আনুষ্ঠানিক ভাবে লক্ষ্যে পৌঁছে গেল ভারত। সোমবার সকালে নয়াদিল্লির ফরাসি দূতাবাস ভারত সরকারকে জানাল, মিসাইল টেকনোলজি কন্ট্রোল রেজিমে (এমটিসিআর) ভারতের আনুষ্ঠানিক অন্তর্ভুক্তি হয়ে গিয়েছে। ভারত এখন ওই সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ সদস্য। এনএসজি সদস্য হওয়া ঝুলে থাকলেও এমটিসিআর-এ অন্তর্ভুক্তিও খুব বড় মাইলফলক ভারতের জন্য। এনএসজিতে ভারতের প্রবেশের পথে যেমন কাঁটা বিছিয়ে রেখেছে চিন, ঠিক একই ভাবে এ বার এমটিসিআর-এ চিনের অন্তর্ভুক্তি আটকে দেওয়ার ক্ষমতাও হাতে পেয়ে গেল ভারত।
নরেন্দ্র মোদীর সাম্প্রতিক আমেরিকা সফরের সময়ই সুখবরটা এসেছিল। এমটিসিআর-এর ৩৪টি সদস্য দেশের কেউই যে ভারতের অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাবে আপত্তি করেনি, তা মোদী জানতে পেরেছিলেন ওয়াশিংটনে বসেই। আনুষ্ঠানিক অন্তর্ভুক্তি বাকি ছিল। রবিবার ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে জানা যায়, আজ সোমবার ভারতের বিদেশ সচিব এস জয়শঙ্কর আনুষ্ঠানিক ভাবে এমটিসিআর-এর অন্তর্ভুক্তি পত্রে সই করবেন। প্যারিসে সেই আনুষ্টানিকতা সম্পন্ন হওয়ার পর ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক সরকারি ভাবে ঘোষণা করল, ভারত এখন এমটিসিআর-এর পূর্ণাঙ্গ সদস্য। বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ৩৫তম সদস্য হিসেবে এমটিসিআর-এ ভারতের অন্তর্ভুক্তি বিশ্বে পরমাণু অস্ত্রের প্রসার রোধে আরও কার্যকরী হয়ে উঠবে। এই নতুন অন্তর্ভুক্তি ভারতের পক্ষে যেমন লাভজনক, একই রকম ভাবে তা এমটিসিআর-এর জন্যও লাভজনক হল বলে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক মন্তব্য করেছে। এমটিসিআর-এর বাকি ৩৪টি সদস্য দেশকে ভারত সরকারের তরফে ধন্যবাদও দেওয়া হয়েছে ওই বিবৃতিতে।
গোটা বিশ্বে পরমাণু প্রযুক্তি এবং পরমাণু অস্ত্রশস্ত্রের প্রসার রুখতে চারটি সংগঠন রয়েছে— এনএসজি, এমটিসিআর, অস্ট্রেলিয়া গ্রুপ এবং ওয়াসেনার অ্যারেঞ্জমেন্ট। এই চারটির মধ্যে প্রথম দু’টির গুরুত্ব অবশ্য বেশ খানিকটা বেশি। কূটনৈতিক মহল সূত্রের খবর, এমটিসিআর-এর সদস্য হওয়ার পাশাপাশি ভারতের জন্য অস্ট্রেলিয়া গ্রুপ এবং ওয়াসেনার অ্যারেঞ্জমেন্টের দরজাও খুলে দিতে চলেছে আমেরিকা। শুধু এনএসজি নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গিয়েছে। কিন্তু ভারত এমটিসিআর-এর ৩৫তম সদস্য হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এনএসজিতে ভারতের অন্তর্ভুক্তির সম্ভাবনা অনেকটা বেড়ে গেল বলে ভারতীয় কূটনীতিকরা মনে করছেন।
আরও পড়ুন: পাক নদীগুলিকে ভারতের হাত থেকে ‘মুক্ত’ করতে জেহাদের ডাক হাফিজের!
কেন এমন মনে করছেন ভারতীয় কূটনীতিকরা?
এমটিসিআর এর সদস্য হওয়ার চেষ্টা চিনও অনেক দিন ধরেই করছে। চিনের আবেদন এক বার খারিজও হয়ে গিয়েছে। তা সত্ত্বেও বেজিং হাল ছাড়েনি। এমটিসিআর-এর সদস্য হওয়ার জন্য পরমাণু অস্ত্র প্রসার রোধ সংক্রান্ত যে সব শর্ত মেন চলতে হয়, চিন স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে সেই সব শর্ত মেনে চলছে বেশ কিছু বছর ধরেই। চিনের সেই ট্র্যাক রেকর্ড এমটিসিআর-এ তাদের অন্তর্ভুক্তির পথ কিছুটা সহজ করে তুলছিল। কিন্তু ভারত এখন ওই সংগঠনের সদস্য হয়ে যাওয়ায় চিনের পথ এক ধাক্কায় অনেকটা কঠিন হয়ে গেল। এনএসজিতে নতুন সদস্যের অন্তর্ভুক্তির জন্য যেমন সব বর্তমান সদস্যের সম্মতি জরুরি, এমটিসিআর-এও তাই। অতএব, চিন যত দিন ভারতকে এনএসজিতে ঢুকতে বাধা দেবে, ভারতও তত দিন এমটিসিআর-এ চিনকে ঢুকতে দেবে না। সেই ক্ষমতা এ বার ভারতের হাতে চলে এল।