‘ভরসার’ রাজনাথ, জেটলিই বিঁধলেন মমতাকে

গত কাল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘বিপজ্জনক’ নরেন্দ্র মোদীকে সরিয়ে লালকৃষ্ণ আডবাণী, অরুণ জেটলি বা রাজনাথ সিংহের মতো কাউকে প্রধানমন্ত্রী করে জাতীয় সরকার গঠনের চেষ্টা হলে তিনি সমর্থন করবেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:৩৯
Share:

গত কাল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘বিপজ্জনক’ নরেন্দ্র মোদীকে সরিয়ে লালকৃষ্ণ আডবাণী, অরুণ জেটলি বা রাজনাথ সিংহের মতো কাউকে প্রধানমন্ত্রী করে জাতীয় সরকার গঠনের চেষ্টা হলে তিনি সমর্থন করবেন। তৃণমূল নেত্রীর এই রাজনৈতিক আহ্বানের পর চব্বিশ ঘণ্টাও কাটল না, দলের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে জেটলি-রাজনাথকে দিয়েই মমতার সমালোচনা করালেন বিজেপি নেতৃত্ব।

Advertisement

বৈঠকে রাজনৈতিক প্রস্তাব পেশের সময় বাংলায় ‘আইনশৃঙ্খলার অবনতি’ নিয়ে গত সন্ধ্যাতেই সরব হয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। আজ কর্মসমিতির বৈঠকে অর্থনৈতিক প্রস্তাব পেশ করে জেটলি বলেন, ‘‘নোট বাতিলের পরেও বিভিন্ন রাজ্যে আয় ও রাজস্ব আদায় বেড়েছে। ব্যতিক্রম পশ্চিমবঙ্গ।’’ রাজস্ব বাড়ানোর প্রসঙ্গে উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র এবং হরিয়ানার দৃষ্টান্তও দেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। সেই সঙ্গে বলেন, আসলে যে রাজ্য নিজের প্রশাসন ঠিক মতো চালাতে পেরেছে তারাই আয় বাড়িয়েছে। পরে এ ব্যাপারে সব রাজ্যের খতিয়ান বৈঠকে তুলে ধরে দেখানোর চেষ্টা হয়, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি কী ভাবে বাকিদের টেক্কা দিচ্ছে।

সন্দেহ নেই অরুণ জেটলির এ হেন সমালোচনায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের মন্ত্রীরা চটেছেন। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর এই খোঁচার জবাবে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র বলেন, ‘‘বাংলায় রাজস্ব আদায়ের কী অবস্থা, তা প্রাক-বাজেট আলোচনায় জেটলিজির সামনেই পেশ করেছি। ডিসেম্বর পর্যন্ত আমাদের ১৩ শতাংশ ঘাটতি রয়েছে। তা উনি জানেন। একই সঙ্গে গুজরাত, মহারাষ্ট্র, কর্নাটক, তেলঙ্গনা, কেরলের মতো রাজ্যের ঘাটতির পরিসংখ্যানও উনি জানেন। কারণ ওই সব রাজ্যের মন্ত্রীরাও তাঁকে পরিসংখ্যান দিয়েছেন।’’ অমিতবাবুর কথায়, ‘‘এর পরেও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী যদি পশ্চিমবঙ্গকে দোষারোপ করেন, তা হলে বলব— দেশে আর্থিক জরুরি অবস্থা চাপিয়ে দেওয়ার পর

Advertisement

নতুন করে আর মানুষকে বিভ্রান্ত করবেন না।’’

তবে বিজেপির একটি সূত্রে বলা হচ্ছে, জেটলি বা রাজনাথ যে ব্যক্তিগত উৎসাহ থেকে মমতার সমালোচনা করেছেন, তা নয়। মমতার প্রতি তাঁরা নরম বলেই দলে পরিচিত। এ দিনও মমতার উদ্দেশে তাঁদের সমালোচনা অন্যদের মতো চাঁচাছোলা ছিল না। কিন্তু মমতা যখন কেন্দ্রের নোট-বাতিলের বিরোধিতায় অহোরাত্র প্রধানমন্ত্রীর মুণ্ডপাত করছেন, তখন মোদীর পাশে দাঁড়ানোর একটা বাধ্যবাধকতাও তাঁদের রয়েছে।

তাৎপর্যপূর্ণ হল, জেটলি-রাজনাথদের সঙ্গে মমতার এই রসায়নকে নিয়েই বাংলায় বিরোধীরা আবার তৃণমূলকে চেপে ধরতে চাইছে। অধীর চৌধুরী, আব্দুল মান্নান থেকে শুরু করে সূর্যকান্ত মিশ্র, মইনুল হাসানদের বক্তব্য, তৃণমূলের আত্মায় যে বিজেপি রয়েছে তা মমতার প্রস্তাব থেকেই পরিষ্কার। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন লালকৃষ্ণ আডবাণী। রাজনাথ সিংহ সঙ্ঘ পরিবারের মানসপুত্র। কিন্তু তৃণমূল নেত্রী শুক্রবার পরিষ্কার বুঝিয়ে দিয়েছেন, এঁদের নিয়ে তাঁর কোনও রাজনৈতিক ছুঁৎমার্গ নেই। একমাত্র নরেন্দ্র মোদীতেই তাঁর আপত্তি রয়েছে। অর্থাৎ সুযোগ পেলে ফের বিজেপির হাত ধরতে তাঁর আপত্তি নেই।

বাস্তব হল, বাংলায় শাসক দলের রাজনৈতিক কৌশলে সিপিএম-কংগ্রেস উভয়েই সংখ্যালঘু ভোট হারিয়েছে। বিরোধীরা আশা করছেন, জাতীয় সরকার গঠনের প্রশ্নে মমতার মন্তব্যকে সামনে রেখে গ্রাম-শহরে ঠিকমতো প্রচার করা গেলে তৃণমূল সম্পর্কে সংখ্যালঘু সমাজে সন্দেহ তৈরি হতে পারে।

রোজ ভ্যালি কাণ্ডে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় গ্রেফতার হওয়ার পর কংগ্রেস হাইকম্যান্ড যে ভাবে তৃণমূলের পাশে দাঁড়ায়, তাতে পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস অস্বস্তিতেই পড়েছিল। চিন্তায় পড়েন বাম নেতারাও। তাঁদের আশঙ্কা ছিল, তৃণমূলের বিরুদ্ধে নতুন করে আক্রমণ শানাতে পারবেন না প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব। কিন্তু জেটলি-রাজনাথদের প্রতি মমতার আস্থা প্রকাশ তাঁদের কিছুটা হলেও অক্সিজেন জুগিয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement