রাহুল গান্ধী। ছবি: পিটিআই।
রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজ নিয়ে পশ্চিমের বাক্যবাণে যথেষ্ট অস্বস্তিতে সাউথ ব্লক। তবে বিষয়টিকে রাজনৈতিক স্তরেই রেখে, সরকারের তরফ থেকে এখনও মুখ খোলা হয়নি। বিদেশ মন্ত্রকের শীর্ষ স্তর থেকে অবশ্য ঘরোয়া ভাবে জানানো হয়েছে, এখনও পর্যন্ত সরকারি ভাবে বিদেশ মন্ত্রকের কাছে এই বিষয় নিয়ে কোনও ভিন্ রাষ্ট্রের কূটনীতিক বা কর্তা একটি বাক্যও ব্যয় করেননি। বিষয়টি ভারতের আইন আদালতের। ফলে বাইরের কোনও রাষ্ট্রের কাছে জবাবদিহি বা কৈফিয়তের প্রশ্ন ওঠে না।
কূটনৈতিক মহলের বক্তব্য, জটিল ভূকৌশলগত পরিস্থিতিতে এই নিয়ে আমেরিকা বা জার্মানির মতো শক্তিধর এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ (ভারতের জন্য) রাষ্ট্রের সঙ্গে এখনই জলঘোলা করতে চাইছে না মোদী সরকার। বাক্যবাণ আপাতত হজম করা হচ্ছে। রাহুল গান্ধীর সদস্যপদ খারিজ নিয়ে আমেরিকার পক্ষ থেকে তো তাও গণতন্ত্রে বাক্স্বাধীনতার প্রয়োজনীয়তার কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু জার্মানির বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র আরও এক পা এগিয়ে উচ্চ আদালতে যাওয়ার আইনি পরমর্শ পর্যন্ত দিয়ে ফেলেছেন। কূটনৈতিক মহল এটাও মনে করিয়ে দিতে চাইছে যে মাত্র কয়েক মাস আগেই জার্মানির বিদেশমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক জম্মু ও কাশ্মীর নিয়ে অযাচিত ভাবেই কিছু উপদেশ দিয়েছিলেন। সূত্রের মতে, আফগানিস্তানের তালিবান পরিস্থিতিতে পাকিস্তানকে খুশি করা সে সময় প্রয়োজন ছিল জার্মানির।
কিন্তু এ বার? কূটনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, ভারত যাতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তিতে সই করে, তার জন্য জার্মানির পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চলছে। সে দেশের কর্তাদের সাম্প্রতিক দু’টি সফরে বিষয়টি চূড়ান্ত হয়ে যাবে, এমনই আশা করেছিল জার্মানি। কিন্তু বেশ কিছু শর্তে মতের ঐক্য না হওয়ায় চুক্তিতে এখনও মোদী সরকার সায় দেয়নি। পাশাপশি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে মস্কোর বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপুঞ্জের আনা প্রস্তাবগুলিতে ভোট দেওয়ার জন্য ভারতকে বারবার অনুরোধ করেছে জার্মানি। রাশিয়া থেকে অশোধিত তেল কেনা নিয়েও সমস্যা রয়েছে ইউরোপের। সে বিষয়ে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বারবার কঠোর অবস্থান নিয়ে জানিয়েছেন, ভারত এক মাসে রাশিয়া থেকে যত তেল আমদানি করে, ইউরোপ তা করে এক বিকেলে।
রাহুল গান্ধীর সদস্যপদ খারিজ নিয়ে পশ্চিম যে অতি সূক্ষ্ম ভাবে চাপ তৈরি করছে তাকে সার্বিক ভাবে এই প্রেক্ষাপটে দেখতে চাইছে কূটনৈতিক মহল।