—প্রতীকী চিত্র।
ট্রেন চালকদের কাজের অস্বাভাবিক চাপ বৃদ্ধি নিয়ে বার বার সরব হয়েছে রেলকর্মী সংগঠনগুলি। ছোটখাটো দুর্ঘটনার কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়েও চালকদের শারীরিক এবং মানসিক চাপের বিষয়টি সামনে এসেছে। এই পরিস্থিতিতে এ বার যেন নড়েচড়ে বসেছে রেল বোর্ড। রেল সূত্রের খবর, সমস্যা কতটা জটিল তা বুঝতে এ বার দেশের সব ক’টি রেলের জ়োন-এ চালকদের জীবনশৈলীগত অসুস্থতা বা লাইফস্টাইল ডিজ়িজ সম্পর্কে তথ্য চাওয়া হয়েছে। চালকেরা নিয়মিত ওষুধ খান কি না সেই সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্যও তলব করেছে রেল বোর্ড। এই প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে কোঙ্কণ রেল এবং কলকাতা মেট্রোকেও। রেলকর্মী সংগঠনগুলি অবশ্য বলছে, তথ্য না-হয় সংগ্রহ করা হল। কিন্তু সেই তথ্যের ভিত্তিতে কাজের পরিবেশ কত দ্রুত উন্নত হয় কিংবা আদৌ হয় কি না, সেটাই দেখার।
রেলের খবর, প্রয়োজনের তুলনায় চালকের সংখ্যা কম আছে। তাই বেশির ভাগ চালককে নির্ধারিত সময়ের বেশি সময় কাজ করতে হয়। কাজ শেষে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য বহু ক্ষেত্রেই নির্ধারিত স্টেশনের ‘রিটায়ারিং রুম’-এর অবস্থা বেহাল। তাই পর্যাপ্ত বিশ্রামও হয় না। শহরতলির কিংবা জেলা থেকে যে চালকেরা ভোরে ট্রেন নিয়ে বেরোন তাঁদের প্রাতঃকৃত্যের মতো আবশ্যিক কাজ সারা নিয়েও সমস্যায় পড়তে হয়। রেলকর্মী সংগঠনের দাবি, এই ধরনের খারাপ কাজের-পরিবেশ এবং পরিকাঠামোর জন্যই চালকদের উচ্চ রক্তচাপ, নিদ্রাহীনতা, মানসিক উদ্বেগ, ডায়াবিটিস, হজমের গোলমাল-সহ নানাবিধ অসুখ হচ্ছে।
রেলের কর্তারা জানান, এই সমস্যাগুলি থেকে মুক্তি পেতে মাস কয়েক আগে কলকাতা মেট্রো এবং পূর্ব রেলের শিয়ালদহ ডিভিশন আলাদা করে কর্মশালার আয়োজন করেছিল। সেখানে মানসিক উদ্বেগ কমাতে যোগ ব্যায়াম, ধ্যানের অনুশীলন, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি মোবাইল ফোনের ব্যবহার কমানোর পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। চালকদের পরিবারকেও ওই প্রক্রিয়ায় শামিল করা হয়েছিল। এমনিতে এই ধরনের উদ্যোগের প্রশংসা করলেও পরিকাঠামো না শুধরে এই ধরনের কর্মশালায় কত দূর উপকার মিলবে, তা নিয়ে সন্দিহান রেলকর্মীদের অনেকেই। রেলকর্তারা মানছেন, চালকদের সুস্থতা রেলের পক্ষে অতি জরুরি। কারণ, চালকের উপরে রেলের সুরক্ষা বহু ক্ষেত্রে নির্ভর করে। তা ছাড়া, এক জন চালকের প্রশিক্ষণে প্রচুর খরচ হয়। অসুস্থ হয়ে চালকের কর্মক্ষমতা কমলে আখেরে ক্ষতি রেলেরই।