বিনিয়োগের লক্ষ্যে রেলের জমি আরও খুলে দিল নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রিসভা। প্রতীকী ছবি।
বেসরকারি সংস্থাগুলির বিনিয়োগের লক্ষ্যে রেলের জমি আরও খুলে দিল নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রিসভা। আজকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ‘প্রধানমন্ত্রী গতি শক্তি প্রকল্প’-এর আওতায় নিজেদের জমিকে পাঁচ বছরের পরিবর্তে ৩৫ বছরের ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল রেল। এর ফলে রেলের জমিতে বেসরকারি সংস্থা কার্গো টার্মিনাল বানানো ছাড়াও, বিদ্যুৎ, গ্যাস, জলের পাইপ, পয়ঃপ্রণালি ব্যবস্থা বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহারের লক্ষ্যে নির্মাণ করতে পারবে। নির্মাণ করা যাবে স্কুল ও হাসপাতাল। বিরোধীদের অভিযোগ, নামমাত্র টাকার বিনিময়ে সরকারের বন্ধু কর্পোরেট সংস্থাগুলিকে জমি পাইয়ে দিয়ে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে দলীয় তহবিল ভরার কৌশল নিয়েছে বিজেপি।
কোষাগার ভরার লক্ষ্য সরকারি সম্পত্তি বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার নীতি আগেই হাতে নিয়েছিল কেন্দ্র। যাতে ৯৯ বছরের জন্য সরকারি সম্পত্তি বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল নরেন্দ্র মোদী। যে নীতিতে রেলের স্থাবর সম্পত্তি যেমন কোনও টয় ট্রেন, স্টেশন, ট্রেন চাইলে বাণিজ্যিক ভাবে ইজারা নিতে পারতেন বাণিজ্যিক সংস্থা। পরবর্তী ধাপে আজ ‘প্রধানমন্ত্রী গতি শক্তি প্রকল্প’-এর আওতায় অব্যবহৃত জমি বেসরকারি সংস্থার কাছে হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল। কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর আজ মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরে সাংবাদিক সম্মেলনে দাবি করেন, এর ফলে রেলপথকে কেন্দ্র করে আগামী পাঁচ বছরে প্রায় তিনশো কার্গো টার্মিনাল গঠন হবে, যা দেশে প্রায় ১.২৫ লক্ষ কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে। রেলে পণ্য পরিবহণের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। মন্ত্রিসভার ওই সিদ্ধান্ত রেলের অধীনস্থ কনটেনার কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া (কনকর)-র বেসরকারিকরণকে আরও ত্বরান্বিত করবে বলেই আশা করছেন রেল কর্তারা।
কেন্দ্র জানিয়েছে, একবার ইজারা নেওয়ার পরে রেলের ওই জমি বিদ্যুৎ, গ্যাস বা অপটিক্যাল ফাইবার লাইন পাতার কাজেও বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহার করতে পারবে সংস্থাগুলি। চাইলে বানানো যাবে ফ্লাইওভার, সড়কও। বসানো যাবে সোলার প্ল্যান্ট। যা থেকে উৎপন্ন বিদ্যুৎ বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহার করতে পারবে বেসরকারি সংস্থাগুলি। সরকারি-বেসরকারি অংশিদারীতে রেলের জমিতে বানানো যাবে স্কুল ও হাসপাতাল। যার জন্য প্রতি বর্গ মিটার জমি পিছু বার্ষিক এক টাকা খরচ সরকারকে দিতে হবে বেসরকারি সংস্থাগুলিকে। তৃণমূলের রাজ্যসভার মুখ্যসচতেক সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, ‘‘অর্থের পরিমাণ থেকেই স্পষ্ট, কার্যত বিনামূল্যে ওই জমি বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দিচ্ছে কেন্দ্র।’’ তৃণমূলের ওই নেতা নিশ্চিত ওই নীতিতে ‘পারপিচুয়াল লিজ’ বা নিরবিচ্ছিন্ন ইজারার উল্লেখ থাকবে। সুখেন্দুশেখরের মতে, “৯৯ বছরের লিজ দিলে প্রশ্ন উঠতে পারে বলে কৌশলে ৩৫ বছরের উল্লেখ থাকবে নীতিতে।” তৃণমূল নেতার বক্তব্য, “লোকসভা ভোটের আগে দলীয় তহবিলে টাকা তোলার কৌশল। দেশে সব চেয়ে বেশি জমি রয়েছে রেল, প্রতিরক্ষা, বিমানমন্ত্রক ও বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে। রেল দিয়ে সেই বেচার কাজ শুরু হল।”