়ী আসন মেলেনি। এ বার তাদের সঙ্গে সপা হাত মেলালে, বিজেপির রক্তচাপ নিঃসন্দেহে বাড়বে।