মুসলিম নই, তবু প্রতিবাদ ছাড়ব না, অনড় অনুজ্ঞারা

সংবিধান নিয়ে পরীক্ষাটা আজ দিতে পারেননি অনুজ্ঞারা। তবে বুঝছেন, সংবিধান নিয়ে পড়াশোনাটা কাজে লাগছে।

Advertisement

অন্বেষা দত্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯ ১০:০০
Share:

অনুজ্ঞা ঝা, আয়েশা রেনা এবং লাদিদা সাখালুন (বাঁ-দিক থেকে)।

রবিবার পুলিশ ঢুকেছিল ক্যাম্পাসে। তাদের মারমুখী চেহারার সামনে পড়ে পড়ুয়াদের কেউ আঘাত পেয়েছেন। কেউ লুকিয়ে প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন। তবে নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের (সিএএ) প্রতিবাদ থেকে সরে আসেননি জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউই। প্রতিবাদী সেই মুখগুলোর মধ্যে উজ্জ্বল কয়েক জন ছাত্রী। ২০-২২-এর আশপাশে যাঁদের বয়স। রাজধানীর অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে কেন এ ধরনের পুলিশি নির্যাতনের শিকার হতে হবে, প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।

Advertisement

তাঁদেরই এক জন অনুজ্ঞা ঝা। ঝাড়খণ্ড থেকে আসা আইনের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেল ছাড়ার আগে কাঁদতে কাঁদতে সোমবার টিভি ক্যামেরার সামনে প্রশ্নগুলো প্রথমে তোলেন অনুজ্ঞা। তিনি বলেন, ‘‘মনে হয়েছিল, দিল্লি পড়ুয়াদের জন্য সব চেয়ে নিরাপদ জায়গা। একটা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়। আমাদের কিছু হবে না ভেবেছিলাম। কাল সারা রাত কেঁদেছি। কী হচ্ছে এ সব? আমাদের বন্ধুদের মারা হচ্ছে। হাত পা ভেঙে দেওয়া হচ্ছে।’’ এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা দেখে মর্মাহত অনুজ্ঞা। ফোনে আনন্দবাজারকে বললেন, ‘‘মনে হচ্ছে, আমার বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দিয়েছে। গোটা ক্যাম্পাস যেন কবরখানার মতো। চার দিকে রক্ত আর ভাঙচুর।’’

সংবিধান নিয়ে পরীক্ষাটা আজ দিতে পারেননি অনুজ্ঞারা। তবে বুঝছেন, সংবিধান নিয়ে পড়াশোনাটা কাজে লাগছে। জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে হিংসা দেখে গভীর দুঃখপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এ ব্যাপারে কী বলছেন অনুজ্ঞা? তাঁর কথায়, ‘‘ওঁর সঙ্গে একমত। আমরা তো শান্তিপূর্ণ ভাবেই প্রতিবাদ করছিলাম। রাস্তাতেও নীরবতা বজায় রাখা হচ্ছিল। তবু পুলিশ কেন ঢুকল?’’

Advertisement

আরও পড়ুন: মোদীর ‘পোশাক’ মন্তব্যেই কি বেড়েছে পুলিশের সাহস?

ক্যামেরার সামনে অনুজ্ঞা নিজের পরিচয় দিয়ে সমালোচনা করেছেন মোদী সরকারের। এর পরে কী হবে? ‘‘খুবই ভয় করছে। আমি এখনই নানা উল্টোপাল্টা নম্বর থেকে ফোন পাচ্ছি। সোশ্যাল মিডিয়াতেও মেসেজ আসছে। কিন্তু প্রতিবাদ থামাবো না,’’ বললেন অনুজ্ঞা।

টিভিতে তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘এ দেশে আমি নিরাপদ নই। কোথায় যাব জানি না। কোথায় গণপিটুনি দেওয়া হবে জানি না। জানি না, কাল আমার বন্ধুরা ভারতীয় থাকবে কি না।’’ এই সূত্রেই অনুজ্ঞা বলেছেন, ‘‘আমি তো মুসলিমও নই। তবু প্রথম থেকে প্রতিবাদের পুরোভাগে আছি। কারণ এরাই আমার পরিবার। বন্ধুবান্ধব থেকে শিক্ষক, সবাই।’’ ফোনে বলেন, ‘‘সিএএ নিয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছি কারণ এই আইন বৈষম্যমূলক। সংখ্যালঘুদের প্রতি অন্যায় হচ্ছে। নাগরিক হিসেবে প্রতিবাদ জানানোর সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে

আমার। এটা শুধু ধর্মের প্রশ্ন নয়। বিষয়টাকে সাম্প্রদায়িক ভাবে দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।’’

অনুজ্ঞার পাশাপাশি সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও দুই ছাত্রী আয়েশা রেনা (২২) এবং লাদিদা সাখালুনের (২২) কথাও। কেরলের মলপ্পুরম জেলার ইতিহাসের ছাত্রী আয়েশা এবং তাঁর বন্ধু লাদিদা (আরবি ভাষা ও সাহিত্যের ছাত্রী) পুলিশের লাঠির মুখে পড়েছিলেন। লাল ওড়নায় মাথা ঢাকা, চশমা পরা আয়েশার ছবিই গত কাল ভাইরাল হয়েছে সামাজিক মাধ্যমে। কোনও মহিলা পুলিশ ছিল না সেখানে। শাহিন নামে একটি ছেলেকে (তাঁদের বন্ধু) পুলিশ ঘিরে ধরায় তাঁকে বাঁচাতে ছুটে যান আয়েশারা। সেখানে কাঁদানে গ্যাসও ছোড়া হয়েছে। যাতে অসুস্থ হয়ে পড়েন লাদিদা।

আয়েশা বলেছেন, ‘‘লড়াইটা আমাদের সবার। কেউ ভয় পাই না। মরতে হলে সবাই মরব। লাঠি চালানো হয়েছে আমাদের উপরে।’’ আয়েশাদের দাবি, শাহিনকে আড়াল করায় পুলিশ চড়াও হয় তাঁদের উপরেই। উঁচু পাঁচিলের উপরে ওঠা তাঁদের আর একটি ছবিও ভাইরাল হয়েছে। আয়েশা বলেন, ‘‘চেয়েছিলাম আমাদের কথাটা সবাই শুনুক। আর কিছু নয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement