চিন বার বার সেনা সরাতে বলছে ভারতকে। কিন্তু উল্টো পথেই হাঁটল ভারত। ডোকলামে তাঁবু ফেলা শুরু হল। —ফাইল ছবি।
ডোকলামে এ বার তাঁবু ফেলতে শুরু করল ভারতীয় সেনা। জুন মাসের গোড়া থেকে সেখানে ভারতীয় বাহিনী চিনা সেনার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে রয়েছে। জুনের শেষ দিকে এসে উত্তেজনা আরও বাড়ায় সৈন্য সমাবেশও বাড়ানো হয়েছে। এ বার ডোকলামে ক্যাম্প বসানো শুরু করে নয়াদিল্লি বুঝিয়ে দিল, বেজিং-এর চাপের সামনে মাথা নত করা হবে না। চিন সেনা না সরানো পর্যন্ত একতরফা পিছু হঠার প্রশ্নই নেই।
ভারত-ভুটান-চিন সীমান্তবর্তী ডোকলামে গত মাসের শুরু থেকেই উত্তেজনা বাড়তে শুরু করেছে। চিনা সেনা পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) এবং ভারতীয় সেনাবাহিনী মুখোমুখি অবস্থান করছে ১০ হাজার ফুট উচ্চতায়। এত দিন ধরে সীমান্তে ভারত ও চিনের এমন মুখোমুখি অবস্থান ইতিহাসে নজিরবিহীন। কিন্তু ভারত যে আরও দীর্ঘ টানাপড়েনের কথা মাথায় রেখেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। ত্রিদেশীয় সীমান্তের ডোকলামে ভারতীয় বাহিনী তাঁবু ফেলে শিবির তৈরি করা শুরু করে দিয়েছে।
ডোকলামে বিশাল সৈন্য সমাবেশ করেই নিশ্চিন্তে বসে থাকছে না ভারত। গোটা সিকিম সীমান্তেই সতর্কতা বাড়ানো হয়েছে। —ফাইল চিত্র।
ডোকলামে অবস্থানরত বাহিনীর জন্য খাবার, অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এবং সামরিক সরঞ্জামের সরবরাহ যাতে সব সময় পর্যাপ্ত থাকে, তা-ও নিশ্চিত করা হয়েছে। চিনের সঙ্গে সঙ্ঘাত দীর্ঘায়িত হবে ধরে নিয়েই ভারতীয় সেনার এই পদক্ষেপ, সে বিষয়ে প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের কোনও সংশয় নেই।
আরও পড়ুন: ভারতে থাকা নাগরিকদের সতর্ক থাকতে বলল চিন
ডোকলাম নিয়ে রোজ একটু একটু করে সুর চড়াচ্ছে চিন। সেখান থেকে ভারত সেনা না সরালে চিন সামরিক পদক্ষেপ করবে বলে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ভারত যাবতীয় হুমকির মুখে অবিচল। ২০১২ সালে চিন এবং ভারতের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছিল, চিন তার শর্ত ভেঙেছে বলে দাবি নয়াদিল্লির। ভারত, চিন এবং অন্য কোনও দেশের সীমান্ত যেখানে মিলেছে, সেই সব এলাকায় সীমান্ত সংক্রান্ত বিতর্কের মীমাংসা তিনটি দেশের মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতেই করতে হবে, এমনই শর্ত ছিল সেই চুক্তির। কিন্তু ভারত-ভুটান-চিন সীমান্তবর্তী এলাকা ডোকলামে একতরফা সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে বেজিং রাস্তা তৈরি করা শুরু করেছিল বলে অভিযোগ। চিন যে এলাকায় রাস্তা তৈরি করতে চাইছিল, তা ভুটানের এলাকা বলে থিম্পুর দাবি। দিল্লিও সেই দাবিকেই সমর্থন করছে। ভুটানের সঙ্গে ভারতের নিরাপত্তা আদান-প্রদান সংক্রান্ত চুক্তি রয়েছে। বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে ভুটানকে রক্ষা করতে ভারত দায়বদ্ধ। তা ছাড়়া ডোকলামে চিনের গতিবিধি ভারতের নিরাপত্তার পক্ষেও উদ্বেগজনক বলে নয়াদিল্লি মনে করে। তাই রাস্তা তৈরি রুখতে ডোকলামে বিশাল বাহিনী পাঠিয়েছে ভারত। চিন সেনা সরানোর জন্য যতই চাপ দিক, পিছু হঠার পরিকল্পনা যে আপাতত ভারতের নেই, তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।