আলোচনাসভায় জেটলি। পিটিআই
নীরবতা ভেঙে দুই প্রাক্তনের তোলা অভিযোগের জবাব ফিরিয়ে দিলেন বর্তমান।
দেশের অর্থনীতি নিম্নমুখী, এই দাবি করে গত কাল প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী যশবন্ত সিন্হা তাঁর উত্তরসূরি অরুণ জেটলিকে বিঁধেছিলেন। একই সুরে সঙ্গত করেছিলেন আর এক প্রাক্তন পি চিদম্বরমও। আজ কারও নাম না করলেও তাঁদের ‘প্রাক্তন’ হওয়ার সুবিধা নিয়ে কটাক্ষ করে ও তথ্য দিয়ে জেটলি-র দাবি, অর্থনীতিতে কোনও বিরূপ প্রভাব পড়েনি। বরং দেশে প্রত্যক্ষ কর আদায় বেড়েছে ১৫.৭%।
কাল একটি সংবাদপত্রের নিবন্ধে দেশের অর্থনীতির বেহাল দশা নিয়ে মোদী সরকার ও জেটলি-কে কাঠগড়ায় তোলার পরে আজও কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের সমালোচনা করেন যশবন্ত। প্রথমে কেন্দ্রীয় সরকারের মুখরক্ষায় নেমে যশবন্তের নাম না করলেও তাঁরই ছেলে তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী জয়ন্ত সিন্হা আর একটি সংবাদপত্রে লেখেন, অল্প কিছু তথ্যের ভিত্তিতে এ ধরনের নানা সিদ্ধান্ত ‘দুর্ভাগ্যজনক’। নয়া ভারত গড়তে কেন্দ্র মূল কাঠামোর যে সব সংস্কার করছে, সে সবই বাদ পড়ে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন:বিদেশ সফর স্থগিত তথাগতর, জল্পনা
রাতে জবাব দিতে গিয়ে খানিকটা ঠাট্টার সুরেই জেটলি বলেন, ‘‘আমি এখনও প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী হইনি। প্রাক্তন হিসেবে ‘কলাম’ লেখক হওয়ার মতো স্বাধীনতাও যে আমার নেই, তা স্বীকার করছি।’’ তাঁর কটাক্ষ, ‘‘খুব সহজেই ভুলে যেতে পারি নীতি পঙ্গুত্বের কথা (ইউপিএ-২-র জমানায়)। ভুলে যেতে পারি ১৯৯৮-২০০২-এর মধ্যে (যখন যশবন্ত অর্থমন্ত্রী) ১৫%-এর অনুৎপাদক সম্পদের কথা।’’ ‘ইন্ডিয়া অ্যাট ৭০, মোদী অ্যাট ৩.৫’ শীর্ষক বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ কথা বলার পরে ফের নাম না করেই যশবন্তকে কটাক্ষ করে তিনি জানান, বইটির নামের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া উচিত ‘জব অ্যাপ্লিক্যান্ট অ্যাট ৮০’ (অর্থাৎ, ৮০ বছর বয়সি এক জন কর্মপ্রার্থী)।
যশবন্ত নাম করেই জেটলিকে দুষলেও তিনি জানিয়েছেন, ব্যক্তিগত নয়, অতীতে এল কে আডবাণীর পরামর্শ মেনেই তিনি বরং নীতি নিয়েই কথা বলতে চান। জেটলির দাবি, মোদী সরকার কড়া পদক্ষেপ নিতে ভয় পায় না। আজও তিনি কালো টাকা রুখতে নোট বাতিলের প্রয়োজনীয়তার কথা এবং ঐকমত্যের ভিত্তিতেই জিএসটি চালুর কথা বলেন।
তবে এ নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্কের পারদ আরও চড়ছে বই কমছে না। চিদম্বরম আজ জয়ন্তর বক্তব্যকে সরকারি মুখপত্রের বয়ান বলে কটাক্ষ করে প্রশ্ন তুলেছেন, তিনিই যদি ঠিক হন, তা হলে কেন পরপর পাঁচটি ত্রৈমাসিকে দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার নিম্নমুখী? কেন বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ছে না? যশবন্তকে সমর্থন করেছেন তাঁরই সতীর্থ তথা বিজেপি সাংসদ শত্রুঘ্ন সিন্হাও।
এরই মাঝে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর ওয়াই ভি রেড্ডি আজ ওয়াশিংটনে বলেছেন, মজবুত কেন্দ্রীয় সরকারের চেয়ে ১৯৯০-২০১৪, যখন ভারতের ক্ষমতায় জোট সরকার, তখনই দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি হয়েছে। সরকার নড়বড়ে হলেও রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতেই প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার সাফল্যই তার কারণ বলে তাঁর মত।