ফাইল চিত্র।
মলদ্বীপ, কানাডা-সহ বিভিন্ন দেশে জল থেকেও বিমান ওড়ে। এ বার উড়বে ভারতেও। সেই জন্য ‘উড়ান-৩’ প্রকল্পে ওয়াটার এয়ারপোর্ট বা জল-বিমানবন্দর তৈরির পরিকল্পনা করেছেন বিমানবন্দর-কর্তৃপক্ষ।
জেটির গায়ে যেমন এসে ভেড়ে জাহাজ বা লঞ্চ, তেমনই জেটির গায়ে, জলের উপরে দাঁড়িয়ে থাকবে বিমান। কিছু ক্ষেত্রে সেই বিমান শুধু জলেই চলবে। কিছু বিমান জল ও স্থল— দু’জায়গাতেই চলতে পারবে। হ্রদ বা জলাশয়, খাঁড়ি বা নদীর মতো যেখানে স্থির জল রয়েছে, সেখান থেকেই এই বিমান চালানো হবে। জল থেকে যে-সব বিমান ওঠানামা করবে, তা হবে তুলনায় অনেক ছোট (সর্বাধিক ২০ আসনের)। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, ওড়িশার চিলিকা হ্রদ, গুজরাতের সর্দার সরোবর বাঁধ এবং সাবরমতী নদী থেকে এই ধরনের বিমান চালানো হবে।
জল-বিমানবন্দর কী ভাবে চলে, তার জন্য কী ধরনের পরিকাঠামো দরকার, তা দেখতে দিল্লি থেকে কর্তৃপক্ষের উচ্চপদস্থ অফিসারদের একটি দলকে সম্প্রতি মলদ্বীপে পাঠানো হয়েছিল। বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত জল-বিমানবন্দর রয়েছে সেখানকার মালে শহরে। মূলত পর্যটকদের কথা ভেবেই ওই জল-বিমানবন্দর বানানো হয়। মলদ্বীপে একটি দ্বীপে ৮০টি রিসর্ট রয়েছে। সেখানে যাঁরা থাকতে চান, তাঁরা মালে শহরের জল-বিমানবন্দর থেকে বিমানে চেপে ওই দ্বীপের কাছে জলে গিয়ে নামেন। টেক-অফ, ল্যান্ডিং, পার্কিং— সব কিছুই জলের উপরে। ওখানে প্রধানত সরকারি বিমান সংস্থাই উভচর বিমান পরিষেবা দিচ্ছে। জলের উপরেই পরপর বিমান দাঁড়ানোর পার্কিং বে। জলে নেমে বিমান জেটিতে লাগার পরে তার রক্ষণাবেক্ষণ থেকে শুরু করে জ্বালানি ভরা— সবই করা হচ্ছে জলে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায়। সাধারণ বিমানবন্দরে মাটিতে দাঁড়িয়ে থাকা বিমানের ক্ষেত্রে ঠিক যেমনটি করা হয়।
ওই কর্তা জানান, সমুদ্রের ঢেউ-ওঠা জলে এমন বিমানবন্দর গড়া যাবে না। এর জন্য স্থির জল দরকার। জেটির পাশে জলের ন্যূনতম গভীরতা হতে হবে দু’মিটার। কেরলে আছে ‘ব্যাকওয়াটার’। সেখানে সহজেই এই বিমানবন্দর বানানো সম্ভব। জেটির লাগোয়া টার্মিনাল বিল্ডিংয়ে সাধারণ বিমানবন্দরের টার্মিনাল বিল্ডিংয়ের মতো যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যাবে।
যাত্রীরা সেই টার্মিনাল পেরিয়ে জেটি থেকে বিমানে উঠবেন। তাঁদের মালপত্রও টার্মিনাল থেকে নিয়ে ঢুকিয়ে দেওয়া হবে বিমানের পেটে।
ভারতে চিলিকা, সাবরমতী ছাড়াও পোর্ট ব্লেয়ারের হ্যাভলক ও নিল দ্বীপে, উত্তরাখণ্ডের তেহরি বাঁধ, মেঘালয়ের উমরাংসু লেক-সহ আরও কিছু জায়গায় জল-বিমানবন্দর তৈরি করে ছোট বিমান চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে বিমানবন্দর-কর্তৃপক্ষের। সংস্থার কর্তা জানান, চুক্তি অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার ওই বিমানবন্দর রক্ষণাবেক্ষণ করবে। বিমান মন্ত্রক দেবে শুধু কারিগরি সহায়তা।
ভারতের আকাশে নিয়মিত যাত্রী বিমান চালায়, এমন এক সংস্থার প্রতিনিধিরাও বিমানবন্দর-কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সম্প্রতি মলদ্বীপে গিয়েছিলেন। উড়ান-৩ প্রকল্পে উভচর বিমান চালানোর পরিকল্পনা আছে তাঁদের।