India

‘আসল অযোধ্যা নেপালে, রামও আদতে নেপালি’, ওলির মন্তব্যে যেন মৌচাকে ঢিল

নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলির মন্তব্যে ক্ষুব্ধ বিজেপিও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২০ ০৩:১৯
Share:

ছবি: এপি।

আসল অযোধ্যা নেপালে। রামও আদতে নেপালি— পড়শি হিন্দু রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর এ হেন দাবিতে যেন মৌচাকে ঢিল পড়েছে উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যায়। ফুঁসছেন শ্রীরাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্টের সাধু-সন্ন্যাসীরা। প্রশ্ন, “এত দিন ধরে এত লড়াই করে এখানে মন্দির কি এমনিই তৈরি করছি আমরা?” সোশ্যাল মিডিয়ায় এক করসেবকের কটাক্ষ, “তা হলে তো বাবরি মসজিদ ভাঙারও প্রয়োজন ছিল না। মন্দির গড়া যেত নেপালেই।”

Advertisement

নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলির মন্তব্যে ক্ষুব্ধ বিজেপিও। যে রাম জন্মভূমি আন্দোলনের রথে সওয়ার হয়ে লোকসভায় সাংসদ সংখ্যা দুই থেকে বেড়ে আজ তিনশোর বেশি, শেষে টানাটানি কি না সেই হিন্দুত্বের প্রতীক, আরাধ্য দেবতা আর তাঁর জন্মভূমি নিয়ে! যে ‘রাম-রাজনীতিতে’ আস্থা রেখে দলের এত বাড়বাড়ন্ত, তার গোড়া ধরেই কি না নাড়া দিতে চায় পড়শি রাষ্ট্র, যা কিছু দিন আগে পর্যন্ত সরকারি ভাবে হিন্দুরাষ্ট্র ছিল!

আরও পড়ুন: ৩ দিনে রোগী ১ লক্ষ, পরীক্ষাই ঢাল কেন্দ্রের

Advertisement

কিন্তু কূটনীতি বড় বালাই। তাই ইতিমধ্যেই সম্পর্ক তেতো হওয়া নেপালের সঙ্গে জটিলতা আর না-বাড়াতে এখনও পর্যন্ত মুখে কুলুপ কেন্দ্র এবং বিজেপির শীর্ষ কর্তাদের। একে ভারতীয় ভূখণ্ডকে সম্প্রতি নেপাল নিজেদের মানচিত্রের অন্তর্ভুক্ত করায় সম্পর্ক ধাক্কা খেয়েছে দিল্লি-কাঠমান্ডুর। তার উপরে ওই দেশে নিজেদের প্রভাব বৃদ্ধির চেষ্টা করছে ঘাড়ের উপরে নিঃশ্বাস ফেলা চিন।

তাই এর মধ্যে আবার অযোধ্যা নিয়ে কথা বাড়িয়ে নতুন করে কোনও তিক্ততা চায় না সাউথ ব্লক। শুধু বিজেপির মুখপাত্র বিজয় সোনকর শাস্ত্রীর প্রতিক্রিয়া, “ভগবান রাম আমাদের কাছে গভীর বিশ্বাসের বিষয়। তা নিয়ে কারও ছেলেখেলা বরদাস্ত করবেন না মানুষ। তা সে তিনি নেপালের প্রধানমন্ত্রী হলেও।” আর উত্তরপ্রদেশের উপ-মুখ্যমন্ত্রী কেশব প্রকাশ মৌর্যের কথায়, “মানসিক ভাবে দেউলিয়া হয়ে গিয়েছেন ওলি। তাঁর জানা উচিত, নেপাল আর্যাবর্তের অংশ ছিল। এমন মন্তব্য করার আগে জরুরি ছিল ইতিহাস পড়া।”

সম্প্রতি ভারত-বিরোধিতার সুর চড়া মাত্রায় বেঁধেছেন ওলি। যার জেরে তাঁর নিজের গদিও টলমল। কিন্তু তার মধ্যেও নেপালি ভাষায় রামায়ণ অনুবাদ করা কবি ভানুভক্তের জন্মবার্ষিকী উদ্‌যাপন অনুষ্ঠানে সোমবার ওলির দাবি ছিল, সীতার জন্মস্থল যেমন নেপালের জনকপুরে (আগে নাম ছিল মিথিলা), তেমনই রামের জন্মভূমিও বীরগঞ্জের কাছে থোরিতে। সেটিই আসল অযোধ্যা।” তাঁর যুক্তি, তখন যাতায়াত ব্যবস্থা যা ছিল, তাতে ভারতের অযোধ্যা আর নেপালের জনকপুরের দূরত্বে রাম-সীতার বিয়ে হওয়া সম্ভব? অভিযোগ, সাংস্কৃতিক আগ্রাসনেই নেপালের হাত থেকে রাম এবং অযোধ্যাকে ছিনিয়ে নিয়েছে ভারত।

নরেন্দ্র মোদীর প্রথম দফার সরকারেই ভারতের অযোধ্যা এবং পড়শি মুলুকের জনকপুরকে যমজ শহর হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। ২০১৬ সালে রাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের নেপাল সফরের সময়ে ঘোষণা করা হয়েছিল, রামায়ণ পরিক্রমা পথ নামের পর্যটন সার্কিটে ভারতের অযোধ্যা-সহ রামায়ণের বিভিন্ন তীর্থক্ষেত্রের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হবে জনকপুরকেও। যেখানকার জানকী মন্দির সীতার জন্মস্থানের উপরেই তৈরি বলে কথিত।

২০১৮ সালে মোদীর পাশে দাঁড়িয়ে অযোধ্যা-জনকপুর বাসযাত্রার সূচনা করেন ওলিই।

সে কথা মনে করিয়ে দিল্লিতে সরকারি সূত্রে প্রশ্ন, তখন কি নেপালের অযোধ্যার কথা মনে পড়েনি? নাকি এখন গদি বাঁচাতে মরিয়া হয়ে হিন্দুত্বের জিগির তুলতে এই কথা বলছেন তিনি!

ওলির দাবিকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিচ্ছে অযোধ্যাও। শ্রীরাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্টের প্রেসিডেন্ট নৃত্য গোপাল দাসের বক্তব্য, “দুর্ভাগ্যজনক মন্তব্য। ত্রেতা যুগ থেকে নেপালের সঙ্গে সম্পর্ক অযোধ্যার। (রাম-সীতার বিবাহ স্মরণ করে) এখনও প্রতীকী শোভাযাত্রা অযোধ্যা থেকে জনকপুরে যায়।” ওই অছি পরিষদের সদস্য মোহন্ত দীনেন্দ্র দাসের প্রশ্ন, “নেপালে যদি অযোধ্যা হবে, তা হলে সরযূ নদী কোথায়?” মোহন্ত পরমহংস আচার্যের মতে, “চিনের কাছে বিকিয়ে যাওয়ার অভিযোগ থেকে রেহাই পেতে রামকেও বিতর্কে জড়াতে চাইছেন ওলি!” আর করসেবক হাজারিলালের কটাক্ষ, “অযোধ্যা থেকে নেপাল যদি বিয়ে করতে যাওয়া না-যায়, তবে লঙ্কায় রাবণ বধ হল কী ভাবে?”

অযোধ্যা নিয়ে ওলির মন্তব্যে অন্তত এ বিষয়ে বিপরীত মুখে বইছে দু’দেশের রাজনীতি। একবগ্গা ভারত-বিরোধিতার কারণে দলে এবং দলের বাইরে বিরোধিতার মুখে ওলি। নেপালের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বাবুরাম ভট্টরাইয়ের কটাক্ষ, “সীমা ছাড়াচ্ছেন ওলি। কলিযুগের নতুন রামায়ণ লিখবেন তিনি।” এর নিন্দা করেছেন প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী কমল থাপাও। ওলিকে এই কথা ফেরাতে বলেছেন ক্ষমতায় থাকা কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপালের নেতা বামদেব গৌতমও। আবার উল্টো দিকে, দীর্ঘ দিন পরে কোনও বিষয়ে বিজেপির সঙ্গে প্রায় এক সুর কংগ্রেসের। তার মুখপাত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির কথায়, “রামের জন্ম যে এখানেই, সে বিষয়ে মানুষের আস্থা, বিশ্বাস অটল।”

দল আলাদা হলেও, সুর একই —‘…(কিন্তু) রামের ভাগ হবে না।’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement