রেক্স টিলারসন
প্রথমে পাকিস্তানের মাটিতে দাঁড়িয়ে। তার পর ভারতে। দেশে ফেরার আগে এ বার জেনিভা থেকেও ইসলামাবাদকে কড়া বার্তা দিয়ে গেলেন মার্কিন বিদেশসচিব রেক্স টিলারসন। সাফ জানালেন, পাকিস্তান নিজে যদি না পারে, জঙ্গি দমনে আমেরিকাই এ বার অন্য পথে ব্যবস্থা নেবে।
ভারত-পাক সীমান্তে বাড়তে থাকা সন্ত্রাস নিয়ে যে আমেরিকা উদ্বিগ্ন, তা-ও জানাতে ভোলেননি টিলারসন। তাঁর বার্তা— সন্ত্রাসের স্বর্গরাজ্য ধ্বংস করতেই হবে পাকিস্তানকে।
তবে এমন হুঁশিয়ারি নতুন কিছু নয়। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকেই পাকিস্তানকে ধারাবাহিক ভাবে বিঁধে আসছে ওয়াশিংটন। নিজেদের পরমাণু অস্ত্রের উপর কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই বলে পাকিস্তান ক্রমশ উত্তর কোরিয়ার থেকেও বিপজ্জনক হয়ে উঠছে বলে সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন প্রাক্তন মার্কিন সেনেটর ল্যারি প্রেসলার। কিন্তু আমেরিকা এ বার যেন ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে মধ্যস্থতাও করতে চাইছে।
টিলারসনের উপমহাদেশ সফর শেষে এবং বিভিন্ন সময়ে তাঁর নানা বার্তার সূত্রে এমনটাই জল্পনা ছড়িয়েছে দিল্লিতে। যদিও ভারত এতে একেবারেই আমল দেবে না বলে মনে করছেন কূটনীতিকদের একাংশ। ১৯৭২ সালে ইন্দিরা গাঁধী এবং তৎকালীন পাক প্রধানমন্ত্রী জুলফিকর আলি ভুট্টোর মধ্যে যে শিমলা চুক্তি হয়েছিল, তাতে ভারত স্পষ্ট করে দিয়েছিল যে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে তৃতীয় কোনও দেশের নাক গলানো মেনে নেওয়া হবে না।
ট্রাম্প তবু তাঁর পূর্বসূরিদের মতো চেষ্টাটা করেই চলেছেন। তখনও তিনি হোয়াইট হাউসে আসেননি। রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হয়ে প্রচারে গিয়ে বলেছিলেন, ‘‘ভারত ও পাকিস্তানের মতো বিবদমান দুই দেশের মধ্যে মধ্যস্থতা করতে পারলে ভালই লাগবে। তবে অবশ্যই যদি ওরা সেটা নিজে থেকে চায়।’’ তার পর গত এপ্রিলে ভারত-পাক সমস্যা মেটাতে মার্কিন প্রেসিডেন্টের মধ্যস্থতা চেয়ে সওয়াল করেছিলেন রাষ্ট্রপুঞ্জে মার্কিন প্রতিনিধি নিকি হ্যালি।
আরও পড়ুন: ভোটের গুজরাতে বড় হামলার ছকে আইএসআই?
গত কাল জেনিভায় ট্রাম্পের বিদেশসচিব টিলারসনের কথাতেও যেন সেই সুর পাওয়া গেল। তবে সবটাই ইঙ্গিতে।
কী বললেন টিলারসন? ইসলামাবাদ সফরে গিয়ে তিনি বৈঠক করেন পাক প্রধানমন্ত্রী ও সেনাপ্রধানের সঙ্গে। সেই প্রসঙ্গে কাল তিনি বলেন, ‘‘আমরা পাকিস্তানের কাছে কী চাই, সেটা স্পষ্ট করে এসেছি। বলেছি, সার্বভৌম দেশ হিসেবে নিজেদের কর্তব্য আপনারা নিজেরাই স্থির করুন। তবে আমরা মনে করি, জঙ্গি দমনে পদক্ষেপ করাটা জরুরি। সীমান্ত সমস্যা মেটাতেই হবে। আপনারা না পারলে, সেই লক্ষ্যে পৌঁছতে কৌশল এবং নীতি বদলের কথাও ভাবছে ওয়াশিংটন।’’
এর পরেই টিলারসনের মন্তব্য, ‘‘ভারতীয় সীমান্তে উত্তেজনা কী ভাবে কমানো যায়, তা নিয়েও পাক নেতৃত্বের সঙ্গে কথা হয়েছে।’’
অবশ্য মধ্যস্থতা বলতে যা বোঝায়, এমন কোনও প্রস্তাব ভারতকেও তিনি দিয়েছেন কি না, তা নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন মার্কিন বিদেশসচিব। তবে পাকিস্তান এর আগে একাধিক আন্তর্জাতিক মঞ্চে কাশ্মীর সমস্যা নিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছে। তৃতীয় পক্ষ হিসেবে বিশেষত আমেরিকার কাছে মধ্যস্থতাও চেয়েছে। ভারত কিন্তু নিজেদের অবস্থানেই অনড়।