গোমাংস বিতর্কে এমনিতেই উত্তাল গোটা দেশ। তারই মধ্যে সোমবার জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ইফতার অনুষ্ঠানে গিয়ে গোমাংস ও তিন তালাক নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে আরও একপ্রস্ত পারদ চড়ালেন আরএসএস নেতা ইন্দ্রেশ কুমার। তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা ও বিতর্কিত মন্তব্যের প্রতিবাদে আজ পথে নামেন জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের একাংশ।
গত কাল আরএসএসের মুসলিম সংগঠন ‘মুসলিম রাষ্ট্রীয় মঞ্চ’ (এমআরএম)-এর আমন্ত্রণে জামিয়া মিলিয়া চত্বরে ইফতার অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন সঙ্ঘ নেতা তথা এমআরএমের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক ইন্দ্রেশ কুমার। সঙ্ঘ নেতার উপস্থিতি নিয়ে শুরু থেকেই আপত্তি ছিল ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের। ইন্দ্রেশের আসা রুখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য তালাত আহমেদের কাছে একটি স্মারকলিপিও জমা দিয়েছিলেন ছাত্ররা।
কিন্তু তা সত্ত্বেও এমআরএমের অনুষ্ঠানে আসেন ইন্দ্রেশ এবং পরে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, ‘‘মুসলিম ধর্মগুরুরা কেউই গোমাংস খাননি। মাংস খাওয়া অসুখ ডেকে আনে। সেখানে দুধ হল ওষুধ।’’ ইফতারের সময় তরল হিসেবে একমাত্র দুধকেই ব্যবহার করার জন্য সওয়াল করেন তিনি। সঙ্ঘের মুসলিম সংগঠন এ বছর দেশের নানা জায়গায় ইফতারে দুধ খাওয়ানোর উপরে জোর দিচ্ছে। শুধু গোমাংস নয়, সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে দাঁড়িয়ে তিন তালাক নিয়ে চলতি বিতর্ককেও উস্কে দিয়ে ইন্দ্রেশ বলেন, ‘‘তালাক হল পাপ! উপরওয়ালার না-পসন্দ। আর তিন তালাক হল মহাপাপ!’’
আরও পড়ুন: কৃষক-বিক্ষোভে উত্তাল মধ্যপ্রদেশ, পুলিশের গুলিতে হত ৫
ছাত্রদের অভিযোগ, মুসলিমদের ভাবাবেগে আঘাত করে আসলে সঙ্ঘের চিন্তাধারা চাপিয়ে দিতেই বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে ওই সব কথা বলেছেন ইন্দ্রেশ। সঙ্ঘ নেতার ওই বক্তব্যের প্রতিবাদ করেছে একাধিক সংগঠন। সকলেরই অভিযোগ, দেশে বিভাজনের রাজনীতি শুরু করেছে সঙ্ঘ এবং নরেন্দ্র মোদী সরকার। সঙ্ঘের ভাবধারা দেশজুড়ে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। দেশ জুড়ে বিজেপির এই চাপিয়ে দেওয়া রাজনীতির বিরুদ্ধে আজ সরব হয়েছেন সনিয়া গাঁধীও। আজ কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে তিনি বলেন, ‘‘মানুষ কী ভাবে জীবনযাপন করবেন, তা-ও আজকাল চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বিভাজনকারী বিষয়গুলিকে সামনে তুলে আনা হচ্ছে।’’
প্রবল আক্রমণের মুখে আরএসএসের যুগ্মসচিব দত্তাত্রেয় হোসাবোলে বলেন, ‘‘সঙ্ঘ কখনওই নিরামিষ খাওয়াকে বাধ্যতামূলক করার জন্য প্রচার করে না।’’ তিনি হিন্দু মহাসভা নেতা বিনায়ক দামোদর সাভারকরের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘‘সাভারকর আমিষ খেতে বলেছিলেন। বরং মহাত্মা গাঁধী নিরামিষ খাওয়ার পক্ষে মত দেন। আসলে হিন্দুধর্মকে আমরা সাংস্কৃতিক দিক থেকে দেখতে চাইছি। রাজনৈতিক দিক থেকে নয়।’’ বিজেপি নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডু বলেন, ‘‘কে, কী খাবেন, তা একেবারেই তাঁর নিজস্ব বিষয়। আমি নিজেও তো আমিষাশী। এ সব নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে যা বলা হচ্ছে, তা একেবারেই ঠিক নয়।’’ যদিও বিরোধীদের বক্তব্য, হোসাবোলে বা বেঙ্কাইয়া এ সব বলে বিষয়টি লঘু করতে চাইলেও জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে যা হয়েছে, তা আসলে সঙ্ঘের চাপিয়ে দেওয়া রাজনীতির অংশ।
গত কালের ঘটনার প্রতিবাদে আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ধর্নায় বসেন পড়ুয়ারা। ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গবেষক-ছাত্র ইমরান খানের কথায়, ‘‘ওই ব্যক্তি একাধিক বিস্ফোরণ কাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ওই ব্যক্তির উপস্থিতি মোটেই কাম্য নয়, তাই এই প্রতিবাদ।’’ পুলিশের বিরুদ্ধে লাঠি চালানো এবং কয়েকজন পড়ুয়াকে আটকে রাখারও অভিযোগ তুলেছে পড়ুয়াদের একাংশ। সেই অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছে দিল্লি পুলিশ।