অন্য দিকে, কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের বক্তব্য, ভারতও লাভবান হবে। দু’দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ পাঁচ বছরে ২৭৫০ কোটি ডলার থেকে ৫০০০ কোটি ডলারে পৌঁছে যাবে। বস্ত্র, চামড়া, রত্ন-অলঙ্কারের মতো যে সব ক্ষেত্রে অনেক বেশি কর্মী-শ্রমিক নিয়োগ হয়, সেই ক্ষেত্রগুলি থেকে রফতানি বাড়বে। ফলে আগামী পাঁচ বছরে প্রায় ১০ লক্ষ নতুন কর্মসংস্থান হবে।
প্রতীকী ছবি।
অস্ট্রেলিয়ার দুধ এ দেশে অর্ধেক দামে বিক্রি হলে বিপদে পড়বেন গোপালক, পশুপালকরা। সে দেশের সস্তার গম, কাবুলি চানা বাজারে এলে চাষিদের রুটিরুজিতে টান পড়বে। রাকেশ টিকায়েতের মতো কৃষক নেতারা বিরোধিতা করছিলেন। সঙ্ঘ পরিবারের সংগঠনগুলিও আপত্তি তুলেছিল।
জোড়া চাপের মুখে দুধ ও অন্যান্য ডেয়ারিজাত পণ্য, চাল, গম, চিনি, কাবুলি চানাকে বাদ দিয়েই অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি সই করল ভারত। এর ফলে এ দেশের বস্ত্র, চামড়া, আসবাব, রত্ন-অলঙ্কার, যন্ত্রাংশ-সহ প্রায় প্রায় ৬ হাজার
ক্ষেত্রের পণ্য বিনা বাধায় অস্ট্রেলিয়ার বাজারে বিক্রি হবে। তার উপরে কোনও শুল্ক চাপবে না। কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রকের বক্তব্য, এ দেশ থেকে ১০০ টাকার পণ্য অস্ট্রেলিয়ার পণ্য রফতানি হলে তার মধ্যে ৯৬ টাকার পণ্যেই কোনও শুল্ক চাপাবে না অস্ট্রেলিয়া। এখন অধিকাংশ পণ্যে ৪ থেকে ৫ শতাংশ শুল্ক চাপে। প্রতি বছর ভারত থেকে ১,৮০০ জন রাঁধুনি ও যোগ প্রশিক্ষক অস্ট্রেলিয়ায় কাজ করতে যেতে পারবেন।
উল্টো দিকে অস্ট্রেলিয়া থেকে ভারতে আসা ৮৫ শতাংশ পণ্যেও শুল্ক তুলে নেওয়া হবে বা কমানো হবে। অস্ট্রেলিয়া এ দেশে কয়লা, অন্যান্য খনিজ পদার্থ রফতানি করে। যা ভারতের শিল্পে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বাণিজ্য চুক্তির ফলে এই সব পণ্যে শুল্ক তুলে নেওয়ায় শিল্পে উৎপাদনের খরচ কমবে। অস্ট্রেলিয়া থেকে আসা ডাল, উল, ভেড়ার মাংস, গলদা চিংড়ি থেকে আভাকাডো, চেরি, ব্লুবেরি, ন্যাসপাতি, স্ট্রবেরির উপরে শুল্ক তুলে নেওয়া হবে। ফলে সে দেশের কৃষক, খনি সংস্থাগুলি লাভবান হবে। দামি ওয়াইনের উপর শুল্ক কমায় তা সস্তা হবে।
রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার পর আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল ভারত, অস্ট্রেলিয়া, জাপান এবং আমেরিকার চতুর্দেশীয় অক্ষ কোয়াড-এ চিড় ধরার। রাষ্ট্রপুঞ্জে রাশিয়া-বিরোধী প্রস্তাবে কোয়াডের বাকি সদস্যরা সই করলেও বার বার ভোটদানে বিরত থেকেছে নয়াদিল্লি। তবে সেই আশঙ্কাকে অতিক্রম করেই আজ অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে এই বাণিজ্য চুক্তি সই করল ভারত। প্রধানমন্ত্রী যাকে উল্লেখ করলেন ‘ঐতিহাসিক মুহূর্ত’ বলে। কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল বললেন, ‘‘ভারত-অস্ট্রেলিয়া অংশিদারি আরও শক্তিশালী হবে এই চুক্তির ফলে।’’
মনমোহন সরকারের আমল থেকে, গত দশ বছর ধরে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে দর কষাকষি চলছিল। মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পরে সঙ্ঘ পরিবারের থেকে আপত্তি ওঠায় তা থমকে যায়। বাণিজ্য ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়া চিনের উপর অনেকটাই নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু চিনের সঙ্গে কূটনৈতিক বিবাদের ফলে বেজিং অস্ট্রেলিয়া থেকে কয়লা, গলদা চিংড়ি আমদানির উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। সামনে অস্ট্রেলিয়ায় ভোট। বিপদে পড়ে প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন ভারতের সঙ্গে মরিয়া হয়ে বাণিজ্য চুক্তি করতে চাইছিলেন। কারণ, ভারতের ১৪০ কোটি মানুষের বাজার খুলে গেলে অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতি লাভবান হবে। তাই ধান-গম, বাজরা, কাবুলি চানা, আপেল, চিনির ক্ষেত্রে ভারত ছাড় না দিলেও অস্ট্রেলিয়া তা মেনে নিয়েছে।
এই চুক্তি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, “এত অল্প সময়ের মধ্যে এত গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিতে ঐকমত্য পারস্পরিক আস্থার পরিচয় দেয়। এটি সত্যিই আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত।” অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বৃহত্তর ক্ষেত্রে আমাদের কৌশলগত অংশীদারি
ঘোষণা করার পর সহযোগিতার মাত্রা উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে।” উল্লেখ্য, অস্ট্রেলিয়ার সাধারণ নির্বাচনের আগে এই চুক্তি মরিসনকে ঘরোয়া রাজনীতিতে কিছুটা সাহায্য করবে বলে মনে করছেন অনেক বিশ্লেষকই।
অন্য দিকে, কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের বক্তব্য, ভারতও লাভবান হবে। দু’দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ পাঁচ বছরে ২৭৫০ কোটি ডলার থেকে ৫০০০ কোটি ডলারে পৌঁছে যাবে। বস্ত্র, চামড়া, রত্ন-অলঙ্কারের মতো যে সব ক্ষেত্রে অনেক বেশি কর্মী-শ্রমিক নিয়োগ হয়, সেই ক্ষেত্রগুলি থেকে রফতানি বাড়বে। ফলে আগামী পাঁচ বছরে প্রায় ১০ লক্ষ নতুন কর্মসংস্থান হবে।