সংঘর্ষ জারি। পুলিশকে লক্ষ করে ছোড়া হচ্ছে পাথর। বৃহস্পতিবার শ্রীনগরে। ছবি: পিটিআই।
কাশ্মীর নিয়ে ইসলামাবাদের ইটের পাল্টা গোলা ছুড়ল দিল্লি!
যার দৌলতে ভারত-পাক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ফের অনিশ্চিত বাঁকের মুখে।
অথচ নরেন্দ্র মোদী জমানার শুরুটাই হয়েছিল পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতির বার্তা দিয়ে। দোস্তির সেই হাওয়া গত কয়েক মাসে খারাপ হতে হতে পাঠানকোট হামলার পরে পুরো বদলে যায়। আর কাশ্মীরের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে ইসলামাবাদ নালিশ করায় আগুনে ঘি পড়ল যেন! ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে একদিকে রাষ্ট্রপুঞ্জের মঞ্চ, অন্য দিকে দিল্লির জওহরলাল ভবন থেকে তীব্র আক্রমণ করল দিল্লি। শুধু তা-ই নয়, কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়াকে উড়িয়ে দিতে গিয়ে দিল্লি অস্ত্র করল ইসলামাবাদের জঙ্গি-যোগকে। ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপের কথায়, ‘‘পাকিস্তান শুধু কাশ্মীরে জঙ্গি ঢুকিয়েই থামছে না, উপত্যকায় বিক্ষোভ তৈরি করিয়ে জঙ্গি সংগঠনগুলিকে সাহায্য করাটাও তাদের কৌশলের মধ্যে পড়ে। সন্ত্রাস এবং আলোচনা এক সঙ্গে চলতে পারে না।’’ রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতের প্রতিনিধি সৈয়দ আকবরউদ্দিন আরও
কড়া সুরে বলেছেন, ‘‘রাষ্ট্রপুঞ্জের তৈরি মঞ্চের অপব্যবহার করছে পাকিস্তান। এরাই সন্ত্রাসকে তাদের রাষ্ট্রীয় নীতি বানিয়ে ছেড়েছে! রাষ্ট্রপুঞ্জের তালিকায় থাকা জঙ্গিদের নিরাপদ আশ্রয় দিয়েছে!’’ পাল্টা দিতে গিয়ে ইসলামিক দেশগুলির সংগঠন, ওআইসি-র তরফে কাশ্মীর নিয়ে ভারতের সমালোচনাকে হাতিয়ার করে ইসলামাবাদ এ দিন রাতে বুঝিয়েছে, তারা ধাপে ধাপে আরও সুর চড়াবে।
রাষ্ট্রপুঞ্জের মতো পর্যায়ে ভারতের এই অতি-আক্রমণাত্মক আচরণ যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। সাউথ ব্লকের এক কর্তার বক্তব্য, গত এক সপ্তাহ ধরেই ইসলামাবাদ আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতকে অপদস্থ করার চেষ্টা করেছে। এটা স্পষ্ট যে, ওরা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে পয়েন্ট অফ ‘নো রিটার্নে’ নিয়ে যাচ্ছে। এই মুহূর্তে ইসলামাবাদে রাজনৈতিক নেতৃত্বের হাতে ক্ষমতা সীমিত। শারীরিক ভাবে নওয়াজ সুস্থ নন। এখন কার্যত তাঁর মাথায় বন্দুক ধরে ভারত-নীতি ঠিক করছে পাক সেনা ও আইএসআই। ওই কর্তার কথায়, ‘‘আমাদেরও প্রতি-আক্রমণে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই।’’ সেটা বোঝাতেই আজ আকবরউদ্দিনের কটাক্ষ, ‘‘রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার কাউন্সিলেই সদস্যপদ পায়নি পাকিস্তান। এমনই তাদের
ট্র্যাক রেকর্ড!’’
বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, দু’দিন আগে ইসলামাবাদ রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে কাশ্মীর নিয়ে নালিশ করার সঙ্গে সঙ্গে কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি নয়াদিল্লি। কিন্তু রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব বান কি মুন কাশ্মীরে ‘সর্বোচ্চ সংযম’ দেখানোর কথা বলতেই পরিস্থিতি বদলে যায়। উৎসাহের চোটে পাকিস্তান এর পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ওআইসি-র কাছে কাশ্মীর নিয়ে সুর চড়ায়।
তখনই সাউথ ব্লক ঠিক করে যে, আর চুপ থাকা নয়। তা হলে ভুল বার্তা যেতে পারে। তার পরেই দিল্লির গোলা।
আর এখান থেকেই মোদীর পাক-নীতি প্রশ্নের মুখে। শপথের পরেই পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ভাল করার জন্য মোদী যে ভাবে এগিয়েছিলেন, তাতে বিরোধীরা তো বটেই কূটনীতিকদের একটা অংশও ক্ষুব্ধ। তাঁরা মনে করছেন, অতি-উৎসাহে বাড়াবাড়ি করে ফেলেছেন মোদী। কূটনীতির সূত্র মেনে ধাপে ধাপে এগোলে পরিস্থিতি অন্য ভাবেও সামাল দিতে পারত সরকার। এখন পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, অগস্টে ইসলামাবাদে সার্ক গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে রাজনাথ সিংহ যাবেন কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।