চম্বল নদীর ধারে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে ১৮০ বছরের পুরনো হেরিটেজ ব্রিজ রাজ ভবন প্যালেস। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর সবুজে ঘেরা রাজস্থানের কোটার এই প্যালেসটির প্রেমে পড়তে বাধ্য পর্যটকরা। বিশেষ করে যাঁরা একটু নিঃসঙ্গে কাটাতে চান তাঁদের জন্য এই ব্রিজ রাজ ভবন হোটেলটি আদর্শ।
প্যালেসের বিলাসবহুল ঘর, আসবাবপত্র ও সাজসজ্জা তো বটেই, সামনে দিয়ে বয়ে চলা চম্বল নদীও এই প্যালেসের আকর্ষণের অন্যতম কারণ। কিন্তু এই প্যালেসকে ঘিরে একটি জনশ্রুতি প্রচলিত। এই হোটেলে নাকি মেজর বার্টনের ‘অতৃপ্ত আত্মা’ ঘুরে বেড়ায়। এই ধারণা থেকেই দেশের অন্যতম ভুতুড়ে হোটেলের তালিকায় ঢুকে পড়েছে ব্রিজ ভবন প্যালেস।
ব্রিটিশ আধিকারিকদের বাসভবন হিসেবে ১৮৩০ সালে প্যালেসটি গড়ে তোলা হয়েছিল। পরে ব্রিটিশ মেজর চার্লস বার্টন নিজের বাসভবন হিসেবে ব্যবহার করা শুরু করেন এই প্যালেসকে।
১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের সময় বার্টনের বাসভবনটি আক্রমণ করে বিদ্রোহী সেনা। প্যালেসের সব লোক সেই আক্রমণের হাত থেকে পালিয়ে বাঁচলেও, সেই সৌভাগ্য হয়নি মেজর বার্টন ও তাঁর পরিবারের।
বিদ্রোহীদের হাতে খুন হন বার্টন ও তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যরা। কোটার তত্কালীন রাজা প্যালেসের ভিতর থেকে পরে তাঁদের দেহ উদ্ধার করেন। প্যালেসের সেন্ট্রাল হলে সকলকে সমাধিস্থ করা হয়।
বার্টনের মৃত্যুর পর প্যালেসটি কোটার রাজার দখলে চলে যায়। স্বাধীনতার পর সাতের দশকে রাজস্থান সরকার এই প্যালেসটিকে হোটেল হিসেবে গড়ে তোলে।
ওই প্যালেসে না কি বার্টনের ‘আত্মা’কে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়, এমনই দাবি করেছেন অনেকে। স্থানীয় বাসিন্দারাও দাবি করেন, ওই প্যালেস থেকে মাঝে মধ্যেই অদ্ভুত সব ভুতুড়ে আওয়াজ শুনতে পান তাঁরা।
১৯৮০ সালে কোটার মহারানি ওই প্যালেসে বার্টনের ভূত দেখার অভিজ্ঞতা শুনিয়েছিলেন এক সাংবাদিককে। মহারানি ওই সাংবাদিকের কাছে দাবি করেন, তিনি পড়ার ঘরে বসে বই পড়ায় মগ্ন ছিলেন। মুখ তুলতেই তিনি দেখেন তাঁর ঠিক অদূরেই দাঁড়িয়ে রয়েছেন বার্টন! হাতে লাঠি, পাকা চুল!
নিরাপত্তারক্ষীরাও নাকি বার্টনের ‘আত্মা’কে দেখেছেন বহু বার। তাঁদের দাবি, কোনও দিন কারও ক্ষতি করেনি বার্টনের ‘ভূত’! এমনও দাবি করা হয়, কোনও নিরাপত্তারক্ষী যদি পাহারা দিতে দিতে ঘুমে ঢলে পড়েন তাঁকে না কি জাগিয়ে তুলতে চড় মারে বার্টনের ‘ভূত’। শুধু চড় মারাই নয়, তিনি না কি আবার ধমকও দেন।
প্যালেসের সেন্ট্রাল হলে গিয়ে অদ্ভুত বিষয় উপলব্ধি করেছেন বলে অনেকে এমন দাবিও করেছেন। হোটেলে আগত পর্যটকদের রাতে ঘরে থাকতেই পরামর্শ দেন প্যালেস কর্তৃপক্ষ। প্যালেসের বাগানে হাঁটতেও নিষেধ করা হয়।
তবে এটা বার্টনের ‘ভূত’-এর কারণেই কি এমনটা বলা হয়, সে বিষয়টা স্পষ্ট নয়। তবে বার্টনের ‘ভূত’ থাকুক বা না-ই থাকুক জনশ্রুতি আর প্যালেসের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেহ-মনে শিহরণ জাগাবে, এমনটাই দাবি অনেকের।