সিকিমে উদ্ধারের কাজে ভারতীয় সেনা। ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া।
মেঘভাঙা বৃষ্টি, হড়পা বান আর পাহাড়-ধসের ত্র্যহস্পর্শে বিধ্বস্ত সিকিমে আটকে পড়ে পর্যটক এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্ধারে জোরকদমে কাজ চালাচ্ছে ভারতীয় সেনা। আর দুর্গম এলাকাগুলির পরিস্থিতির খোঁজ নিয়ে বিশেষ ভাবে জোর দেওয়া হচ্ছে মোবাইল সংযোগ ফের চালু করার বিষয়ে। ইতিমধ্যেই ভারতীয় সেনার ত্রিশক্তি কোর উত্তর সিকিমের চুংথাং, লাচুং এবং লাচেন এলাকায় আটকে পড়া নাগরিক এবং পর্যটকদের মোবাইল সংযোগ পুনঃস্থাপন করছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মোবাইল টাওয়ার এবং ব্রডব্যান্ড পরিষেবার ফাইবার কেবলগুলি মেরামতের চেষ্টা চালাচ্ছে তারা।
ভারতীয় সেনার ব্রহ্মাস্ত্র কোর সিরওয়ানির সরকারি স্কুলে আশ্রয় নেওয়া ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য চিকিৎসা পরিষেবা শুরু করেছে। পাশাপাশি ভারতীয় সেনার স্ট্রাইকিং লায়ন ডিভিশনও সিকিমে বিপর্যয় মোকাবিলার কাজে ব্যবহার করা হতে পারে বলে সেনার একটি সূত্রে জানানো হয়েছে। সিংতামের কাছে বরদাংয়ে জলে তলিয়ে যাওয়া যানবাহনগুলি উদ্ধারের চেষ্টার পাশাপাশি খোঁজ চলছে নিখোঁজ সেনা সদস্যদেরও। বুধবার সকালে ২৩ জন জওয়ানের নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছিল। তাঁদের মধ্যে এখনও পর্যন্ত এক জন জওয়ানকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। উদ্ধার হওয়া ওই জওয়ানের শারীরিক অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল বলে সেনা সূত্রে জানা গিয়েছে।
প্রসঙ্গত, বুধবার ভোরে মেঘভাঙা বৃষ্টির জেরে লোনক হ্রদ ফেটে তীব্র গতিতে জল নেমে আসে। হড়পা বানে তিস্তায় জলের চাপ বেড়ে যাওয়ায় চুংথামে একটি বাঁধও ভেঙে যায়। হড়পা বান এবং ধসে এখনও পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৪ জন। বৃষ্টি না থামলে তিস্তার ভয়াবহতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আশঙ্কা। মৃত এবং নিখোঁজের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পাকিয়ং জেলার রংপো, গ্যাংটক জেলার অন্তর্গত ডিকচু এবং সিংটাম এলাকা এবং মঙ্গন জেলার চুংথাং এলাকা থেকে আহত এবং নিখোঁজ ব্যক্তিদের খবর পাওয়া গিয়েছে। মঙ্গন জেলার চুংথাং এলাকায় নির্মীয়মাণ তিস্তা স্টেজ-৩ বাঁধে কর্মরত কয়েক জন শ্রমিকও হড়পা বানে আটকে পড়েছেন।
পাহাড়ি এলাকায় প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলার সময় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রধান প্রতিবন্ধকতা হয় যোগাযোগ স্থাপনে। ইন্টারনেট থেকে স্যাটেলাইট ফোনের জিপিএস সাময়িকভাবে হলেও হোঁচট খায়। যার ফলে সামগ্রিকভাবে সমস্ত পরিষেবা ব্যাহত হয়। বহু বছর ধরে এমন পরিস্থিতিতে যোগাযোগের জন্য হাই ফ্রিকোয়েন্সি (এইচএফ) রেডিয়োর উপর নির্ভর করতে হত। কিন্তু আবহাওয়ার তারতম্যে তাতে অনেক সময় কথা বুঝতে না পারা এবং অবাঞ্ছিত আওয়াজ ব্যাঘাত ঘটাত। পরবর্তী সময়ে স্যাটেলাইট টেলিফোন ব্যবহারে সমস্যা অনেকটা কমলেও ওই ফোনের ব্যববার সীমিত। ফলে মোবাইলের উপর নির্ভরতা বেড়েছে সেনারও।