অভিযুক্ত অধ্যাপক মহম্মদ তাজউদ্দিন। ছবি: এএনআই।
ভগৎ সিংহকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য অধ্যাপকের। তাই নিয়ে উত্তাল জম্মু বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর। সেখানে বিক্ষোভে সামিল হয়েছে পড়ুয়াদের দু’টি দল। তাদের মধ্যে এক পক্ষ অভিযুক্ত অধ্যাপককে বহিষ্কারের দাবি তুলছে। অন্য পক্ষ আবার তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে বিষয়টি খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তার জন্য বিশেষ তদন্ত কমিটি গড়া হয়েছে। যতদিন না তাদের রিপোর্ট জমা পড়ছে, ততদিন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে পারবেন না অভিযুক্ত ওই অধ্যাপক।
বিতর্কের সূত্রপাত বৃহস্পতিবার। জম্মু বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান পড়ান মহম্মদ তাজউদ্দিন। ওইদিনও ক্লাসে ঢুকে পড়াতে শুরু করেন তিনি। তখনই নাকি ভগৎ সিংহকে সন্ত্রাসবাদী বলে উল্লেখ করেন। যাতে চটে যান পড়ুয়াদের একাংশ। মুখের উপর তাঁকে কিছু না বললেও, ক্লাস শেষ হওয়ার বেশ কিছু ক্ষণ পর উপাচার্য মনোজ কে ধরের সঙ্গে দেখা করেন তাঁরা। গোটা ঘটনাসবিস্তার জানান। প্রমাণস্বরূপ জমা দেন ২৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিয়োর (এই ভিডিয়োর সত্যতা আনন্দবাজার যাচাই করেনি) সিডি। তাতে ভগৎ সিংহকে সন্ত্রাসবাদী বলতে শোনা যায় ওই অধ্যাপককে। শুধু উপাচার্যের হাতে ভিডিয়োটি তুলে দিয়েই ক্ষান্ত হননি তাঁরা। সোশ্যাল মিডিয়াতেও সেটি ছড়িয়ে দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া এবং বিজেপির ছাত্র সংগঠনএবিভিপি-র রাজ্য সম্পাদকদীপক গুপ্ত। তিনি লেখেন, ‘‘আফজল গুরু, আজমল কাসভ অথবা হাফিজ সঈদের নামও তো নিতে পারতেন! তা না করে ভগৎ সিংহকে কেন সন্ত্রাসবাদী বলতে গেলেন?’’
বিষয়টি নিয়ে সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে সাক্ষাৎকার দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র বিনয় থুসু। তিনি বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উপাচার্য মনোজ কে ধরের সঙ্গে দেখা করেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের পড়ুয়ারা। অধ্যাপক তাজউদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান তাঁরা। বিষয়টি জানতে পেরে তড়িঘড়ি পদক্ষেপ করেন ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ। ওইদিনই ডিন কেশব শর্মার নেতৃত্বে ৬ সদস্যের বিশেষ তদন্ত কমিটি গড়া হয়। ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে ওই কমিটিকে। পরবর্তী আদেশ না মেলা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে পারবেন না উনি।’’
বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া পেজে ছড়িয়ে পড়েছে এই ভিডিয়োটি।
আরও পড়ুন: মোদীর আমলে কিছুই হয়নি, দায়িত্ব নিয়েই একান্ত সাক্ষাৎকারে বললেন আজহার
আরও পড়ুন: বাংলার আকাশে মার্কিন বায়ুসেনা, সীমান্ত মাত্র ১৫ মিনিট, রক্তচাপ বাড়ছে বেজিংয়ের
অধ্যাপক তাজউদ্দিনকে অবিলম্বে বহিষ্কার করতে হবে বলে পড়ুয়াদের একাংশ ইতিমধ্যেই দাবি তুলেছেন। তবে পড়াতে পড়াতে তাঁর মুখ দিয়ে যা বেরিয়ে গিয়েছে, তা নিয়ে যে এতবড় ঝামেলা হবে তা স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি অভিযুক্ত অধ্যাপক তাজউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘‘টানা দু’ঘণ্টা ধরে পড়াচ্ছিলাম। চালাকি করে তার মধ্যে থেকে ২৫ সেকেন্ডের ভিডিয়ো বের করে নিয়েছে কেউ। মানছি, তাতে সন্ত্রাসবাদী কথাটা রয়েছে। কিন্তু কী প্রসঙ্গে ওই কথাটা আমার মুখ দিয়ে বেরিয়েছে সেটাও তো খতিয়ে দেখা উচিত। লেনিনকে নিয়ে পড়াচ্ছিলাম। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নাশকতা চালাতে গিয়ে মৃত্যু হয় তাঁর ভাইয়ের। সেই প্রসঙ্গে ভগৎ সিংহের কথা উল্লেখ করি। ঠিক যেমনটা গাঁধীবাদীদের মধ্যে অনেকেই করে থাকেন। সেটাই হয়তো পড়ুয়াদের মনঃপুত হয়নি। কিন্তু তাই বলে ভিডিয়ো কেটে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিতে হবে! রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পড়ুয়ারা যে এতটা অপরিণত তা বুঝিনি। ভগৎ সিংহ আমার কাছেও বিপ্লবী। যিনি দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন। কাউকে আঘাত করা আমার উদ্দেশ্য ছিল না। তাই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।’’সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁকে নিয়ে সমালোচনা যেমন হচ্ছে, তেমনই অনেকে আবার তাঁর পাশেও দাঁড়িয়েছেন।