পনেরো বছর পর ফের ভারতের সংসদে ফিদাইন হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে পাক সন্ত্রাসবাদী সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদ। শুধু তাই নয়, মহিলা ফিদাইনকে সামনে রেখে লস্কর-ই-তইবাও তিনটি পৃথক গোষ্ঠী বানিয়ে ভারতে বড়সড় হামলার ছক কষছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতীয় সেনার ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’-এর পর পাক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর ভিত নড়বড়ে হয়ে গিয়েছে। যে কারণে হাফিজ সঈদ ও সালাউদ্দিনের মতো সন্ত্রাসবাদী চাঁইকে লাহৌরে সেনা ছাউনিতে কড়া নিরাপত্তায় রাখা হয়েছে। ভারতের অভিযানের বদলা নিতে পাকিস্তান তাই এ দেশে বড়সড় হামলার নির্দেশ দিয়েছে সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলিকে। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ও জম্মু-কাশ্মীরের সিআইডি সম্প্রতি জানতে পেরেছে, ভারতের উপর বদলা নিতে যে কোনও মূল্যে বড়সড় হামলার খোলা ছুট দিয়েছে আইএসআই। এ ক্ষেত্রে তাদের প্রথম নিশানা হল ভারতের সংসদ। কোনও ভাবে সংসদে হামলা করতে ব্যর্থ হলে দিল্লি সচিবালয়কেও নিশানা করা যেতে পারে। অথবা অক্ষরধাম, লোটাস মন্দির কিংবা রেলওয়ে স্টেশন, ভিড়বহুল বাজারও রয়েছে সন্ত্রাসবাদীদের নিশানায়।
২০০১ সালে জইশ একই ভাবে আফজল গুরুর নেতৃত্বে সংসদে হামলা চালিয়েছিল। ২০০১ সালে ১৩ ডিসেম্বর এই হামলায় পাঁচ সন্ত্রাসবাদী মারা গিয়েছিল। একই সঙ্গে দিল্লি পুলিশের ছয় সদস্য, ২ জন সংসদ নিরাপত্তা কর্মী ও একজন মালি নিহত হয়েছিলেন। সন্ত্রাসবাদীদের কথাবার্তা আড়ি পেতে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা জানতে পেরেছে, লস্কর-ই-তইবাও তিনটি পৃথক গোষ্ঠী তৈরি করেছে ভারতের উপর হামলা চালানোর জন্য। তার মধ্যে একটি ফিদাইন গোষ্ঠীর নেতৃত্ব দেবে ফতিমা বলে এক মহিলা। বাকি দু’টির নেতৃত্ব দেবে আবু ওসামা ও হাম্মাদ নামে দুই জঙ্গি। নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর সন্ত্রাসবাদীরা পাকিস্তানি রেঞ্জারের পোশাকে ঘোরাফেরা করছে। সুযোগ বুঝেই ভারতে প্রবেশ করে হামলার জন্য ওত পেতে আছে তারা। কিন্তু এসবের মধ্যে সবথেকে বড় হামলার ছক কষছে জইশ-ই-মহম্মদ।
পঠানকোটে সন্ত্রাস হামলার পরেই জইশ-ই-মহম্মদের পাণ্ডা মাসুদ আজহারকে নিষিদ্ধ সন্ত্রাসবাদী ঘোষণার জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জে চাপ বাড়াচ্ছে ভারত। কিন্তু পাকিস্তানের অনুরোধে তাতে বাদ সেধেছে চিন। আজও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ দলের বৈঠকে ফের কাশ্মীরে নিহত সন্ত্রাসবাদী বুরহান ওয়ানির প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন। কিন্তু পাকিস্তান সন্ত্রাসে মদত দিলেও চিন তাদের পাশেই আছে। মাসুদ আজহার নিয়ে ভারত আপত্তি জানালেও আজ উল্টে নয়াদিল্লির বিরুদ্ধে মন্তব্য করেছে চিন। ব্রিকস সম্মেলনে চিনা রাষ্ট্রপতির সফরের আগেই আজ বেজিংয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, এনএসজিতে ভারতের পূর্ণ সদস্যতা নিয়ে আলোচনায় রাজি তারা। কিন্তুব সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় ভারত যেন নিজেদের রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা না করে।
ভারতের বিদেশ মন্ত্রক ইতিমধ্যেই জানিয়েছে, বিষয়টি নিয়ে চিনের সঙ্গে তারা আলোচনা করবে। কিন্তু নয়াদিল্লির কাছে এখন সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ, সন্ত্রাস হামলা মোকাবিলা করা। রোজই জম্মু-কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদীদের পাচার করছে পাকিস্তান। আজও দিনভর পাম্পৌরে সন্ত্রাসবাদী হামলা মোকাবিলা করেছে কম্যান্ডোরা। কিন্তু যে বড় ফিদাইন হামলার ছক করছে পাকিস্তান, তাতে দিল্লি-সহ দেশজুড়ে আরও সতর্কতা জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রসচিব ও সাংসদ আর কে সিংহ আজ বলেন, “যদি এ ধরনের কোনও হামলার চেষ্টা হয়, তাহলে ‘লাল রেখা’ অতিক্রম করবে। আমাদের উপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া হবে। এর আগে সংসদ হামলার পর সীমান্তে সেনা পাঠানো হয়েছিল, কিন্তু হামলা করা হয়নি। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সেই সময় হামলা করা উচিত ছিল।”
ক-দিন আগেই ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা জানতে পেরেছিল, জইশের দুজন ফিদাইন সন্ত্রাসবাদী কাশ্মীর থেকে আপেল ভরা একটি ট্রাকে দিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত গোয়েন্দা সংস্থা নিশ্চিত নয়, দিল্লিতে বড় হামলার সঙ্গে ভারতে ঢুকে পড়া এই জঙ্গিদের প্রত্যক্ষ কোনও যোগাযোগ আছে না কি আরও জঙ্গি ইতিমধ্যেই শহরে মজুত আছে। কালাশনিকভ-সহ অত্যাধুনিক হাতিয়ারও আছে এই জঙ্গিদের কাছে। গত সপ্তাহে এই খবর পেয়েই দিল্লিমুখী সব সীমান্তে নজরদারি আরও বাড়ানো হয়েছে। দিল্লিতে প্রবেশের আগেই সব গাড়ির তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
এরই মধ্যে কদিন আগে হিমাচল প্রদেশের হেড কনস্টেবল মনোজ ঠাকুরের এক দেশপ্রেমিক কবিতার ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল উরির হামলার পর। তাঁকে আজ মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়েছে। দুবাইয়ের ফরমান খান নামে এক ব্যক্তি তার ফেসবুকে এই হুমকি দিয়েছে। যার জবাবে মনোজ ঠাকুরও বলেছেন, কোনও হুমকিকেই তিনি পরোয়া করেন না।