নরেন্দ্র মোদী জমানার আগেও যে ভারতীয় সেনা নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে বাহাদুরি দেখিয়েছে, তা মেনে নিল কেন্দ্র। বিদেশ মন্ত্রক সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে।
সার্জিক্যাল স্ট্রাইক প্রসঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর কৃতিত্ব নিয়ে ঢাক পেটানোর আবহে এই কথাটিই এত দিন ধরে শুনতে চাইছিল কংগ্রেস। কংগ্রেস এত দিন ধরে দাবি করে আসছিল, এমন অভিযান তাদের আমলেও করে দেখিয়েছে সেনা। বিষয়টিকে স্রেফ জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে
প্রচারের ডুগডুগি হিসাবে ব্যবহার
করা হয়নি।
আজ বিদেশ মন্ত্রক সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে বিদেশসচিব এস জয়শঙ্কর স্বীকার করে নিয়েছেন, এর আগেও নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে হামলা চালিয়েছে ভারত। তবে এর আগের জমানায় কী ধরনের হামলা চালানো হতো তা বোঝাতে গিয়ে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ শব্দটি এড়িয়ে গিয়েছেন বিদেশসচিব। কারণ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মনোহর পর্রীকরের দাবি ছিল, স্বাধীনতার পর থেকে এ ভাবে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালায়নি ভারত। প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর সুর ধরেই আজ স্থায়ী কমিটির সদস্যদের জয়শঙ্কর জানান, এর আগেও নিখুঁত ভাবে ছক কষে নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে সন্ত্রাসবাদী দমন অভিযান চালিয়েছে ভারত। ‘স্পেফিসিক,’ ‘টার্গেটেড,’ ‘প্ল্যানড,’ ‘ক্যালিব্রেটেড’, ‘কাউন্টার টেরোরিজম অপারেশন’ বলে সযত্নে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক শব্দটি এড়িয়ে গিয়েছেন তিনি।
বিদেশ মন্ত্রকের ওই স্থায়ী সংসদীয় কমিটির সদস্য রাহুল গাঁধীও। সূত্রের খবর, আজকের বৈঠকে তিনি কোনও প্রশ্ন করেননি। তবে স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান কংগ্রেসের শশী তারুর, কর্ণ সিংহ, সিপিএমের মহম্মদ সেলিম বা বিজেপির সত্যব্রত চর্তুবেদীরা এ দিন বৈঠকে উপস্থিত বিদেশসচিব ও ভাইস চিফ অব আর্মি স্টাফ বিপিন রাওয়াতের কাছে বিস্তারিত ভাবে সেনা অভিযানের বিষয়টি জানতে চেয়েছিলেন। সাংসদের প্রশ্নের উত্তরে জয়শঙ্কর জানান, এটা ঠিক এর আগেও ছক কষে পরিকল্পনা মাফিক সীমান্ত পেরিয়ে সন্ত্রাসবাদী দমন অভিযান চালানো হয়েছে। তখনও নির্দিষ্ট নিশানায় আঘাত হানা হয়েছে। তখনও সেনারা অভিযান চালিয়ে ফিরে এসেছে। বিদেশসচিব জানান, এ ক্ষেত্রে নতুন যা হয়েছে, তা হল এ বারের অভিযানের পরের দিন সকালে সেটি সাংবাদিক বৈঠক করে জানানো হয়েছে। স্বভাবতই সরকার বিষয়টি স্বীকার করে নেওয়ায় এখন পাল্টা প্রচারের রণকৌশল নেওয়ার পরিকল্পনা
নিচ্ছে কংগ্রেস।
এই রাজনৈতিক চাপানউতোরের মধ্যেই আজ হিমাচল প্রদেশে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ফের সেনাবাহিনীর প্রশংসায় সরব হয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এত দিন সকলে ইজরায়েলের সেনার দক্ষতার কথা বলত। এখন সকলে ভারতীয় সেনার কথা বলছে।’’ অন্য দিকে, বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজও আজ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছেন। সদ্য সমাপ্ত ব্রিকস সম্মেলনকে কার্যত পাকিস্তান-বিরোধী প্রচারের মঞ্চ বানিয়ে ছেড়েছিল ভারত। তবে তাতে সর্বসম্মতি পাওয়া যায়নি। আজ তারই সূত্র ধরে বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘‘যারা সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করে, পুঁজি জোগায়, তাদের জন্য স্বর্গোদ্যান
গড়ে দেয় তাদেরকে এক দিন মূল্য চোকাতে হবে।’’
আর এ সবের মধ্যেই কাশ্মীরে কার্ফুর ১০০তম দিনেও উত্তপ্ত রইল উপত্যকা ও নিয়ন্ত্রণরেখা। গত কাল রাত থেকে আজ সকাল পর্যন্ত রাজৌরি সেক্টরে ভারতীয় পোস্ট লক্ষ করে গুলি চালিয়েছে পাক সেনা। পাল্টা জবাব দিয়েছে ভারতও। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। প্রতিরক্ষা সচিব জি মোহনকুমার জানান, পাকিস্তানের হামলা ঠেকাতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পাকিস্তানের শিল্পীদের উপরে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বিদেশ মন্ত্রক
কোনও নীতি গ্রহণ করেনি বলে জানিয়েছেন জয়শঙ্কর।