আশা ভোসলে। ফাইল চিত্র।
দেশজুড়ে চলতে থাকা জয় শ্রীরাম ধ্বনিতে ‘উস্কানিমূলক রণহুঙ্কার’ ও ‘ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা’ ছড়ানোর প্রতিবাদে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে খোলা চিঠি লিখেছিলেন আদুর গোপালকৃষ্ণন, অপর্ণা সেন, শ্যাম বেনেগাল, মণি রত্নম-সহ বিশিষ্ট জনেরা। তা নিয়ে শাসক দলের ক্ষোভের মুখেও পড়তে হচ্ছে তাঁদের। এই আবহেই আজ আশা ভোসলের টুইট— ‘‘দম মারো দম... বোলো সুবহ শাম, হরে কৃষ্ণ হরে রাম... চিরদিনের এই গান আর কি গাইতে পারব?’’
মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীকে খোলা চিঠিটি দেন ৪৯ বিশিষ্টজন। এর পর থেকেই ‘দেশবিরোধী’ বলে বিজেপি নেতাদের আক্রমণের মুখে পড়তে হচ্ছে অভিযোগকারীদের। আজ পাল্টা চিঠি দিলেন আর এক দল ‘বিশিষ্ট’। এ দলে রয়েছেন সেন্সর বোর্ডের চেয়ারপার্সন প্রসূন জোশী, অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাবত, পরিচালক মধুর ভান্ডারকর, স্বপন দাশগুপ্ত, বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়, পার্ণো মিত্র, কল্যাণ চৌবে, অচিন্ত্য বিশ্বাস, অভিজিৎ চক্রবর্তী-সহ ৬২ জন। তাঁদের চিঠির বক্তব্য এই রকম— ‘‘গত ২৩ জুলাই, ২০১৯, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উদ্দেশে একটি খোলা চিঠি দেওয়া হয়েছে। যা দেখে আমরা হতভম্ব। ৪৯ জন স্বঘোষিত ‘অভিভাবক’ এবং ‘নীতি-জ্ঞানের রক্ষক’... নির্দিষ্ট কিছু বিষয় নিয়ে সচেতনতা প্রকাশ করেছেন। যা থেকে বোঝাই যাচ্ছে, এটি একেবারেই রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত।’’ আরও লেখা হয়েছে, ‘‘আমাদের মনে হয়, এই নির্দিষ্ট বিক্ষোভ একেবারেই মিথ্যা দাবি... প্রধানমন্ত্রীর অক্লান্ত পরিশ্রমকে নেতিবাচক ভাবে দেখানোর চেষ্টা। যাঁরা ওই চিঠিতে সই করেছেন, অতীতে তাঁরা জনজাতিদের উপরে মাওবাদী হামলা, কাশ্মীরে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের স্কুল পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় চুপ করে থেকেছেন।’’
অপর্ণা সেনদের চিঠির প্রসঙ্গে আজ মেঘালয়ের রাজ্যপাল তথাগত রায়ও বলেন, ‘‘গণতান্ত্রিক দেশে বিশিষ্ট মানুষেরা প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিতেই পারেন। কিন্তু তাঁদের চিঠি একদেশদর্শী। পক্ষপাতমূলক। জয় শ্রীরাম নিয়ে তাঁরা আপত্তি তুলছেন। কিন্তু আল্লা হু আকবর নিয়ে তাঁরা নীরব।’’ এর জবাবে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ৪৯ জন বিশিষ্টের মঞ্চ ‘সিটিজেনস্পিকইন্ডিয়া’-র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ‘‘আমাদের চিঠিতে এমন কিছু ছিল না, যা থেকে একে দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত বলা হবে। দেশের সংখ্যালঘুদের বিষয়ে সচেতনতা প্রকাশের সাংবিধানিক অধিকার আমাদের আছে।’’
চিঠিতে সই করায় সমালোচনার পাশাপাশি খুনের হুমকিও জুটছে কারও কারও। যেমন, পরিচালক অনুরাগ কশ্যপও। টুইটারে আজ প্রাণনাশের হুমকি পেয়েছেন তিনি। গত বুধবার একই হুমকি পেয়েছিলেন চিঠিতে স্বাক্ষরকারী বিশিষ্টজনেদের অন্যতম অভিনেতা কৌশিক সেন। নিজের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে অনুরাগের উদ্দেশে এক ব্যক্তি লিখেছেন, কিছু দিন আগেই তিনি নিজের রাইফেল ও শটগান পরিষ্কার করে রেখেছেন। অনুরাগের সামনাসামনি হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। টুইটটি মুম্বই পুলিশকে ফরওয়ার্ড করেন অনুরাগ। পুলিশ জানিয়েছে, ইতিমধ্যেই ওই ব্যক্তির টুইটার অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত বিবরণ সাইবার বিভাগে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ যাতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে পারে, তার জন্য স্থানীয় থানায় অভিযোগ দায়ের করতে বলা হয়েছে অনুরাগকে।
পরিচালক আদুর গোপালকৃষ্ণনকে কেরলের এক বিজেপি নেতা গত কাল বলেছিলেন, এত অভিযোগ যখন, চাঁদে গিয়ে থাকুন। জবাবে আজ একটি মালয়ালম দৈনিককে ৭৮ বছর বয়সি পরিচালক বলেন, ‘‘বিজেপি নেতারা আমাকে চাঁদে যেতে বলছেন। পাকিস্তানে আর জায়গা নেই বোধহয়।’’ জানিয়েছেন, এ প্রস্তাবে ‘অভিভূত’ তিনি। কটাক্ষ করে বলেছেন, ‘‘গোটা পৃথিবী ঘুরেছি। চাঁদ নিয়ে উৎসাহ রয়েছে। দেখতে চাই। উনি হয়তো আমার জন্য টিকিট আর হোটেল বুক করে দিতে পারবেন!’’