India-Canada relation

কানাডার কূটনীতিককে ভারত থেকে বহিষ্কার, ট্রুডোকে ইটের বদলে পাটকেল দিল নয়াদিল্লি

এ বছর জুনে কানাডায় দুই অজ্ঞাতপরিচয় আততায়ী গুলি করে খুন করে খলিস্তানপন্থী আন্দোলনকারী হরদীপ সিংহ নিজ্জরকে। সেই হত্যাকাণ্ডে ভারতের এজেন্টদের যোগসূত্র খুঁজে পাওয়ার দাবি করছে কানাডা।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১২:০৮
Share:

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (বাঁ দিকে), কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো (ডান দিকে)। — ফাইল ছবি।

কানাডার মাটিতে খলিস্তানপন্থী এক শিখ আন্দোলনকারীকে হত্যার অভিযোগের প্রভাব আচমকাই ভারত-কানাডার দ্বিপাক্ষিক সমীকরণে। কানাডার অভিযোগ, এই হত্যাকাণ্ডে ভারতের হাত রয়েছে। তারই প্রেক্ষিতে কানা়ডায় ভারতীয় এক কূটনীতিককে বহিষ্কার করে জাস্টিন ট্রুডোর দেশ। তার জবাব দিতে দেরি করেনি নয়াদিল্লি। পাল্টা ভারতে নিযুক্ত কানাডার এক সিনিয়র কূটনীতিককে বহিষ্কার করে পাঁচ দিনের মধ্যে ভারত ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে কানাডার দাবিকেও অযৌক্তিক এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিহিত করেছে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক। সব মিলিয়ে ভারত-কানাডা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে আচমকাই ঘোর দুর্যোগের ঘনঘটা।

Advertisement

এ বছর জুন মাসে খলিস্তানপন্থী সংগঠন ‘খলিস্তান টাইগার ফোর্স’ বা কেটিএফের প্রধান তথা কানাডার সারের গুরু নানক শিখ গুরুদ্বার সাহিবের প্রধান হরদীপ সিংহ নিজ্জর খুন হন। দুই অজ্ঞাতপরিচয় আততায়ী ৪৬ বছরের নিজ্জরকে গুরুদ্বার চত্বরের মধ্যেই গুলি করে খুন করে পালিয়ে যান। সেই ঘটনার তদন্তে ভারতের হাত খুঁজে পেয়েছে কানাডা। অন্তত, কানাডার পার্লামেন্টের জরুরি অধিবেশনে তেমনই দাবি করেছেন সে দেশের প্রধানমন্ত্রী ট্রু়ডো। অভিযোগ ছিল, তাঁর সরকারের কাছে হরদীপ সিংহ নিজ্জরের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ভারত সরকারের এজেন্টদের যোগ থাকার বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ রয়েছে। কানাডার তদন্তকারী সংস্থাগুলি এ বিষয়ে আরও বিশদে তদন্ত করছে বলেও জানিয়েছেন ট্রুডো। পাশাপাশি কানাডার প্রধানমন্ত্রী এ-ও জানিয়েছেন যে, বিষয়টি নিয়ে জি২০ শীর্ষ সম্মেলন চলাকালীন তাঁর সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীরও কথা হয়েছে। সোমবার কানাডার ‘হাউস অফ কমন্স’-এ তিনি বলেন, ‘‘কানাডার নিরাপত্তা সংস্থাগুলি সক্রিয় ভাবে ভারত সরকারের এজেন্ট এবং কানাডার নাগরিক হরদীপ সিংহ নিজ্জরের হত্যাকাণ্ডের মধ্যে সম্ভাব্য যোগসূত্রের বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখছে।’’ একই সঙ্গে কানাডাস্থিত ভারতীয় এক কূটনীতিককে বহিষ্কারও করা হয়েছে। সে দেশের বিদেশমন্ত্রী মেলানি জোলি জানিয়েছেন, ওই ব্যক্তি ভারতের ‘রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং’ (আরএডব্লিউ)-এর কানাডার প্রধান হিসাবে দায়িত্ব সামলাতেন। যদিও তাঁর নাম জানাননি মেলানি।

পাল্টা জবাব দিতে দেরি করেনি নয়াদিল্লি। কঠোর ভাষায় কানাডার পদক্ষেপের সমালোচনা করে সমস্ত অভিযোগকেই কার্যত উড়িয়ে দিয়েছে ভারত। বিদেশ মন্ত্রকের তরফ থেকে কড়া বিবৃতি জারি করা হয়। সেখানে লেখা হয়, ‘‘আমরা কানাডার পার্লামেন্টে সে দেশের প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি দেখেছি এবং তা প্রত্যাখ্যান করেছি। পাশাপাশি, সে দেশের বিদেশমন্ত্রীর বক্তব্যকেও একই ভাবে প্রত্যাখ্যান করছি।’’ তার পর সেই বিবৃতিতে স্পষ্ট লেখা হয়েছে, ‘‘কানাডার মাটিকে ব্যবহার করে ভারতের কোনও রকম হিংসাত্মক ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ সম্পূর্ণ অযৌক্তিক এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। একই ধরনের অভিযোগ কানাডার প্রধানমন্ত্রী আমাদের প্রধানমন্ত্রীর কাছেও করেছিলেন এবং তা সম্পূর্ণ ভাবে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল।’’

Advertisement

এর পর সরাসরি কানাডার সরকারকে খোঁচা দিয়ে বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতি বলছে, ‘‘এই ধরনের অপ্রমাণিত অভিযোগ আসলে খলিস্তানি জঙ্গি এবং চরম বা কট্টরপন্থীদের উপর থেকে নজর ঘোরাতে চায়। ঘটনাচক্রে, যাঁদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছে কানাডায় এবং যাঁরা ভারতের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে হুমকি দিয়ে চলেছে। এ বিষয়ে কানাডা সরকারের নিষ্ক্রিয়তা দীর্ঘস্থায়ী।’’ এই ঘটনায় ভারতে কানাডার হাইকমিশনারকে ডেকে পাঠিয়েছে নয়াদিল্লি। তাঁকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, কানাডার দূতাবাসে কর্মরত এক সিনিয়র কূটনীতিককে বহিষ্কার করা হচ্ছে। ওই সিনিয়র কূটনীতিককে পাঁচ দিনের মধ্যে ভারত ছাড়তে হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement