United Nations

রাষ্ট্রপুঞ্জের উন্নয়ন সূচকে ভারত বিশ্বে ১৩২ নম্বরে

রিপোর্টটি বলেছে, ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের জাতিগত সংখ্যালঘুরা মানসিক অশান্তির সব চেয়ে বেশি শিকার। তবে ভারতে মহিলাদের অধিকার আরও সুরক্ষিত হয়েছে বলেই জানাচ্ছে রিপোর্ট।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১০:২৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

ভারতকে ২০৪৭ সালের মধ্যে উন্নত দেশের সারিতে তুলে আনার লক্ষ্য স্থির করার কথা এ বারের স্বাধীনতা দিবসেই ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু মানব উন্নয়ন সূচকের নিরিখে রাষ্ট্রপুঞ্জের সংস্থার প্রকাশিত ২০২১ সালের ক্রমতালিকা দেখে কঠিনই মনে হচ্ছে সেই পথ। কারণ, ওই তালিকায় ১৯১টি দেশের মধ্যে ভারত রয়েছে ১৩২তম স্থানে। ২০১৯ সালের চেয়ে এক ধাপ এবং ২০২০ সালের চেয়ে দু’ধাপ নেমে গিয়েছে ভারত। এ বারের তালিকায় ভারতের স্থান চিন (৭৯), বাংলাদেশ (১২৯), ভুটান (১২৭) এবং শ্রীলঙ্কা (৭৩)-র চেয়েও নীচে।

Advertisement

ইউনাইটেড নেশনস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (ইউএনডিপি) আজ তাদের যে রিপোর্টটি প্রকাশ করেছে, তাতেই স্পষ্ট হয়েছে এই চিত্র। চারটি বিষয় ধরে হিসাব কষেছে তারা— কোনও মানুষের সম্ভাব্য আয়ু, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার গড় মেয়াদ, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রত্যাশিত মেয়াদ এবং মাথাপিছু জাতীয় আয়। এই সূচকে (এইচডিআই) ভারতের নম্বর দাঁড়িয়েছে ০.৬৩৩, যা ২০১৯ সালে ছিল ০.৬৪৫। মানব উন্নয়নের বিচারে মাঝারি মানের দেশগুলির সারিতেই রয়েছে ভারত।

ভারতবাসীর সম্ভাব্য আয়ু গড় কমে যাওয়াই মূলত এই পতনের কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২০ সালে এ দেশের মানুষের সম্ভাব্য আয়ু ছিল ৭০.১ বছর। সেটিই ২০২১ সালে নেমে এসেছে ৬৭.২ বছরে, যা গত এক দশকে সর্বনিম্ন। রিপোর্ট অবশ্য বলছে, এই প্রবণতা সারা বিশ্বেই। ২০১৯ সালে গোটা বিশ্বে মানুষের গড় সম্ভাব্য আয়ু যেখানে ছিল ৭২.৮ বছর, সেখানে ২০২১ সালে তা ৭১.৪ বছরে নেমে এসেছে। গত তিন দশকে বিশ্বের মানব উন্নয়ন সূচক ক্রমাগত ঊর্ধ্বমুখীই ছিল। কিন্তু ২০২০ থেকে তা পড়তে শুরু করে, যে ধারা অব্যাহত ছিল ২০২১ সালেও। এ বারের হিসাবে ৯০ শতাংশ দেশেরই মানব উন্নয়ন সূচক পড়েছে। কিন্তু কেন? ‘অনিশ্চিত সময়, অবিন্যস্ত জীবন’ শীর্ষক রিপোর্টটি বলছে, এই পতনের নেপথ্যে রয়েছে নজিরবিহীন একগুচ্ছ সঙ্কট। তার মধ্যে সবচেয়ে জোরালো ধাক্কাটি কোভিড অতিমারির। তা ছাড়াও রয়েছে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং জলবায়ুর পরিবর্তন সংক্রান্ত সঙ্কট, যার ধাক্কা দুনিয়া সামলে উঠতে পারেনি। বস্তুত, অতিমারি-পর্বে মানুষের জীবনের মান পাঁচ বছর পিছিয়ে গিয়েছে।

Advertisement

ইউএনডিপি-র প্রধান আকিম স্টেনার বলছেন, ‘‘বিপর্যয় আগেও ছিল, সঙ্ঘাতও ছিল। কিন্তু সঙ্কটের বিভিন্ন ধারার এই সম্মিলিত প্রবাহ মানব উন্নয়নের গতি রোধ করছে। আমরা কম দিন বাঁচছি, কম শিক্ষা পাচ্ছি, উপার্জন কমেই চলেছে। এই দিকগুলি বিচার করলেই বোঝা যাবে, কেন এত মানুষ হতাশ, মরিয়া ও ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত।’’ রিপোর্টটির প্রধান লেখক পেড্রো কনসেকাও বলেছেন, আমেরিকাতেও মানুষের গড় জীবনকাল দু’বছর বা তারও বেশি কমে গিয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতায় কমেছে মানবিকতা। পরস্পরের প্রতি বিশ্বাসও কমেছে।

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে রিপোর্টটি বলেছে, ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের জাতিগত সংখ্যালঘুরা মানসিক অশান্তির সব চেয়ে বেশি শিকার। তবে ভারতে মহিলাদের অধিকার আরও সুরক্ষিত হয়েছে বলেই জানাচ্ছে রিপোর্ট। এর মধ্যে রয়েছে আইনি অধিকার, রাজনীতিতে মহিলাদের আরও বেশি অংশগ্রহণ, যৌন হেনস্থার হাত থেকে তাঁদের রক্ষা করার মতো বিষয়গুলি। রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৯৯০ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ভারতবাসীর গড় আয়ুষ্কাল, শিক্ষার প্রত্যাশিত মেয়াদ, শিক্ষার গড় মেয়াদ— সবই পাল্টেছে। ক্রয়ক্ষমতার নিরিখে ভারতে মাথাপিছু জাতীয় আয় ২০২০ সালের (৪,৮৬,৬৮৯ টাকা) থেকে ২০২১ সালে (৫,২৫,১৮১ টাকা) বেড়েছে। তবে ভারতে আর্থিক অসাম্য প্রকট। রিপোর্ট অনুযায়ী, এ দেশের ২১.৭ শতাংশ সম্পদ কুক্ষিগত রয়েছে সবচেয়ে ধনী ১ শতাংশ নাগরিকের হাতে। অথচ ভারতের ২৭.৯ শতাংশ মানুষ এখনও বহুমুখী দারিদ্রের শিকার।

কেন্দ্রীয় সরকারি সূত্রের বক্তব্য, ২০২০ সালে ১৮৯টি দেশকে নিয়ে এই সূচক মাপা হয়েছিল। এ বার তালিকায় ১৯১টি দেশ। নানা তথ্যের সংযোজন এবং নতুন লক্ষ্য স্থিরও করা হয়েছে। কাজেই তুলনা করা অনুচিত। এ বারের তালিকার শীর্ষে রয়েছে সুইৎজ়ারল্যান্ড, নরওয়ে এবং আইসল্যান্ড। একেবারে নীচে সাউথ সুদান, চাদ, নাইজারের মতো আফ্রিকার দেশগুলি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement