রকেটে চেপে একসঙ্গে ১০৪টি কৃত্রিম উপগ্রহ পৌঁছবে মহাকাশে

১০৪ নট আউট! যার মধ্যে ১০১-ই মাঠের বাইরে থেকে! বুধবার সকালে এমনই এক ঝোড়ো ইনিংস খেলতে চলেছে ইসরো।

Advertisement

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৪:০১
Share:

এই যানেই মহাকাশে পাড়ি দেবে ১০১টি বিদেশি উপগ্রহ। মহাকাশ বাণিজ্যে এটি এক বড়সড় লাফ ভারতের। ছবি ইসরোর সৌজন্যে।

১০৪ নট আউট! যার মধ্যে ১০১-ই মাঠের বাইরে থেকে! বুধবার সকালে এমনই এক ঝোড়ো ইনিংস খেলতে চলেছে ইসরো।

Advertisement

ভারতের এই মহাকাশ গবেষণা সংস্থা সে দিন তাদের ‘পিএসএলভি সি-৩৭’ রকেটে চাপিয়ে একসঙ্গে ১০৪টি কৃত্রিম উপগ্রহকে মহাকাশে পৌঁছে দেবে। যার মধ্যে ১০১টি উপগ্রহই বিদেশি সংস্থার। এ কাজে সফল হলে তা হবে বিশ্ব রেকর্ড। তিন বছর আগে রাশিয়া ৩৭টি উপগ্রহ পাঠিয়েছিল এক রকেটে। এ পর্যন্ত সেটাই ছিল সর্বোচ্চ। থেমে নেই স্বাধীন গবেষণাও। অরুণ জেটলির বাজেট বলছে, মঙ্গলে ফের যান পাঠাবে ইসরো। তাদের পরের নিশানা, শুক্রগ্রহ। এ সবের পাশাপাশি উঠে আসছে আরও একটি প্রসঙ্গ। তা হল, মহাকাশ বাণিজ্যে ভারতের উত্থান!

ইসরোর বাণিজ্যিক শাখা ‘অ্যানট্রিক্স’-এর হিসেব বলছে, ১৯৯৯ সাল থেকে বাণিজ্যিক ভাবে উৎক্ষেপণ করছে তারা। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত ৭৪টি বিদেশি উপগ্রহকে মহাশূন্যে পাঠিয়েছে ভারত। এ বার ১৭ বছরের মোট হিসেবকেও টপকে যাবে ইসরো।

Advertisement

বিদেশি মুদ্রা আয়েও তাই এ বার বড়সড় লাফ দিতে চলেছে ‘অ্যানট্রিক্স’। খরচ বাঁচাতে বাণিজ্যিক সংস্থাগুলি নিজেদের উপগ্রহ পাঠানোর জন্য মহাকাশ গবেষণা সংস্থাগুলির সঙ্গে চুক্তি করে। অনেকটা ‘পুল কার’-এর মতো। একটি রকেটের বহনক্ষমতা অনেক বেশি। তাই কখনও একাধিক সংস্থার উপগ্রহগুলিকে একটি রকেটে পাঠানো হয়। কখনও নিজেদের উপগ্রহ পাঠানোর পরে বাকি ওজনের ‘যাত্রী’ তুলে নেওয়া হয়। এ বারেও যেমন ইসরোর বাহনের মূল যাত্রী ভারতের কার্টোস্যাট-২ সিরিজের একটি উপগ্রহ। বাকি ১০৩টি খুদে উপগ্রহ। তার ২টি ভারতীয়।

উপগ্রহ পাঠানোয় ইসরোর এই চাহিদা আদতে কম খরচের জন্য। ডোনাল্ড ট্রাম্পের জমানায় মার্কিন প্রশাসন দেশের চাকরিবাকরি ও কাজ বিদেশে চলে যাওয়া রোখার কথা বলছে। কিন্তু সস্তায় উপগ্রহ পাঠাতে এখনও ভারত তাদের বড় ভরসা। বুধবার যে ১০১টি বিদেশি উপগ্রহ পাঠানো হবে তার মধ্যে ৮৮টি মার্কিন সংস্থার। বাকিগুলিও জার্মানি, নেদারল্যান্ডসের মতো উন্নত দেশের।

আরও পড়ুন।

দেওয়ালের রংছবিতে ঝাড়খণ্ড চিনবেন শিল্পপতিরা

কেন্দ্রীয় মহাকাশ গবেষণা দফতর সূত্রে বলা হচ্ছে, উৎক্ষেপণের জন্য বছরে সব দেশ মিলিয়ে প্রায় ৩০ হাজার কোটি ডলার খরচ করে। ভারত যে মহাকাশ বাণিজ্যের এই বাজার ধরতে তৎপর, আড়াই বছর আগেই তা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। খরচ কম রেখে ও সহজ প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে এই বাজারকে নিশানা করছে ভারত। বাজার দখলের যুদ্ধে এক ধাক্কায় অনেকটাই এগিয়ে দিয়েছে ভারতের প্রথম মঙ্গল অভিযানের সাফল্য। ইসরো সূত্রে বলা হচ্ছে, ওই অভিযানেই ভারতের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি তাক লাগিয়েছিল বিশ্বকে। আর বিজ্ঞানীদের একাংশ বলছেন, সে যাত্রায় সরস্বতী ও বিশ্বকর্মার সাধনায় দেশের বিজ্ঞানী এবং ইঞ্জিনিয়ারদের দক্ষতার প্রমাণ পেয়েছে উন্নত দুনিয়া। সেই দক্ষতাকে কাজে লাগিয়েই এ বার লক্ষ্মীর আরাধনায় রকেট গতিতে উঠে আসছে ভারত।

মার্কিন সংস্থা ‘নাসা’ বা ইউরোপীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইএসএ) যা খরচ করে তার তুলনায় ভারতের মঙ্গলযান অভিযানে খরচ ছিল অনেক কম। কম খরচে পরিষেবার দিকে বিশ্বের নজর টানতে প্রধানমন্ত্রী মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, ‘‘হলিউডি সিনেমা গ্র্যাভিটি তৈরির চেয়েও আমাদের মঙ্গল অভিযানের খরচ পড়েছে ঢের কম।’’ তবে মঙ্গলযানকে পৃথিবীর টান কাটিয়ে বহির্বিশ্বে পৌঁছে দিতে প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ নিতে হয়েছিল বিজ্ঞানী-ইঞ্জিনিয়ারদের। সেই পরীক্ষায় উতরে ইসরো এখন উৎক্ষেপণ প্রযুক্তিতে উন্নত দেশগুলির সঙ্গে সমানে সমানে টক্কর নিতে পারে। অ্যানট্রিক্সের তথ্য বলছে, ২০১৪ থেকে ২০১৬— এই দু’বছরে ৪৯টি বিদেশি উপগ্রহকে মহাকাশে পাঠিয়েছে তারা।

তার পরেই ইসরো যে এত তাড়াতাড়ি বিশ্ব রেকর্ডের মুখে পৌঁছে যাবে, ভাবতে পারেননি অনেকেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement